: মুজিবুর রহমান মুজিব।:
বাংলা ও বাঙ্গাঁলির হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাসে বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহানজনক স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সংগ্রামী নাম একটি ঐতিহ্য মন্ডিত ইতিহাস। সাত চল্লিশে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন ও নেতৃত্ব প্রদান করেন যুব নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ঐ সালেই ভারত বর্ষ থেকে বৃটিশ বিদায় ভারত বিভক্তি এবং এতদাঞ্চলীয় মুসলিমদের স্বতন্ত্র বাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্টা লাভ করলে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশটির শাসক গোষ্টি প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী প্রাষাদ ষঢ়যন্ত্রী গনবিচ্ছিন্ন মুসলিম লীগ সরকার দেশটির পূর্বাঞ্চল তৎকালীন পূর্ব বাংলার গনমানুষের প্রতি বিমাতা সূলভ আচরন শুরু করেন। পাক শাসক গোষ্টি“টৎফঁ ধহফ টৎফঁ ঝযধষ নব ঞযব ঝঃধঃব খধহমধঁমব ড়ভ চধশরংঃধহ”- বলেবাঙ্গাঁলিদের ভাষাও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে। প্রতিবাদ উঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় ঘড়-ঘড় বলে। ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র প্রদেশ ব্যাপী। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াকু সৈনিক বঙ্গঁপ্রেমিক শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাও বাঙ্গাঁলীর স্বার্র্থ সংরক্ষনের আন্দোলনে অংশ গ্রহন ও নেতৃত্বদেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারিদের আন্দোলন ভাষা আন্দোলনে সংঘটক হিসাবে নেতৃত্ব দেন। কারাগার জেল ঝুলুম তাঁকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি। ৫৪সালে হক ভাষানী সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হলে মাঠ পর্য্যায়ে আন্দোলনকে সুসংহত ও বেগবান করতে আওয়ামী লীগের তরুন নেতা বাংলা প্রেমিক বঙ্গঁ শার্দুল শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতাসীন মুসলিম সরকার এর বিরুদ্ধে সমগ্র পূর্ব বঙ্গঁ ব্যাপীঝটিকা সফর করতঃ নির্বাচনে যুক্ত ফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে আনেন। ভোটের মাধ্যমেভরাডুবি ঘটে গন বিচ্ছিন্ন মুসলিমলীগ সরকারের। ৬৬ সালে বাংলা ও বাঙ্গাঁলির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্ম্মসূচী প্রনয়ন ও ঘোষনা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক জীবনের ঐতিহাসিককার্য্যক্রম। মামলা গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে তিনি চারনের বেশে সমগ্র পূর্ব বাংলা ব্যাপী ছয়দফার সমর্থনে সভাসমাবেশ করেন। ক্ষমতা লোভী পাক ফৌজি সরকার বাংলার মানুষের প্রান প্রিয় নেতা বাংলার নয়ন মনি শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতঃ কুখ্যাত আগঢ়তলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। বাঙ্গাঁলী জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের জনক স্বাধীনতার স্থপতি মেখ মুজিবুর রহমান এত দিনে ধাপে ধাপে জাতীয়তা বাদীআন্দোলনের এক ও এক চ্ছত্র নেতা হিসাবে খ্যাতি ও স্বীকৃতি লাভ করেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দ্বয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেলে বাংলার মৃত্যো এবং মৌলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাষানীর বার্ধক্য জনিত দূর্বলতা, দলীয় দুরবস্থা ও সিদ্ধান্ত হীনতা, আপোষহীন নির্ভীক নেতা শেখ মুজিব কেই একক ভাবে বাংলাও বাঙ্গঁলির মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।তাঁর নিখাঁদ দেশ প্রেম, অপূর্ব সাংঘটনিক দক্ষতা, ঈর্ষনীয় বাগ্নিতা, দেশও দলের প্রতি আনুগত্য এবং শিক্ষনীয় কর্মি বাৎসল্য তাঁকে নেতৃত্বের এই পর্য্যায়ে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্র দ্রোহের মামলা, কারাগার ভয়ভীতী তাঁকে তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। উনসত্তোরের ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক এগারো দফার ছাত্র গন আন্দোলন গন অভ্যোথানে নাপাক পাক সরকারকেই নতি স্বীতার করতে হল, মামলা প্রত্যহার হলে জাতীয় বীর হিসাবে বেরিয়ে আসেন বাংলার মানুষের প্রান প্রিয় নেতা শেখ মুজিব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের ঐতিহাসিক সমাবেশে ডাকসুর ভিপি, ছাত্র লীগ নেতা তোফায়েল আহমদ এর উদ্যোগও নেতৃত্বে মহান নেতা শেখ মুজিবকে বঙ্গঁবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জাতীয় পর্য্যায়ের এই জাতীয় মহান নেতাও বড় মাফের মানুষের কর্ম ও জীবন দর্শনের যথাযথ মূল্যায়ন, তাঁকে নিয়ে স্মৃতি কথা লেখা স্মৃতি চারন করা খুবই কঠিন জটিল ও বিব্রত করই নয় দূঃসাধ্য ও বটে।“আমার দেখা বঙ্গঁবন্ধু” কিংবা বঙ্গঁবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতি কথা লিখতে হলে প্রশাসনিক কিংবা সরকারি কর্মকর্তা ব্যতিত সেই সব লেখক গবেষক সাংবাদিককে প্রতমত তাকে বয়স নুনতম পক্ষে সত্তরোর্ধ হতে হবে। কারন নেতা বঙ্গঁবন্ধুকে মূল্যয়ন করেত হলে পাকিস্তানী আমলের কথাই লিখতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে শাসক শেখ মুজিব মাননীয় প্রধান মন্ত্রী কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এর আশে পাশে থাকা নিরাপত্তা জনিত কারনে কোন সাধারন মানুষ, লেখক, সাংবাদিক গবেষক এর পক্ষে সম্ভব নয়। স্বাধীনতার অর্ধশত বৎসর পেরিয়ে পাকিস্তানী আমলে বঙ্গঁবন্ধুর ¯েœহধন্য সাংবাদিক লেখক গবেষক হাতে গুনাকয়েক জন এম,আর, মুকুল প্রমুখ এখন পরলোকে। বঙ্গঁবন্ধুর আপনজন একান্ত বিশ্বস্থ ইত্তেফাক সম্পাদক শ্রদ্ধেয় তফাজ্জুল হোসনে মানিক মিয়া সেই কবেই পাড়িজমিয়েছেন নাফেরার দেশে। পাক আমলে বঙ্গঁবন্ধু এবং আওয়ামীলীগ বিরোধী বামঘরানার পত্র পত্রিকা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাঙ্গাঁলি জাতির মুক্তি সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতা বাদি এবং সি,আই, এর দলিলএবং বঙ্গঁবন্ধুকে বুর্জোয়া গোষ্টির প্রতিনিধিবলেছেন। মস্কোপহ্ণী বামদের চাইতে চৈনিক বামেরা ছিলেন আরো কয়েক কদম এগিয়ে। রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তি যুদ্ধকে গন বিচ্ছিন্ন অতি বিপ্লবি চৈনিক বামেরা মাও সেতুং এর লালবই ঘাটা ঘাটি করে বলেছিলেন মুক্তি যুদ্ধ সর্বহারার জনযুদ্ধ নয়, এটা বুর্জোয়ায়-বুর্জোয়ায় লড়াই, দুই কুকরের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গেঁ অতিবিপ্লবী চৈনিক বামদের এহেন জঘন্য উক্তি লজ্জাস্কর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের জন্য অপমান জনক। এম,আর, আখতার মুকুল তাঁর গবেষনা মূলক বিশাল গ্রহ্ণে বাম সমাচার প্রসঙ্গেঁ ব্যাপক বর্ননা আলোচনা আছে। আজকাল অবশ্যি বারো বছরি ছাওয়াল এবং চৌদ্দ বছরি নাবালক এর দল মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকা ভূক্ত হয়েছেন-হচ্ছেন। বঙ্গঁবন্ধুর বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের আদর্শে উদ্ভোদ্ধ হয়ে ষাটের দশকের শুরুতে ছাত্রলীগের একজন কর্মিহিসাবে আমি ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। এ ব্যাপারে আমাকে উৎসাহিত অনুপ্রানিত ও সহযোগীতা করেছেন ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারন সম্পাদক তাত্বিক সিরাজুল আলম খান এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডাকসুর ভিপি আশম রব। তাাঁদের সাথে ¯েœহ মমতার সু সম্পর্ক এখনও বহাল আছে। আমি সেই সময় প্রথমে কলেজ শাখা অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। একজন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংঘটক হিসাব শিল্প ও সাহিত্য সংঘ, মৌলভীবাজার মহকুমা শাখার সভাপতি ছিলাম। দীর্ঘদেহী বিশাল গোঁফ, বাবরি চুল, উচ্চ কন্ঠে শোগান এবং জ্বালাময়ী ভাষনের কারনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সুনযরে ছিলাম। ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নিয়মিত যাতায়াত ছিল।ইকবাল হলের ১৬১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন, অগ্রজ প্রতিম গিয়াস উদ্দিন মনির ভাই। এই হল ছিল ছাত্র রাজনীতির প্রান কেন্দ্র। আটষট্টি সালে হায়ার সেকেন্ড ক্লাশনিয়ে আমার গ্রেজুয়েশন ডিগ্রীলাভ শেষে পিতা মাতার ইচ্ছাও পরামর্শে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হলে সার্বক্ষনিক ভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাহ চর্জে যাবার সুযোগ পাই সংস্পর্শ লাভ করি ভ্রাতৃ ¯েœহ মমতা পাই। দুর থেকে একাধিকবার দেখা হলেও কাছে থেকে এই মাহন নেতাকে যে ভাবে দেখেছি কথা বলেছি শুনেছি এমন সামান্য স্মৃতি চারন বঙ্গঁবন্ধু বিষয়ক শিরোনামের সামান্য প্রয়াসে। এত বছর পর কোন সাক্ষাত কার এর দিনতারিখ আমার স্মরন নাই শুধুমাত্র ঘটনার বয়ান থাকবে এসব বর্ননায়। স্বাধীনতার পূর্বকালে সিলেট যাবার পথে আমাদের মৌলভীবাজার শহরে যাত্রা বিরতি করেন জননেতা শেখ মুজিব। সৈয়দ শাহ মোস্তফা সড়কস্থ তৎকালীন ওয়াপদার ডাক বাংলাতে উঠেন তিনি তখন এখানে আওয়ামীলীগের কমিটি সাংঘটনিক কার্য্যক্রম সভার সমাবেশ মিটিং মিছিল ছিল না, হতনা। তৎকালে, হাতে গুনা আওয়ামী লীগের কতেক কর্মি সমর্থক ছিলেন। তবে ছাত্র লীগ একটি শক্তিশালী ছাত্র প্রিয় সংঘটনা ছিল। নির্ভীক মুজিব সৈনিক মোহাম্মদ ফিরোজকে সভাপতি এবং আজিজুল হকইকবালকে সম্পাদক নির্বাচিত করে মহকুমা কমিটি গঠিত হয়েছিল। তৎকালীন জিন্নাহ হলে ক্ষুদ্রাকারের সেই কর্মি সভা দেখে নারাজ কিংবা না খোশহলেন না নেতা শেখ মুজিব। আমরা সবাই কাছে থেকে দেখলাম উজ্ঝল ফর্সা রং, দীর্ঘ দেহী, ব্যেকব্রাশ করা চুল, উন্নত নাসিকা, মুখে একটি কালো তিল সমেত সফেদ সাদা ধবধরে পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত নেতা শেখ মুজিবকে দারুন লাগছিল। তখন এখন কার মত এত প্রেস মিডিয়া সুশীল সমাজ ছিলেন না, ধীরস্থির ভাবে তিনি বলেছিলেন আমাকে দলদিন, আমি আপনাদের অধিকার আদায় করে দেব। তখন এখানে এখানকার মত মোটর সাইকেল স্কোয়াড, গাড়ি বহর ছিল না, পুরাতন উইলস জীপ এর যাত্রী ছিলেন তিনি। আমি তাঁর পিছু পিছু সিলেট যাই। সেখানে আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজির বাসগৃহকে কেন্দ করে নেতা, কর্মি, জনতার ব্যাপক সমাবেশ। আমাকে দেখে জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজি খুবই খুশী হলেন। পিতৃতুল্য প্রয়াত এই নেতা রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। ঢাকাবাসি হয়ে আমি লেখা লেখিও সাংবাদিকতায় ব্যস্থ হই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সম্পাদকশেখ ফজলুল হক মনি সম্পাদিত সাপ্তাহিক বাংলার বানীর আমাদের মহকুমা প্রতিনিধি ছিলাম আমি। সাক্ষাতকার এর প্রয়োজনে আওয়ামীলীগ অফিসে দলীয় প্রধান শেখ মুজিব এর সঙ্গেঁ সাক্ষাতকার ব্যবস্থাকরে দিতে অনুরোধ করলাম দাদা হিসাবে খ্যাত সিরাজুল আলম খানকে। তখন আওয়ামীলীগের অফিস ছিল পুরানা পল্টনের একটি দ্বিতল বাড়িতে। নিছে সপ্তাহিক বাংলার বানীর অফিস। সম্পাদক মনি ভাই এখানে নিয়মিত বসেন। ষাটের দশকের শেষ ভাগেও দলীয় অফিস ফাকা। পিয়ন-দারোয়ান ছাড়া তেমন লোক সমাগম নেই। দাদাই ব্যবস্থা করে দিলেন। তাঁর কথামত নেতার সঙ্গেঁ দেখা করতে গেলাম। একজন মফস্বলি হলেও সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয় এর ছাত্র হিসাবে আমার একটি অবস্তান ছিল। সাক্ষাতকার এর দিন প্রথমেই নিচ তলায় বাংলার বানী সম্পাদক মনি ভাইর সঙ্গেঁ দেখা করলাম। উজ্জল ফর্সা চেহারার নেতাও সম্পাদক, ব্যক্তিত্ববান পুরুষ মনি ভাইর পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা নিয়ে দোতলায় নেতার কক্ষে গেলাম। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি চেক মুজিব কোট পরিহিত জননেতা শেখ মুজিব একজন সুদর্শন সুপুরুষ। বৃহদাকৃতির টেবিলে নেতা নিজের আসনে বসা। ছাত্রলীগ নেতা এবং সাংবাদিককতায় আছি বলে খুবই খুশী হলেন প্রশংসা করলেন। তাঁর কথা বর্তায় কোন অহংকার কিংবা অহং বোধ ছিল না, বারং সাধারন পোষাকে ছিলেন এক অসাধারন পুরুষ।ঘরোয়া পরিবেশে একজন বড় মাপের নেতার আলাপ চারিতায় মুগ্ধ হলাম তাঁর দোয়া ও দিক নির্দেশনা নিয়ে আবেগ আপ্লুত হলাম। বেরিয়ে এলাম। আমার ছাত্র রাজনীতির জীবনের চীর স্মরনীয় অধ্যায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রীগের শেষ বর্ধিত সভা। সত্তোর সালের সাধারন নির্বাচন এর প্রাক্কলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্য্যালয় ৪২ বলকা ভবনে বর্ধিত সভার আহŸান করেন। এজেন্ডা একটাই, আর পাকিস্তান নয়, স্বাধীন বাংলা চাই, স্বাধীন বাংলার স্বপক্ষে প্রস্তাব পাশ করতঃ তা বঙ্গঁবন্ধুর কাছে পেশ করা হবে। স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবের প্রশ্নে ছাত্রলীগ দ্বিধা বিভক্ত, সংখ্যা গরিষ্ট “স্বাধীন বাংলা পহ্ণী”। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সিরাজুল আলম খান, আশম রব, শাহ জাহান সিরাজ প্রমুখ স্বাধীন বাংলার পহ্ণী আমিও শ্লোগান দিতাম, স্বাধীনকর স্বাধীনকর- বাংলাদেশ স্বাধীনকর, সবকথার শেষ কথা বাংলার স্বাধীনতা ইত্যাদি। তখন আমি আমাদের মহকুমা সভাপতি, সেক্রেটারি আ,খ, সুজাউল করিম। সিলেট জেলার সভাপতি সম্পাদক ছিলেন সেকাল থেকে একালের আমার দুই প্রিয় বন্ধু অনলবর্ষী বক্তা সদর উদ্দিন চৌধুরী এবং মকসুদ ইবনে আজিজ লামা। ছাত্ররাজনীতির প্রানকেন্দ্র ইকবাল হলে আমরা জামায়েত হলাম। দাদার ব্রিফিং নিলাম। কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সভাপতি আরেক সুবক্তা নুরে আলম সিদ্দিকীর সভা পতিত্বে বর্ধিত সভা শুরু হলে মফস্বলীয় কমিটি সমূহের পক্ষ থেকে ভাষন শুরু হল। আমাদের মহকুমা কমিটির পক্ষ থেকে আমি বক্তৃকা দিলাম স্বাধীন বাংলার পক্ষে সিলেট থেকে সদর ভাই লামা ভাই উভয়েই আবেগময় জ্বালাময়ী ভাষন দিলেন। সংখ্যাগরিষ্ট সভাপতি সম্পাদক স্বাধীন বাংলার স্বপক্ষে ভাষনদান করতঃ প্রস্তাব পাশ করতে জোর দাবী জানালেন। কিন্তু একটি মহলে নির্বাচনের পূর্বে স্বাধীন বাংলার পক্ষে প্রস্তাব পাশে আপত্তি জানালে সভায় হটগোল শুরু হয়ে যায়। টান টান উত্তেজনার মধ্যে প্রস্তাব আসল এ ব্যাপারে আমাদের নেতা বঙ্গঁবন্ধুর মতামত ও পরামর্শ নেয়া দরকার। বঙ্গঁবন্ধু প্রসঙ্গেঁ সবাই ঐক্যমত পোষন করলে শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দেখা করতে যাবার সিদ্ধান্ত হল। ৪২ বলাকা ভবন থেকে ধানমন্ডির ৩২নং কাছেই। নেতাদের পিছু পিছু আমিও ছুটলাম সবার সঙ্গেঁ পরিচয় ও সম্পর্ক থাকায় কেউ আপত্তি করলেন না। পায়ে হেটেই আমরা বঙ্গঁবন্ধুর বাড়ি বত্রিশ নম্বরে গেলাম। তখন গভীর রাত। কেন্দ্রীয় নেতাদের খবর পেয়ে ঘুম থেকে উঠে দোতলাথেকে নিচে নেমে এলেন নেতা। পরিধানে চেক গেঞ্জির উপর বুকখোলা হাফ হাতা আকাশী রং এর হাওয়াই সার্ট। হাতে তাঁর প্রিয় পাইপ। গভীর রাতে ঘুমথেকে উঠে এলেও তাঁর মুখাবয়বে কোন বিরক্তির ছাপ ছিল না। বরং বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধৈর্য্য সহকারে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনলেন। চীরাচরিত নিয়ম মাফিক তার পাইপ টানছেন। “এরিন মউর”- এর মিষ্টি গন্ধে মৌ মৌ করছে বঙ্গঁবন্ধুর বিশাল বারোয়ারি ড্রয়িং রুম। দার্শনিকের মত রাজনৈতিক শিক্ষক বাংলাও বাঙ্গাঁলির প্রানপ্রিয় নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বল্লেন- আমার কাছে সংবাদ আছে আগামী নির্বাচনে আমরা সংখ্যা গরিষ্ট আসন পাব। নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচনে বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে আসবে। নির্বাচন না করলে আমি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা হয়ে যাব। তোমরা আমাকে ম্যেনডেট দাও। আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। এখন যদি আমি স্বাধীনতা ঘোষনা করি জনগন আমার ডাকে সাড়া দেবে কিন্তু আইনী সাপোর্ট না হলে বিশ্ব জনমত পাবে না। এভাবে বঙ্গঁবন্ধু নির্বাচনেও আন্দোলন প্রসঙ্গেঁ তাত্বিক ব্যাখ্যা দিলেন। নেতাদের মুখে টুশব্দ নাই। বঙ্গঁবন্ধুর এই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পান্ডিত্যে আমি ও আমরা বিমুগ্ধ হলাম। তাঁর কথামত বর্দ্ধিত সভা মূলতবি করা হল। এই বর্ধিত সভাটি আর হয় নি, কারন আমরান’ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াই শেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসাবে দেশে বিদেশে খ্যাতিও স্বীকৃতি পেয়েছেন বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের জনক বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গনতন্ত্র, আইনের শাসন-সুশাসন-সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা ছিল মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চেতনা। কিন্তু দুঃখও দূর্ভাগ্য জনক ভাবে এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে সংসদীয় গনতন্ত্র ও সংস্কৃতির চর্চা নেই। আইনের শাসনও ন্যায় বিচার কাঠালের আমসত্ব এবং সোনার পাথর বাটিতে পরিনত হয়েছে- যাকারোই কাম্য নয়। পচাত্তোর পেরিয়ে জীবন সায়াহ্ণে, এই শেষবেলায় প্রাপ্তি যোগের কোন প্রত্যাশা কিংবা কোন উদ্দেশ্যে নিয়ে এই রচনা নয়। ইতিহাসের একজন নিরব স্বাক্ষী, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে স্বাধীনতার স্থপতিকে যেভাবে দেখেছি তাই নির্মোহ ভাবে নিবেদন করলাম। ১৭ই মার্চ বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিনে তাঁর উজ্জুল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ, পচাত্তোরের পনেরোই আগষ্ট সপরিবারে নির্মম ভাবে নিহত মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
[ ষাটের দশকের ছাত্র নেতা ও সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]
8:39 pm, Thursday, 13 November 2025
News Title :
আমার দেখা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানঃ স্মৃতি কথা
-
নিজস্ব প্রতিবেদক - Update Time : 06:58:13 pm, Thursday, 16 March 2023
- 376 Time View
Tag :
Popular Post
























