7:45 pm, Monday, 17 November 2025

ইউক্রেন ইস্যুতে ফের তেলের দাম বৃদ্ধি

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : রাশিয়া এবং ইউক্রেন সংকটে বড় ধাক্কা এসেছে বিশ্ববাজারে তেলের দামে। এর পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার উত্তেজনার কারণে বিশ্বজুড়েই তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মূলত সেই আতঙ্কেই তেলের দাম দিন দিন বাড়ছে।

তেলের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড
বিশ্ববাজারে গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ১৭ মিনিটে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৯৮ দশমিক ৯৯ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ব্যারেল প্রতি দাম ৯৫ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য এবং এর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। কিন্তু সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা এলে বিশ্ববাজারে তেলের দামের লাগাম টানা যাবে না বলে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিডেলিটি ইন্টারন্যালের পরিচালক মেইক কুরি বলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগেও বাজার বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বব্যাপী ১০ ভাগ তেলের মধ্যে এক ভাগই আসে রাশিয়া থেকে। সুতরাং বিশ্বের তেলের বাজারে সবচেয়ে বড় খেলোয়ার বলা যায় মস্কোকেই। আর রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংকট বাড়তে থাকলে তা নিঃসন্দেহে প্যাট্রোল পাম্পের গ্রাহকদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট
শুধু তেলই নয় বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দেশও রাশিয়া। যেকোনো সময় ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি। এর বড় প্রভাব পড়বে বিশ্বের অর্থনীতিতে। ইউরোপ প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল, গত বছর চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ আগের অবস্থায় ফেরেনি। এর ফলে গ্যাসের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে দেখা গেছে। আর দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে গ্যাসের দাম আরও বাড়বে এবং ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে।

নাগালের বাইরে যেতে পারে খাদ্যপণ্য
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটে শুধু তেলের বাজার নয়, অস্থির হয়ে উঠবে বিশ্বের অর্থনীতি, দাম বাড়বে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যেরও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মস্কো যদি কিয়েভে হামলা চালায় তাহলে বেড়ে যেতে পারে গম ও ভুট্টার দাম। যদিও এরই মধ্যে বৈশ্বিক খাদ্য পণ্যের দাম ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গম রাপ্তানিকারক দেশ।

রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গম রাপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম ও ভুট্টা রপ্তানি করে। তাই দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি সংঘাতে রূপ নিলে বেড়ে যেতে পারে এসব খাদ্যশস্যের মূল্য। এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল প্ল্যাটসের শস্য বিশ্লেষণের প্রধান পিটার মেয়ার বলেন, যা ঘটছে তার ওপর ভিত্তি করে অবশ্যই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গম ও ভুট্টার চালানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের হস্তক্ষেপে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা সরবরাহের জন্য এই দেশ দুটির ওপর নির্ভর করে।

বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে পতন
চলতি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শঙ্কায় ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন দেখা গেছে। লন্ডনের এফটিসিই, জার্মানির ডিএএক্স, ফ্রান্সের সিএসি, জাপানের নিক্কেই, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপির সূচক কমতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে চীনের শেয়ার বাজারেও।

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

Popular Post

ইউক্রেন ইস্যুতে ফের তেলের দাম বৃদ্ধি

Update Time : 12:35:33 pm, Tuesday, 22 February 2022

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : রাশিয়া এবং ইউক্রেন সংকটে বড় ধাক্কা এসেছে বিশ্ববাজারে তেলের দামে। এর পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার উত্তেজনার কারণে বিশ্বজুড়েই তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মূলত সেই আতঙ্কেই তেলের দাম দিন দিন বাড়ছে।

তেলের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড
বিশ্ববাজারে গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ১৭ মিনিটে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৯৮ দশমিক ৯৯ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ব্যারেল প্রতি দাম ৯৫ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য এবং এর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। কিন্তু সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা এলে বিশ্ববাজারে তেলের দামের লাগাম টানা যাবে না বলে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিডেলিটি ইন্টারন্যালের পরিচালক মেইক কুরি বলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগেও বাজার বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বব্যাপী ১০ ভাগ তেলের মধ্যে এক ভাগই আসে রাশিয়া থেকে। সুতরাং বিশ্বের তেলের বাজারে সবচেয়ে বড় খেলোয়ার বলা যায় মস্কোকেই। আর রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংকট বাড়তে থাকলে তা নিঃসন্দেহে প্যাট্রোল পাম্পের গ্রাহকদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট
শুধু তেলই নয় বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দেশও রাশিয়া। যেকোনো সময় ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি। এর বড় প্রভাব পড়বে বিশ্বের অর্থনীতিতে। ইউরোপ প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল, গত বছর চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ আগের অবস্থায় ফেরেনি। এর ফলে গ্যাসের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে দেখা গেছে। আর দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে গ্যাসের দাম আরও বাড়বে এবং ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে।

নাগালের বাইরে যেতে পারে খাদ্যপণ্য
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটে শুধু তেলের বাজার নয়, অস্থির হয়ে উঠবে বিশ্বের অর্থনীতি, দাম বাড়বে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যেরও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মস্কো যদি কিয়েভে হামলা চালায় তাহলে বেড়ে যেতে পারে গম ও ভুট্টার দাম। যদিও এরই মধ্যে বৈশ্বিক খাদ্য পণ্যের দাম ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গম রাপ্তানিকারক দেশ।

রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গম রাপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম ও ভুট্টা রপ্তানি করে। তাই দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি সংঘাতে রূপ নিলে বেড়ে যেতে পারে এসব খাদ্যশস্যের মূল্য। এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল প্ল্যাটসের শস্য বিশ্লেষণের প্রধান পিটার মেয়ার বলেন, যা ঘটছে তার ওপর ভিত্তি করে অবশ্যই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গম ও ভুট্টার চালানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের হস্তক্ষেপে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা সরবরাহের জন্য এই দেশ দুটির ওপর নির্ভর করে।

বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে পতন
চলতি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শঙ্কায় ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন দেখা গেছে। লন্ডনের এফটিসিই, জার্মানির ডিএএক্স, ফ্রান্সের সিএসি, জাপানের নিক্কেই, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপির সূচক কমতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে চীনের শেয়ার বাজারেও।