11:13 pm, Thursday, 13 November 2025

কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলার প্রকৃতির রূপের অধরা রূপ দেখা যায় যার কবিতায়, তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। বাংলার প্রকৃতিকে নিপুণভাবে তিনি তার কবিতায় তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাতে সফলও হয়েছেন। এ জন্য তাকে বলা হয় উপমার জাদুকর কবি।

কেউ বলেন ঝরাপালকের কবি, কেউ বলেন রূপসী বাংলার কবি, কেউ বলেন বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, কেউ বলেন তিমির হননের কবি, কেউ বলেন নির্জনতার কবি- জীবনানন্দ দাশ। কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। মা কবি কুসুম কুমারী দাশ ও বাবা সত্যানন্দ দাশ। পড়াশোনা ম্যাট্রিক ও আই এ বরিশালে। অনার্সসহ বি এ ও এম এ কলকাতায়। ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু। বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজেও শিক্ষকতা করেন। কিছু দিন পর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। দিল্লির রামযশ কলেজে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে আবার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিছুকাল বেকার থেকে জীবনানন্দ ১৯৩৫ সালে বরিশালের বিএম কলেজে যোগদান করেন। এভাবে তার কর্মজীবন কাটে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনায়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের কিছু আগে তিনি সপরিবারে কলকাতা চলে যান।

স্কুলজীবনেই কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ আখ্যা দিয়েছিলেন। আসলে চিত্রময়তায় এমন অনুভূতির প্রকাশ অন্য কারো কবিতায় চোখে পড়ে না। জীবনানন্দ তার কবিতায় প্রকৃতির যে বর্ণনা করে গেছেন তা যে কারোর মনেই ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করে।

চারপাশের খুব সাধারণ দৃশ্যপটও তার লেখায় ছিল অসাধারণ। যার কবিতায় রয়েছে শুধুই মুগ্ধতা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে।

জীবনানন্দের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (রচনাকাল ১৯৩৪, প্রকাশকাল ১৯৫৭) ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১)।

উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে : ‘মাল্যবান’ (১৯৭৩), ‘সুতীর্থ’ (১৯৭৭), ‘জলপাইহাটি’ (১৯৮৫), ‘জীবনপ্রণালী’, ‘বাসমতীর উপ্যাখ্যান’ ইত্যাদি।

তার গল্পের সংখ্যাও প্রায় দুই শতাধিক। ‘কবিতার কথা’ (১৯৫৫) নামে একটি মননশীল ও নন্দনভাবনামূলক প্রবন্ধগ্রন্থও আছে তার।

কবি ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই কবির মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে রাজি নন। প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে, জীবনানন্দ দাশ যখন ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন তখন তার হাতে ডাব ছিল। একজন মানুষ হাতে ডাব নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না।

কবি জীবনানন্দ দাশ সশরীরে না এলেও কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে এই বাংলায় ফিরে আসেন বারবার।

 

 

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় গেলে সকলকে নিয়েই ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্টা করা হবে- এড. আব্দুর রব

কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ

Update Time : 08:38:17 am, Thursday, 17 February 2022

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলার প্রকৃতির রূপের অধরা রূপ দেখা যায় যার কবিতায়, তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। বাংলার প্রকৃতিকে নিপুণভাবে তিনি তার কবিতায় তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাতে সফলও হয়েছেন। এ জন্য তাকে বলা হয় উপমার জাদুকর কবি।

কেউ বলেন ঝরাপালকের কবি, কেউ বলেন রূপসী বাংলার কবি, কেউ বলেন বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, কেউ বলেন তিমির হননের কবি, কেউ বলেন নির্জনতার কবি- জীবনানন্দ দাশ। কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। মা কবি কুসুম কুমারী দাশ ও বাবা সত্যানন্দ দাশ। পড়াশোনা ম্যাট্রিক ও আই এ বরিশালে। অনার্সসহ বি এ ও এম এ কলকাতায়। ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু। বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজেও শিক্ষকতা করেন। কিছু দিন পর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। দিল্লির রামযশ কলেজে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে আবার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিছুকাল বেকার থেকে জীবনানন্দ ১৯৩৫ সালে বরিশালের বিএম কলেজে যোগদান করেন। এভাবে তার কর্মজীবন কাটে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনায়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের কিছু আগে তিনি সপরিবারে কলকাতা চলে যান।

স্কুলজীবনেই কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ আখ্যা দিয়েছিলেন। আসলে চিত্রময়তায় এমন অনুভূতির প্রকাশ অন্য কারো কবিতায় চোখে পড়ে না। জীবনানন্দ তার কবিতায় প্রকৃতির যে বর্ণনা করে গেছেন তা যে কারোর মনেই ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করে।

চারপাশের খুব সাধারণ দৃশ্যপটও তার লেখায় ছিল অসাধারণ। যার কবিতায় রয়েছে শুধুই মুগ্ধতা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে।

জীবনানন্দের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (রচনাকাল ১৯৩৪, প্রকাশকাল ১৯৫৭) ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১)।

উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে : ‘মাল্যবান’ (১৯৭৩), ‘সুতীর্থ’ (১৯৭৭), ‘জলপাইহাটি’ (১৯৮৫), ‘জীবনপ্রণালী’, ‘বাসমতীর উপ্যাখ্যান’ ইত্যাদি।

তার গল্পের সংখ্যাও প্রায় দুই শতাধিক। ‘কবিতার কথা’ (১৯৫৫) নামে একটি মননশীল ও নন্দনভাবনামূলক প্রবন্ধগ্রন্থও আছে তার।

কবি ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই কবির মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে রাজি নন। প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে, জীবনানন্দ দাশ যখন ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন তখন তার হাতে ডাব ছিল। একজন মানুষ হাতে ডাব নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না।

কবি জীবনানন্দ দাশ সশরীরে না এলেও কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে এই বাংলায় ফিরে আসেন বারবার।