7:46 am, Wednesday, 19 November 2025

জলবায়ুর ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি

ডেস্ক রিপোর্ট : ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় জলবায়ু তহবিল বিসিসিটি থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি জানায়, ওই সময়ে মোট ৮৯১টি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০ দশমিক ৬ কোটি টাকার সমান।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০–২০২৪ সালের মধ্যে বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত বলে টিআইবি প্রাক্কলন করেছে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিসিসিটির কর্মকর্তারা যদিও তহবিল ব্যবস্থাপক, তবুও এসব অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০১৫–২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে প্রতিবছর গড়ে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে, অথচ আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩.৮ শতাংশ। তবে এই বরাদ্দও প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বও গভীর উদ্বেগের বিষয়। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬%) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড় প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিন, অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কিছু ক্ষেত্রে চার বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্ব দেখা গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২%) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯৫৮ দিন থেকে ২,৯৭৮ দিনে, যা ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতি বছর ১০–১২ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩–২০২৪ সালের মধ্যে আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য। দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ লুটপাট হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থার অদক্ষতা ও অনিয়ম—এ সব মিলিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা চাই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন।

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

শ্রীমঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা

জলবায়ুর ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি

Update Time : 10:53:37 am, Tuesday, 4 November 2025

ডেস্ক রিপোর্ট : ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় জলবায়ু তহবিল বিসিসিটি থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি জানায়, ওই সময়ে মোট ৮৯১টি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০ দশমিক ৬ কোটি টাকার সমান।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০–২০২৪ সালের মধ্যে বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত বলে টিআইবি প্রাক্কলন করেছে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিসিসিটির কর্মকর্তারা যদিও তহবিল ব্যবস্থাপক, তবুও এসব অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০১৫–২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে প্রতিবছর গড়ে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে, অথচ আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩.৮ শতাংশ। তবে এই বরাদ্দও প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বও গভীর উদ্বেগের বিষয়। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬%) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড় প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিন, অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কিছু ক্ষেত্রে চার বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্ব দেখা গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২%) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯৫৮ দিন থেকে ২,৯৭৮ দিনে, যা ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতি বছর ১০–১২ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩–২০২৪ সালের মধ্যে আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য। দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ লুটপাট হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থার অদক্ষতা ও অনিয়ম—এ সব মিলিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা চাই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন।