9:05 pm, Monday, 17 November 2025

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্ব নেতাদের সমর্থন

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আস্থা জানাতে নিউইয়র্কে একত্র হলেন বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের এক হোটেল স্যুইটে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভায়রা ভিকে-ফ্রেইবার্গার, যিনি বর্তমানে নিজামী গঞ্জভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন—স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ, মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম

এ ছাড়া কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, বিভিন্ন দেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা ইউনূসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচনের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আপনারা সম্পূর্ণ একা নন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

নেতারা স্বীকার করেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার পর বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে তারা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

কেরি কেনেডি বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার অগ্রগতি প্রশংসনীয়। জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলানি ভেরভির জানান, শিগগিরই তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাবে।

এনজিআইসি’র সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করলে আমরা সবসময় পাশে থাকব।’

সমর্থন পেয়ে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। এত সম্মানিত নেতাদের একসঙ্গে আমাদের পাশে দাঁড়াতে দেখে আমি অভিভূত।’

তিনি গত ১৫ বছরের শাসনব্যবস্থাকে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এটা যেন ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো ধ্বংসযজ্ঞ। জনগণ এখন তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আশা করছে। সীমিত সম্পদ নিয়েও আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করে ইউনূস আরও বলেন, ‘আপনাদের দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং নৈতিক সমর্থন আমাদের জন্য অমূল্য হবে।’

বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক বড় ধরনের আস্থার বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্ব নেতাদের সমর্থন

Update Time : 07:38:33 am, Saturday, 27 September 2025

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আস্থা জানাতে নিউইয়র্কে একত্র হলেন বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের এক হোটেল স্যুইটে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভায়রা ভিকে-ফ্রেইবার্গার, যিনি বর্তমানে নিজামী গঞ্জভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন—স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ, মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম

এ ছাড়া কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, বিভিন্ন দেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা ইউনূসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচনের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আপনারা সম্পূর্ণ একা নন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

নেতারা স্বীকার করেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার পর বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে তারা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

কেরি কেনেডি বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার অগ্রগতি প্রশংসনীয়। জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলানি ভেরভির জানান, শিগগিরই তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাবে।

এনজিআইসি’র সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করলে আমরা সবসময় পাশে থাকব।’

সমর্থন পেয়ে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। এত সম্মানিত নেতাদের একসঙ্গে আমাদের পাশে দাঁড়াতে দেখে আমি অভিভূত।’

তিনি গত ১৫ বছরের শাসনব্যবস্থাকে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এটা যেন ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো ধ্বংসযজ্ঞ। জনগণ এখন তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আশা করছে। সীমিত সম্পদ নিয়েও আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করে ইউনূস আরও বলেন, ‘আপনাদের দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং নৈতিক সমর্থন আমাদের জন্য অমূল্য হবে।’

বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক বড় ধরনের আস্থার বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।