8:35 am, Friday, 14 November 2025

তাইওয়ানের চারপাশে আজও চীনের সামরিক মহড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের জেরে গত সপ্তাহে তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করেছিল চীন। লাইভ-ফায়ার (তাজা গোলাবর্ষণ)-সহ চীনা সামরিক বাহিনীর এই মহড়া রোববার শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে কথা রাখেনি চীন। তাইওয়ানকে ঘিরে ধরে বেইজিংয়ের এই সামরিক মহড়া চলছে সোমবারও (৮ আগস্ট)। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সামরিক বাহিনী বলেছে যে, তারা সোমবার তাইওয়ানের আশপাশে সমুদ্র এবং আকাশে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড চীনা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবোতে বলেছে, চলমান এই মহড়ায় তারা সাবমেরিন বিরোধী হামলা এবং সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করবে।

মূলত মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর চীনা সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের কাছাকাছি এলাকায় নৌ ও বিমান বাহিনীর নজিরবিহীন মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে চীনের এই সামরিক মহড়াকে ‘উস্কানিমূলক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বেইজিং তাইওয়ানের ‘স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার’ চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করে হোয়াইট হাউস।

এছাড়া তাইওয়ান প্রণালী ও এর আশপাশে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য গত শনিবার চীনকে অভিযুক্ত করে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তাইওয়ানের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। এগুলো উস্কানিমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বাড়ায়।’

তবে চীন বলেছে, ন্যান্সির পেলোসির সফর তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ‘গুরুতর হুমকি’ মুখে ঠেলে দিয়েছে। আর এই কারণে গত শুক্রবার পেলোসি এবং তার পরিবারের ওপর এই সফরের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

তবে এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।

দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

Popular Post

ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত সহকারী হাইকমিশনার  চাতলাপুর  স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবসাযীদের সাথে মত বিনিময় 

তাইওয়ানের চারপাশে আজও চীনের সামরিক মহড়া

Update Time : 07:14:26 am, Monday, 8 August 2022

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের জেরে গত সপ্তাহে তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করেছিল চীন। লাইভ-ফায়ার (তাজা গোলাবর্ষণ)-সহ চীনা সামরিক বাহিনীর এই মহড়া রোববার শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে কথা রাখেনি চীন। তাইওয়ানকে ঘিরে ধরে বেইজিংয়ের এই সামরিক মহড়া চলছে সোমবারও (৮ আগস্ট)। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সামরিক বাহিনী বলেছে যে, তারা সোমবার তাইওয়ানের আশপাশে সমুদ্র এবং আকাশে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড চীনা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবোতে বলেছে, চলমান এই মহড়ায় তারা সাবমেরিন বিরোধী হামলা এবং সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করবে।

মূলত মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর চীনা সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের কাছাকাছি এলাকায় নৌ ও বিমান বাহিনীর নজিরবিহীন মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে চীনের এই সামরিক মহড়াকে ‘উস্কানিমূলক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বেইজিং তাইওয়ানের ‘স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার’ চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করে হোয়াইট হাউস।

এছাড়া তাইওয়ান প্রণালী ও এর আশপাশে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য গত শনিবার চীনকে অভিযুক্ত করে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তাইওয়ানের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। এগুলো উস্কানিমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বাড়ায়।’

তবে চীন বলেছে, ন্যান্সির পেলোসির সফর তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ‘গুরুতর হুমকি’ মুখে ঠেলে দিয়েছে। আর এই কারণে গত শুক্রবার পেলোসি এবং তার পরিবারের ওপর এই সফরের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

তবে এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।

দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।