8:54 pm, Friday, 14 November 2025

পদ্মা সেতু দিয়ে স্বরূপকাঠির পেয়ারা যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম

ডেস্ক রিপোর্ট : পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার পেয়ারা বাগানে বেড়েছে বেপারীদের আনাগোনা। দূরের জেলায় পেয়ারা পাঠাতে এখন আর পথে পচার ভয় নেই। উপজেলার আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগে পিরোজপুরের বাসিন্দাদের ঢাকা যেতে সড়ক পথে সময় লাগতো ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা, এখন তিন থেকে চার ঘণ্টায় পৌঁছানো যাচ্ছে। আর পেয়ারা, আমড়া, কলাসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনেও সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি লাগছে না।

পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের ৬ লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন পেয়ারা চাষে। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের তালিকায় ধানের পরে রয়েছে পেয়ারা, আমড়া, কলা। পেয়ারা চাষ হয় শুধু স্বরূপকাঠিতে আর এরপরেই রয়েছে আমড়া।

স্বরূপকাঠি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রক্তিম কুমার ঘরামী বলেন, স্বরূপকাঠির ২ হাজার পরিবার পেয়ারা চাষে জড়িত। এছাড়া বরিশালের বানারীপাড়া ও ঝালকাঠির বেশ কিছু এলাকার লোক পেয়ারা চাষে জড়িত।

উপজেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, বর্তমানে স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রায় ৬ শ ৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২৫টির মতো বাগান রয়েছে। এ বাগানে প্রতি বছরই পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এতোদিন প্রতিমণ পেয়ারা দেড় শ থেকে দুই শ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। চাষিরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের মাধ্যমে যাত্রীবাহী লঞ্চে বা ট্রলারে করে পেয়ারা ঢাকা পাঠাতেন। এতে যেমন সময় লাগতো ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা, তেমনি তরতাজা ফলটিও অনেক সময় পেকে যেতো বা পচে যেতো। এখন পদ্মা সেতুর কারণে সড়ক পথেই চাষিরা সরাসরি দ্রুত পচনশীল এ পণ্যটি ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন। সড়ক পথে তাদের খরচও কম হচ্ছে।

স্বরূপকাঠির কুড়িআনা এলাকার কালীপদ হালদার জানান, বাগান করার তিন বছরের মধ্যে আমড়ার ফলন পাওয়া যায়। একনাগারে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত আমড়ার উৎপাদন হয়। প্রতিমণ আমড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। যাত্রীবাহী লঞ্চ অথবা সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় পণ্যটি। এতে চাষিরা বেশি লাভবান হতে পারতেন না। এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় আমড়া অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠানো যাবে ঢাকায়। চাষিরা নিজেরাই আমড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে বড় বাজারগুলোতে বিক্রি করতে পারবেন। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না। লাভও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। বর্ষা মৌসুমে এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু ও কলা ট্রাক বা ট্রলারযোগে ঢাকা পৌঁছাতে ১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেয়ারা পেকে যেতো, অনেক সময় পচেও যেতো। আর আমড়াও পেকে যেতো। ফলে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতা উভয়েই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

কুরিয়ানা ইউনিয়নের জিন্দাকাঠী এলাকার পেয়ারা চাষি দিলীপ মজুমদার জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করেছেন। গত বারের চেয়ে এবারের ফলন ভালো কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পেয়ারার সাইজ ছোটো হয়েছে।

স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী তাপস বড়ালের বাড়ি উপজেলার মাহামুদকাঠী এলাকায়। বাগান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকায় পাঠান তিনি। প্রায় ২০ বছর ধরে পেয়ারা, আমড়ার মৌসুমে এ কাজটি করছেন তিনি। ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। প্রতিবছর এই মৌসুমে ঢাকায় পেয়ারা পাঠাতে গিয়ে পদ্মার এপারে ঘাটে ট্রাক বোঝাই পেয়ারা আটকা পড়ে পচে যায়।গত মৌসুমে ৭ থেকে ৮ ট্রাক পেয়ারা আটকা পড়ে পচে গেছে। একারণে লোকসান গুনতে হয়েছে’— জানান তাপস বড়াল। এরপর তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৭ ট্রাক পেয়ারা ঢাকায় পাঠিয়েছি। সব পেয়ারাই তাজা অবস্থায় পাঠানো গেছে। এখন আর পচার ভয় নেই।

স্বরূপকাঠি উপজেলার কুরিয়ানা ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ টাটকা পেয়ারা খেতে পারবে। মানুষজন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া সহজেই পেয়ারা বাগানে ঘুরতে আসতে পারবে। তিনি বলেন, পেয়ারার মৌসুমে পদ্মা থাকে উত্তাল। অনেকেই ভয়ে আসতে চাইতেন না। সরাসরি সড়ক পথে আসার সুযোগ হওয়ায় পর্যটকদের সেই ভয় এখন আর নেই। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সময়ে পেয়ারা বাগানে ঘুরতে এসেছেন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, ভারতের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

Tag :
About Author Information

Sirajul Islam

Popular Post

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ইসরাঈল হোসেন বদলি হয়েছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তৌহিদুজ্জামান পাভেল

পদ্মা সেতু দিয়ে স্বরূপকাঠির পেয়ারা যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম

Update Time : 07:08:37 am, Tuesday, 26 July 2022

ডেস্ক রিপোর্ট : পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার পেয়ারা বাগানে বেড়েছে বেপারীদের আনাগোনা। দূরের জেলায় পেয়ারা পাঠাতে এখন আর পথে পচার ভয় নেই। উপজেলার আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগে পিরোজপুরের বাসিন্দাদের ঢাকা যেতে সড়ক পথে সময় লাগতো ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা, এখন তিন থেকে চার ঘণ্টায় পৌঁছানো যাচ্ছে। আর পেয়ারা, আমড়া, কলাসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনেও সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি লাগছে না।

পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের ৬ লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন পেয়ারা চাষে। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের তালিকায় ধানের পরে রয়েছে পেয়ারা, আমড়া, কলা। পেয়ারা চাষ হয় শুধু স্বরূপকাঠিতে আর এরপরেই রয়েছে আমড়া।

স্বরূপকাঠি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রক্তিম কুমার ঘরামী বলেন, স্বরূপকাঠির ২ হাজার পরিবার পেয়ারা চাষে জড়িত। এছাড়া বরিশালের বানারীপাড়া ও ঝালকাঠির বেশ কিছু এলাকার লোক পেয়ারা চাষে জড়িত।

উপজেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, বর্তমানে স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রায় ৬ শ ৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২৫টির মতো বাগান রয়েছে। এ বাগানে প্রতি বছরই পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এতোদিন প্রতিমণ পেয়ারা দেড় শ থেকে দুই শ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। চাষিরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের মাধ্যমে যাত্রীবাহী লঞ্চে বা ট্রলারে করে পেয়ারা ঢাকা পাঠাতেন। এতে যেমন সময় লাগতো ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা, তেমনি তরতাজা ফলটিও অনেক সময় পেকে যেতো বা পচে যেতো। এখন পদ্মা সেতুর কারণে সড়ক পথেই চাষিরা সরাসরি দ্রুত পচনশীল এ পণ্যটি ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন। সড়ক পথে তাদের খরচও কম হচ্ছে।

স্বরূপকাঠির কুড়িআনা এলাকার কালীপদ হালদার জানান, বাগান করার তিন বছরের মধ্যে আমড়ার ফলন পাওয়া যায়। একনাগারে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত আমড়ার উৎপাদন হয়। প্রতিমণ আমড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। যাত্রীবাহী লঞ্চ অথবা সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় পণ্যটি। এতে চাষিরা বেশি লাভবান হতে পারতেন না। এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় আমড়া অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠানো যাবে ঢাকায়। চাষিরা নিজেরাই আমড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে বড় বাজারগুলোতে বিক্রি করতে পারবেন। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না। লাভও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। বর্ষা মৌসুমে এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু ও কলা ট্রাক বা ট্রলারযোগে ঢাকা পৌঁছাতে ১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেয়ারা পেকে যেতো, অনেক সময় পচেও যেতো। আর আমড়াও পেকে যেতো। ফলে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতা উভয়েই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

কুরিয়ানা ইউনিয়নের জিন্দাকাঠী এলাকার পেয়ারা চাষি দিলীপ মজুমদার জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করেছেন। গত বারের চেয়ে এবারের ফলন ভালো কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পেয়ারার সাইজ ছোটো হয়েছে।

স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী তাপস বড়ালের বাড়ি উপজেলার মাহামুদকাঠী এলাকায়। বাগান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকায় পাঠান তিনি। প্রায় ২০ বছর ধরে পেয়ারা, আমড়ার মৌসুমে এ কাজটি করছেন তিনি। ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। প্রতিবছর এই মৌসুমে ঢাকায় পেয়ারা পাঠাতে গিয়ে পদ্মার এপারে ঘাটে ট্রাক বোঝাই পেয়ারা আটকা পড়ে পচে যায়।গত মৌসুমে ৭ থেকে ৮ ট্রাক পেয়ারা আটকা পড়ে পচে গেছে। একারণে লোকসান গুনতে হয়েছে’— জানান তাপস বড়াল। এরপর তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৭ ট্রাক পেয়ারা ঢাকায় পাঠিয়েছি। সব পেয়ারাই তাজা অবস্থায় পাঠানো গেছে। এখন আর পচার ভয় নেই।

স্বরূপকাঠি উপজেলার কুরিয়ানা ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ টাটকা পেয়ারা খেতে পারবে। মানুষজন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া সহজেই পেয়ারা বাগানে ঘুরতে আসতে পারবে। তিনি বলেন, পেয়ারার মৌসুমে পদ্মা থাকে উত্তাল। অনেকেই ভয়ে আসতে চাইতেন না। সরাসরি সড়ক পথে আসার সুযোগ হওয়ায় পর্যটকদের সেই ভয় এখন আর নেই। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সময়ে পেয়ারা বাগানে ঘুরতে এসেছেন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, ভারতের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।