বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩১ অপরাহ্ন
মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ও ভয়ংকর ছোবল দেশের সবাইকেই উদ্বিগ্ন করেছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী, তারা অন্ধকার পথ হারিয়েছে।
দায়ের হওয়া সিংহভাগ মাদক মামলার শেষ গন্তব্য ও ক্রেতা-বিক্রেতার নাম থাকছে অজানা। তদন্তকারী সংস্থাও টিকিটি খুঁজে পাবে না তাদের।
ফলে বহনকারীকে একমাত্র আসামি করে দেওয়া হয় বেশির ভাগ মামলার চার্জশিট। তবে মাদক মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থার দাবি, আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে মাদক মামলায় পজিশনের (ব্যক্তি ও যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়) ভিত্তিতে আসামি করা হয়।
পজিশনের বাইরে কাউকে আসামি করতে গেলে তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বহনকারীও দেয় না চালানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। তাই বেশির ভাগ মামলায় শুধু বহনকারীকে আসামি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন মাদক চক্রের হোতারা পরিবহনের সময় কিছু কৌশল অবলম্বন করছে। মাদকের চালান বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রেতা পর্যন্ত পৌছতে একাধিক হাত বদল হয়।
ফলে চালান আটক হলেও কিছু মামলার তদন্তে চালানের চূড়ান্ত গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়া যায় না। তাই ওইসব মামলার চার্জশিটে ক্রেতার নাম ও শেষ গন্তব্য উল্লেখ করা যায় না।
ফল মূল ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করা যায় না। মাদকের ভয়ংকর নেশা দেশের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণ সমাজে ইয়াবা আসক্তি বাড়ছে।
সারা দেশে যেভাবে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর পরিচালিত মাদক বিরোধী অভিযান কক্সবাজারসহ সারা দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে সরকারকে। অবাক ব্যাপার, দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় কোটি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক।
এই ৮০ শতাংশের মধ্যে আবার ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত, ৪০ শতাংশ নিরক্ষর। কী ভয়ানক মাদকের ছোবল। মাদকের এই ছোবল থেকে বের হয়ে আসতে হলে পরিবারের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে হবে। পরিবার সচেতন হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আক্রান্তদের অধিকাংশই ইয়াবা সেবন করে, এরপর আছে হেরোইন। এখন আইসবার এসেছে।
এসব মাদকের কারবার লাভজনক হওয়ায় যুব সমাজ ঝুঁকে পড়ছে। আশার কথা, সরকার ডোপ টেস্টের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। ব্যাপকভাবে ডোপ টেস্ট করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জাতি বিধ্বংসী এ মাদক থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯০ সালের ২০নং আইন) প্রণীত হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কল্পে ওই আইন-১৯৯০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। এরপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়নি দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়েও। মাদক কারবারিরা মাদক পাচারের কৌশল পাল্টায় ঘন ঘন।
মোটর সাইকেল, ট্রাক, বাস, প্রাইভেট গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স নিত্য পণ্য পরিবহণের গাড়িতে করে চোরাকারবারিরা ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন প্রভৃতি মাদকদ্রব্য আনছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে।
শোনা যায়, রাজধানীতে বিভিন্ন গোপন নকল ইয়াবার কারখানা গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। রাতারাতি বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার মোহে করোনা আক্রান্ত দেশে হায়েনার চাইতেও ভয়াবহ এসব কুখ্যাত অপরাধীর হাত থেকে সমাজ ও দেশকে রক্ষা করতে হলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি।