রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে তোলা প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দিক-নির্দেশনা না থাকায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সাধারণ জনগণের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে ১১৯টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। বেলারুশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান, লাওস, থাইল্যান্ড, রাশিয়াসহ ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে ওই ভোটাভুটির পরদিন শনিবার ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা শুক্রবার সাধারণ পরিষদে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল যে কারণ, তা স্বীকার করে না নিলে এবং তার সমাধানে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা না হলে মিয়ানমার বিষয়ে যে কোনো প্রস্তাব ‘অসম্পূর্ণ’ থেকে যাবে। রাবাব ফাতিমা বলেন, ২০১৭ সালে যে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হল, তারপরও সঙ্কটের মূল কারণগুলো স্বীকার করে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতায় মিয়ানমারে এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে; এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।
২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে হামলা হয়। হামলার সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা জড়িত দাবি করে মিয়ানমারের সেনারা সন্ত্রাসী দমনের নামে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ঘিরে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। এরপর প্রাণভরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসেন রোহিঙ্গারা। পালিয়ে আসা আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় উখিয়া-টেকনাফে। এর আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাসহ সবমিলিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। প্রায় ১৬ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে একটি নতুন সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারেনি।
সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে তোলা প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি যথাযথভাবে না আসায় হতাশা প্রকাশ করে ভোটদানে বিরত থাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কেন ভোটদানে বিরত থাকল, সেই ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য কোনো সুপারিশ কিংবা পদক্ষেপের কথা ওই প্রস্তাবে রাখা হয়নি। এমনকি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন, সে বিষয়েও কিছু বলার বা জোর দেওয়ার কোনো চেষ্টা ওই প্রস্তাবে ছিল না। সামগ্রিক বিবেচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের যে মূল কারণ, তা স্বীকার করে নিতে আগ্রহের ঘাটতি ছিল ওই প্রস্তাবে।