মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: কুলাউড়া উপজেলার লুহাইউনি চা-বাগানের এক শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতির ঘটনায় গত ৪ দিন থেকে বাগানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় ২২ জুন মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মতে শ্রমিকরা বে-আইনীভাবে ধর্মঘট পালন করায় বাগানের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এতে শত শত শ্রমিকরা গত চার দিন থেকে দৈনিক হাজিরা ও রেশন থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগানের মণ্ডপে মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাগানের ফ্যাক্টরি ও অফিসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হা-মিম গ্রুপের মালিকাধিন লুহাউনি চা-বাগানে শত শত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগান কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন ও মানববন্ধন করছেন।
জানা যায়, লুহাইউনি চা-বাগানের শ্রমিক যোগালী সর্দার শ্যামল পাশীকে তার ক্ষেতের জমি বাগান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় গত ২২ মে তাকে ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে সহকারী ব্যবস্থাপক নজরুল ও বাগানের চৌকিদার সাধুর নেতৃত্বে কিছু শ্রমিক অভিযান চালায়। ওই দিন তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই শ্যামল পাশীকে বাংলাদেশ লেবার অ্যাক্ট এর ২৬ (ক) ধারায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় বাগান কতৃপক্ষ। শ্রমিক শ্যামল পাশীকে চাকরিতে বহাল রাখার দাবীতে বাগান পঞ্চায়েত গত ৯ জুন বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করে। এছাড়াও ১৪ জুন বাগানের মহাব্যবস্থাপক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন পঞ্চায়েতসহ বাগানের শ্রমিকরা। তখন ৫ দিনের মধ্যে প্রতিকার না পেলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এতে মালিক পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা (২২ জুন) মঙ্গলবার অফিসের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বাগানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। দিনভর অবরুদ্ধ থাকার পর রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এরপর বুধবার সকাল থেকে বাগানের প্রধান ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বাগানের কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিত কৈরি জানান, ২২ জুন মঙ্গলবার শ্রমিকরা শ্যামল পাশীকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদ শুরু করলে ২৫ জুন শুক্রবার পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহ রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বুধবার শ্রমিকরা কাজে যেতে চাইলে লাইন চৌকিদার এসে জানায় বাগানের সাহেব (জিএম) কাজ বন্ধ করেছেন। এ সময় বাগান কর্তৃপক্ষ অফিসে অবস্থান করছিলেন। বাগানের এলাকার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সত্য নারায়নের নেতৃত্বে ১৩ জনের একটি প্রতিনিধিদল জিএম মাহবুব আলীর সঙ্গে দেখা করেন। জিএম তাদের জানান বাগান মালিক পক্ষের নির্দেশে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। টানা ৪দিন শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত শ্যামল পাশীকে চাকরিতে পুনর্বহালসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বাগান মণ্ডপে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি জেসমিন আক্তার,লংলা ভ্যালি ক্লাবের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী ।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবি ভূমিজ জানান, সার্থে আঘাত পড়ায় কিছু শ্রমিকরা সম্পূর্ন অবৈধভাবে আন্দোলন করছে। বাগানের ক্ষতি করে কোনো আন্দোলন করলে তা সফল হয় না। তবে শীঘ্রই বাগান চালুর দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে লোহাইউনি চা বাগানের (জিএম) মাহবুব আলী ২৫ জুন মুঠোফোনে বলেন,শ্রমিক শ্যামল পাশী দীর্ঘদিন থেকে বাগানের মসজিদের পাশে কিছু জায়গা দখল করে রেখেছিলো। মালিক পক্ষ চাচ্ছিলো সেই জায়গাটি মসজিদের সাথে একত্রিত করে একটি ঈদগাহ নির্মাণ করতে। এজন্য শ্যামলকে কিছু টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু শ্যামল মালিকপক্ষের কথা অমান্য করে জোরপূর্বক মসজিদের পাশে সেই জায়গায় অবৈধভাবে গাছ লাগানো এবং ঘর নির্মাণ শুরু করে। যদিও তার বাড়ি-ঘর পাশেই আরেকটি রয়েছে। কতৃপক্ষের কথা অমান্য করায় তাকে বাগানের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘটনায় বাগানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিষয়টি নিরশনের লক্ষ্যে আগামী ২৮ জুন সোমবার শ্রমিক ও বাগান কতৃপক্ষদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্টিত হবে।