শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় হামলা, পিটিয়ে জখম, বসতঘর ভাংচুর, গরু-ছাগল, দোকানের ক্যাশ ও দান বাক্স লুটের গঠনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছে নির্যাতিত চা শ্রমিক পরিবার। রোববার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির শমশেরনগরস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান কাজল হাজরা। গত ২৮ মে রাত ৯টায় কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া চা-বাগানে চা শ্রমিকের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
লিখিত বক্তব্যে কাজল হাজরা বলেন, দফায় দফায় বাড়িঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জখম ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা দেয়ার পর আজ পর্যন্ত লুটপাটকৃত গবাদি পশু ও অর্থ উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্ত বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন যাবত বাগানের প্ল্যান্টেশন এলাকায় কাঁচা পাতা ও ছায়াবৃক্ষ চুরি করছিল। এই সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে বাগান কর্তৃপক্ষেরও অশুভ আতাঁত রয়েছে। গত ২৮ মে বিকেলে সুনছড়া চা বাগানের বস্তি সংলগ্ন ১০ নম্বর সেকশনের প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে এই চক্র কাঁচা পাতা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। কিছু শ্রমিক তা দেখে বাগানের হেড ক্লার্ক গোপাল চক্রবর্তীকে অবগত করে। গোপাল চক্রবর্তী সংবাদ প্রদানকারী শ্রমিকের নাম চুরদের জানিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আলীনগর ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামের মঈনুল আহমেদ গংরা রাত ৯ টায় সুনছড়া চা-বাগান বাজারে চা-শ্রমিক হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েককে বেঁধে নির্যাতন করে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে শ্রমিকরা হেড টিলাক্লার্ক এর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি শ্রমিকদের সাথে দেখা করেননি। পরে শ্রমিকরা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় গেলে তিনিও শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাত করেননি। এরপর পরই মঈনুল আহমদের নেতৃত্বে চা পাতা চোরদল আমাদের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় চা-শ্রমিক হরিনারায়ন হাজরা, স্বপন নায়েক রক্তাক্ত জখম ও কানাইলাল হাজরাসহ অনেকে আহত হন। সন্ত্রাসীরা ঘরে হামলা, ভাংচুর করে ধারালো দা দিয়ে আমাকে খুটির সাথে আটকিয়ে হত্যার হুমকি দেয় এবং হরিনারায়ন হাজরার স্ত্রীকেও মারধোর করে। এই সময় সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে ৭টি গরু, ৫টি ছাগল, পাশে দোকানের ক্যাশ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও একটি দান বাক্স লুট করে নিয়ে যায়। এরপর সন্ত্রাসীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখলে রাতে আহতদের পুলিশি সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ত্রাসীদের নানারকম হুমকিতে হাসপাতলে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েককে হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়।
রাজকুমারী আরও বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শ্রমিকদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। উপরন্তু বহিরাগতদের দ্বারা বাংলোর ফুলের টব ভাংচুরের ঘটনায় হরিনারায়ন হাজরা ও তার ভাইসহ চা শ্রমিক স্বপন নায়েক, মিলন নায়েকসহ ৭ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এরপর চা বাগান কর্তৃপক্ষ হরিনারায়ন হাজরা, স্বপন নায়েক, মিলন নায়েক ও রাজকুমার ভ‚ইয়া-এই ৪ জন শ্রমিককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছে। লুটপাটকৃত গবাদি পশু উদ্ধারে পৃথক মামলা দেয়ার পর পুলিশ সুপারের তাগাদা সত্তে¡ও পুলিশ আমাদের গরু উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। চা-বাগানে অনেক বেকার শ্রমিক থাকার পরও ম্যানেজার তাঁর পছন্দের বহিরাগত ৮ জনকে বাগানে চৌকিদারের কাজে নিয়োগ করেছেন। মূলত বাগান কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম, চা পাতা ও ছায়াবৃক্ষ চুরি, শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে নিরীহ শ্রমিকদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চা-শিল্প রক্ষা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে অবিলম্বে চা-বাগানের কাঁচা পাতা ও ছায়াবৃক্ষ চুরি বন্ধ, শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বাড়িঘরে ভাংচুর, গবাদি পশু ও অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ এবং লুটপাটকৃত গবাদি পশু ও অর্থ উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এসময় নির্যাতিত হরিনারায়ন হাজরা, রাজকুমারী হাজরা, সুমিত্রা নায়েক, ম্বপন নায়েক, কানাই লাল হাজরাসহ চা শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে গরু উদ্ধারের বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলাম। চেয়ারম্যান সাহেব নির্যাতিত শ্রমিকদের আসতে বললে তারা আসেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মহাদেব বাচাল জানান, হাতে কাগজপত্র সম্প্রতি পেয়েছি। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।