1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

অক্সিজেনের তীব্র সংকটের শঙ্কা

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১
  • ২৬৫ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: দেশে করোনাভাইরসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সংকট এড়াতে করোনার বিস্তার কমিয়ে আনার ওপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশে যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন হয় এটা দিয়ে এখন অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তবে করোনা রোগী বেড়ে গেলে অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে। প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ার সময় ভারতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা গেছে। দেশে যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে ব্যাপারে সরকার আগে থেকেই সর্তক অবস্থায় রয়েছে। চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর থেকেই ও পরিস্থিতি অবনতির দিকে। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলার হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিশেষায়িত সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে আইসিইউতে থাকা চার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, দেশে হাসপাতালে অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন। এপ্রিলে সংক্রমণ বেশি হওয়ায় তখন দৈনিক চাহিদা ছিল প্রায় ১৯০ টন। বর্তমানে হাসপাতালের জন্য ১৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের সরবরাহ নিচ্ছে সরকার। দেশে বাণিজ্যিক কাজের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন তৈরি করে। সরকার চিকিৎসার জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে। তবে সংক্রমণ বাড়লে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে। চাহিদা বাড়লে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকেও অক্সিজেন আমদানি করা হয়। তবে ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি সময়সাপেক্ষ। গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মাঝে মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ওঠানামা করলেও গেল জুন মাসে ভয়াবহ রুপ নেয় করোনা। এই মাসে চারদিনের ব্যবধানে করোনায় একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং একদিনের সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল দেশে মহামারীকালের সর্বোচ্চ ১৪৩ মৃত্যুর রেকর্ড হয়। সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলে দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে চাহিদা বেড়েছে অক্সিজেনের। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার হাসপাতালগুলোতে এই চাহিদা বেশি। পরিস্থিতি এখন যেমন আছে, কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামলানো কষ্টকর হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে তা পূরণে জটিলতা তৈরি হবে। চাইলে অক্সিজেনের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো সহজ নয়। এটি সময়সাপেক্ষ আবার বিপুল অর্থেরও বিষয় আছে। দেশে হাসপাতালগুলোর ৯০ শতাংশ অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে লিনডে বিডি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সাইকা মাজেদ গণমাধ্যমকে বলেন, অক্সিজেনের চাহিদা অবশ্যই আগের চেয়ে বেড়েছে। গোটা বাংলাদেশে না হলেও সীমান্ত এলাকা থেকে অক্সিজেনের চাহিদা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। চাহিদা বেড়েছে রাজধানী ঢাকাতেও। তবে আমরা যা উৎপাদন করি, তাতে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। লিনডে বিডির কারখানায় দৈনিক ১১০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন হয়। এই মুহূর্তে চিকিৎসাকাজে তারা ৮০ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করছে। চাহিদা বাড়লে শিল্পকারখানার অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমদের আলোচনা হচ্ছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাইন বিল্লাহ জানান, বর্তমানে তারা দৈনিক ৪০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারেন। এর মধ্যে ২৫ মেট্রিক টন হাসপাতালে দিচ্ছেন। তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহ ধরে অক্সিজেনের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে আগের দামেই অক্সিজেন সরবরাহ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও এপ্রিলের মতো পরিস্থিত তৈরি হয়নি। অক্সিজেন উৎপাদনকারী অপর প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের অক্সিজেন প্ল্যান্ট। তারা জানায়, প্রতিদিন ২০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে ২০ টন তারা হাসপাতালে সরবরাহ করছে। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার যেন তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, অক্সিজেনের চাহিদা নিশ্চিত করতে একটি পরিকল্পনা দরকার। আগামী এক মাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন লাগতে পারে, এর জোগান কীভাবে হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আরো বেশি জোর দিতে হবে সংক্রমণ প্রতিরোধে। লকডাউন শিথিল করে বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের সেই সংকটে পড়তে হবে না। প্রায় তিন সপ্তাহের লকডাউনে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, লকডাউনের পর দুই বা তিন সপ্তাহের মাথায় মূল চিত্র ফুটে ওঠে। সেই বিবেচনায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশ্যই আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে আশা করছি, সংক্রমণের হার অনেক কমে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে না নেওয়া এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অতিমাত্রার সংক্রমণ প্রবণতার কারণেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না রোগটিকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে ২১ হাজার ৬২৯ রোগী শনাক্ত হলেও ফেব্রুয়ারিতে রোগী কমে হয় ১১ হাজার ৭৭ জন। কিন্তু মার্চ থেকে ক্রমাগত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিলে এক লাখ তিন হাজার ৯৫৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর জুনে শনাক্ত হন এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন। তিনি বলেন, কেবল গাড়ি বন্ধ করে করোনার সংক্রমণকে রোখা যাবে না, ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছেই। সংক্রমণ রুখতে বেশি বেশি টেস্টের কোনও বিকল্প নেই। টেস্ট করে যিনি পজিটিভ হবেন তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে, যে পরিবারের সদস্য তিনি সে পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। গ্রাম-উপজেলা-জেলা-রাজধানী কোথাও আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে না। এ কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আরসালান বলেন, যেভাবে করোনা প্রতিরোধ করার প্রয়োজন ছিল, সেভাবে পারিনি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশে ঢুকে যাওয়ার পর আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব বিধিবিধান মানা প্রয়োজন বা মানানো প্রয়োজন ছিল, সেসব বিধিনিষেধ সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হইনি অথবা মানুষ আমাদের কথা কানেই নেয়নি। এই অবস্থার কারণেই সংক্রমণ এত বড়ছে। তিনি বলেন, দ্রুত সংক্রমণ বাড়ার কারণ হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এটি অতি উচ্চ সংক্রমণশীল। অথচ এটাকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পারিনি। এবারো লকডাউনের ঘোষণায় সেই আগের চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। মানুষ স্রোতের মতো ঢাকা ছাড়ছে, সেখানে কারো মুখে মাস্ক নেই, স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এসব যদি আগামী কয়েকদিন চলতে থাকে এবং তার সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে, তাহলে সংক্রমণের গতি আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে, বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যাও।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..