শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : বড়লেখায় ঘুমন্ত স্ত্রী রহিমা বেগমের (২৪) গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে স্বামী শিপন আহমদ। সোমবার বিকেলে বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে ১৬৪ ধারায় সে জবানবন্দি দিয়েছে।
জবানবন্দিতে শিপন আদালতকে জানিয়েছে, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে তার ঝগড়া হতো। এতে তিনি তাকে মারধর করতেন। এ কারণে ৭ মাস আগে রহিমা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রামে চলে যায়। সন্তানকে দেখতে তিনি প্রায়ই শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। শনিবার রাতে তিনি তার সন্তানকে দেখতে শ্বশুর বাড়িতে যান। পরে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। রোববার ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে তিনি পালিয়ে যান। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত শিপনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
থানার ওসি (তদন্ত) রতন দেবনাথ সোমবার সন্ধ্যায় জানান, আদালতে রহিমার স্বামী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী কারণে স্ত্রী রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন, সেসব বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে পুুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়।
এদিকে অগ্নিদগ্ধ রহিমা বেগমকে রোববার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তার ভাই রাজু আহমদ। তিনি আরো জানান, আমার বোনের অবস্থা খুব খারাপ। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন তার হাত-মুখসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে।
জানা গেছে, স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন গৃহবধূ রহিমা বেগম (২০)। রোববার (০৪ জুলাই) ভোররাতে বাবার বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তার স্বামী শিপন আহমদ। ঘটনার পরই তিনি পালিয়ে যান। এতে রহিমার হাত-মুখসহ শরীরের প্রায় ৬৩ শতাংশ পুড়ে যায়। রহিমার চিৎকার শুনে স্বজনরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। রহিমা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির হরিপুর গ্রামে রফিক উদ্দিনের মেয়ে।
ঘটনার দিনই রহিমার ভাই রাজু আহমদ বাদী হয়ে বোন জামাই শিপন আহমদসহ তিনজনের নামোল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ওইদিন বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে শিপনকে এবং বিকেলে রহিমার শ্বাশুড়ি আনুরি বেগমকে গ্রেপ্তার করে। শিপন আহমদ উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে।