রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১১ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে আইসিইউ সংকটের পর এখন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে রোগীর চাপ অতিরিক্ত বাড়লেও প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় বড় ধরণের অক্সিজেন সংকটের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, জটিল করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন খরচ হচ্ছে বেশি। আবার অনেক সময় বেশি খরচ হওয়ার কারণে প্ল্যান্টগুলো প্রেশার নিতে পারছে না। সব মিলিয়ে হয়তো বড় অক্সিজেন সংকটে পড়তে যাচ্ছে সিলেট।
তিনি বলেন, শামসুদ্দিনে ১০ হাজার লিটার ও ওসমানীতে ৩০ হাজার লিটারের নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট থাকলেও নিয়মিত অক্সিজেনের যোগান মিলছে না। দেশের অন্যান্য জায়গায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত দুটি কোম্পানি নিজস্ব পরিবহনের স্বল্পতা দেখিয়ে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ করছে না। এ সমস্যা নিরসনে অক্সিজেন সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ইতোমধ্যে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের শংকাও দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ বুধবার এক দিনে সিলেট বিভাগে রেকর্ড ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার রেকর্ড ৩৮৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ। তবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৯৬৯ টি। এমনকি এ সময়ে হাসপাতালে নতুন করে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন ৩৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভাগীয় কার্যালয় সিলেট সূত্র জানায়- সিলেট বিভাগের এক কোটির অধিক মানুষের জন্য সকল সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যা মিলে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৪৪৮টি। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসের জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড সিলেটের ডা. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেডসহ ১০০টি, এছাড়া খাদিম শাহপরান হাসপাতালে ৩১, দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১০০, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ৬ টি আইসিইউ শয্যা মিলে ৫৬ টি এবং রাজনগরে হাসপাতালে ৩০ টি। তবে এসব হাসপাতালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে কেবল শামসুদ্দিন হাসপাতালে।
সে ক্ষেত্রে বর্তমানে চাহিদার সাথে শয্যার একদম সমন্বয় থাকলেও আর মাত্র ১০ জন রোগী বাড়লেই সংকট দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড ডা. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৈয়দ নাফি মাহদি।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যা সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। কোন শয্যা খালি নেই। তবে প্রতিদিন আমাদের এখান থেকে ৭ থেকে ৭ জন ছাড়া পাচ্ছেন। এদের বিপরীতে আবার ভর্তিও হচ্ছেন। আর করোনা সন্দেহ যারা শারীরিক সমস্যায় বেশি ভুগছেন তারা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাই এখনো শয্যা না থাকায় কেউ খুব সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু এক সাথে যদি ১০ জন রোগী বাড়ে তাহলে সংকট হয়ে যাবে। ভর্তি করা যাবে না।
এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণের সংকটকালিন সময়েও কাজে লাগছেন না সিলেটের একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ হাসপাতালকে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করার কথা থাকলেও এখন এটি আগের মতই আছে। এমনকি বাড়ানো হচ্ছে না কোন সাধারণ শয্যাও। কেবল তাই না, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০০ শয্যার নতুন করোনা ডেডিকেটেড ইউনিট চালুর সংবাদ দিলেও এখন বাজেট না থাকায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।
তবে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীমের দাবি, শামসুদ্দিন হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকলেও অন্যান্য হাসপাতালে এখনো কয়েকটি শয্যা খালি আছে। কিন্তু যে ভাবে করোনা বাড়ছে তাতে শয্যা বাড়িয়েও কোন কাজে আসবে না যদি মানুষ সচেতন না হয়।
সে ক্ষেত্রে সংকট মোকাবেলায় কোন প্রস্তুতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
অপরদিকে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তারা ব্যবস্থা নিবে।’
তবে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো না গেলেও গেলো এক বছরেও সাধারণ বারাতে না পারাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আ ফ ম নাজমুল।
তিনি বলেন, আইসিইউ চাইলেই বাড়ানো যায় না এটা সত্য। কিন্তু বিগত এক বছর থেকে অন্তত চাইলে সাধারণ শয্যাটা বাড়ানো যেতো। এমনকি গুরুত্ব বিবেচনায় অক্সিজেন সরবরাহ থাকত। কিন্তু তা না করতে পারাটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বড় ব্যার্থতা।