রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে বসবাসকারী গারো ও খাসিয়াদের চলাচলের রাস্তায় আবারো বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এরআগেও গত বছরের মার্চ মাসে ঠিক একইভাবে বাঁধা দেয়া হয়েছিল পুঞ্জির লোকদের। সম্প্রতি আবারো বাগানের নিয়োগকৃত পাহারাদাররা পুঞ্জির লোকদের চলাচলে বাঁধা দিচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নে রেহেনা চা-বাগান ও কাঁকড়াছড়া পুঞ্জি অবস্থিত। পুঞ্জিতে খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের ২১টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। ওই পরিবারের সদস্যরা পান চাষ ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুঞ্জির পাশ ঘেঁষে রয়েছে চা-বাগান। পুঞ্জির বাসিন্দারা বাগানের ইজারাভুক্ত টিলাভূমির ১৪ ও ১৩ নম্বর সেকশনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করে। পুঞ্জির লোকজন তাদের চলাচলের সুবিধার্থে গত বছরের মার্চ মাসে কাঁচা রাস্তাটি সংস্কার করে। কিন্তু বাগানের লোকজন ওই রাস্তায় চা গাছের চারা রোপণ করে। ওইসময় রাস্তা দিয়ে প্রবেশের চেষ্টাকালে পুঞ্জির বাসিন্দাদের বাঁধা দেয় বাগানের লোকজন। একপর্যায়ে উত্তেজনা দেখা দিলে দুইপক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকে। পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান সরেজমিনে পুঞ্জি ও বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠক করে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে দুই পক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে পুঞ্জির লোকজন ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। কিন্তু সম্প্রতি আবারো বাগানের পক্ষ থেকে ওই রাস্তায় চলাচল করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পুঞ্জির হেডম্যান জনপল চিশিম। পুঞ্জির হেডম্যান জনপল চিশিম জানান, গতবছরও ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে বাঁধা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর আমরা নিয়মিত যাতায়াত করি। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, বাগানের অভ্যন্তরে কারখানার পাশের রাস্তা দিয়ে যেন আমরা চলাচল করি। বাগানের ভেতরে কয়েকটি ফটক রয়েছে। অনেক সময় রাতে অসুস্থ রোগী নিয়ে সেই ফটক অতিক্রম করে যেতে হলে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। পুঞ্জির বাসিন্দা মিল্টন রকো বলেন, পুঞ্জির লোকদের চলাচলের রাস্তায় আবারো বাঁধা দিল রেহানা বাগান কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালেও চলাচলে বাঁধা দিলে বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধান না হওয়ায় পুঞ্জির লোকজন বার বার বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাগানের পাহারাদার কাদির মিয়া, মানিক মিয়া, সহিত আলী, আলিম, সাজিদ আমাদের চলাচলে বাঁধা দেয়। পুঞ্জির ১০২ বছরের বৃদ্ধাসহ অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না। পুঞ্জির প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীও এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রশাসনসহ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অচিরেই যেন আমাদের চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। রেহানা চা-বাগান ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘বাগানের ১৪ নম্বর সেকশনের রাস্তাটি বাগানের নিজস্ব রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে শুধু বাগানের শ্রমিকরা চা পাতা সংগ্রহ করে। পুঞ্জির লোকজনকে আগেই বলা হয়েছে, তারা আগে যেভাবে বাগানের কারখানার পেছনের রাস্তা ব্যবহার করে আসছিল এখন যেন সেই রাস্তা ব্যবহার করে। বাগানের পক্ষ থেকে ওই রাস্তাটি মেরামতও করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটি না করে ১৪ নম্বর সেকশনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। তাছাড়া চা গাছের অনেক চারাও তারা নষ্ট করেছে। তাই আমরা সেখানে চা গাছের নতুন চারা লাগিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, বাঁধা প্রদানের বিষয়টি জেনেছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও দুইপক্ষকে নিয়ে বসে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করা হবে।