মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : সাত শতাধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান ৫ আগস্ট পূর্ণাঙ্গতা পায়। স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ফলে বাংলাদেশ পায় একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলন। ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংকট ও সমস্যায় ছাত্ররা এগিয়ে এসেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয় এই তরুণরা। বিপ্লবের দ্বিতীয় মাস চলছে। বাংলাদেশকে নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে যায়যায়দিন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এম সাইফুল।
প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে শিবিরের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি-না?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : দেখুন এটি একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ আন্দোলন। শুরু থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি যে আমরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যদি কেউ তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে, সেটি নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। আমরা কাউকে কোনো দলের প্রতিনিধি হিসেবে নেইনি। তাই এই বিষয় নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতেও চাই না।
প্রশ্ন: আপনাদের কি রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা আছে?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : আপাতত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বা পরোক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়টি আগেও আমাদের একাধিক সমন্বয়ক স্পষ্ট করেছেন। এই মুহ‚র্তে আমরা ছাত্রদের পক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই। তবে ভবিষ্যতে কী হবে সেটি সময়ই বলে দেবে। পরবর্তীতে যদি এমন কোনো প্রয়োজন হয় তখন সিদ্ধান্ত হবে। তবে এই মুহ‚র্তে নিশ্চিত করেই বলছি দল গঠন হবে না।
প্রশ্ন: ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের সম্পর্ক কী? এটি কি পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : ভবিষ্যতে কী হবে সেটি এই মুহ‚র্তে বলা সম্ভব নয়। সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম না। এটি ছাত্রদের সঙ্গে সিনিয়র বা পেশাজীবীদের লিয়াজোঁ কমিটি হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সবাই তরুণ পেশাজীবী। তারা সমাজে ইতিবাচক জনমত গঠনের জন্য কাজ করবেন। তবে ভবিষ্যতে যদি জনগণ চায় তাহলে সেটি ভবিষ্যতেই ভাবা হবে।
প্রশ্ন: ছাত্ররা কি ক্লাসে মনোযোগী হবে নাকি রাজপথে থাকবে?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : ছাত্ররা অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসে ফিরে গিয়েছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়নি তা পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে। বিগত সরকারের আমলেও আমরা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবেন। ছাত্রদের আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। যেমন ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরপরই তারা বিচার বিভাগীয় ক্যু ঠেকিয়ে দিয়েছেন। যখন আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করেছে তখনো তাৎক্ষণিক রাজপথে নেমে এসেছেন। আমাদের সমন্বয়করা উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে কাজ করছেন। আমরা তাদের সহযোগিতায় সবসময় পাশে থাকব। যতদিন ড. ইউনূস সরকারে থাকবে ততদিন ছাত্ররাও পাশে থাকবে।
প্রশ্ন: অভিযোগ রয়েছে সমন্বয়করা প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করছেন। ডিসি নিয়োগে কোনো চাপ ছিল?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : দেখুন এটি সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা অভিযোগ। সারাদেশে কোথাও আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রশাসনে নিয়োগ বা পদায়নের জন্য হস্তক্ষেপ করেছেন। যেমন অনেকে সমন্বয়ক নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদা চেয়েছে। এমন অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। এখন আপনি যদি বলেন কেউ নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে তাহলে সেখানে আমাদের কী করণীয় আছে। আমরা তো চাঁদা চাই না। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে আপনারা আমাদের বা পুলিশকে জানান। আইনের হাতে তুলে দেন। অথবা আমাদের জানান আমরা ব্যবস্থা নেব।
প্রশ্ন: বন্যার্তদের ত্রাণের টাকা অ্যাকাউন্টে কেন রয়ে গেল? ত্রাণের টাকা তছরুপের অভিযোগ কি সত্য?
হাসনাত আব্দুল্লাহ: এটি আওয়ামী লীগ ও তাদের এজেন্ট সিআরআইএর মিথ্যা প্রচারণা। ত্রাণের প্রতিটি টাকার হিসাব দেওয়া হবে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রয়েছে। এসব অর্থের সঠিক হিসাব দিতে ইতোমধ্যেই অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। আর এ টাকা তছরুপ করার প্রশ্নই আসে না। বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য এ অর্থ খরচ করা হবে। আমাদের যদি টাকার লোভ থাকতো তাহলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই অনেক অফার ছিল। তখন টাকার লোভ করিনি। আর এখন ত্রাণের টাকায় হাত দেব? যে টাকার আপডেট প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পরপর আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছি। সারাদেশের মানুষ যে টাকার দিকে চেয়ে আছে। সেই টাকা আমরা অপব্যয় করব না। এ বিষয়ে আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। এ ধরনের অপপ্রচারে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
প্রশ্ন: আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য ডোনেশনের টাকা কীভাবে খরচ করছেন?
হাসনাত আব্দুল্লাহ: নিহত বা আহতদের জন্য আমরা সরাসরি কোনো তহবিল সংগ্রহ করিনি। যদি কেউ কোনো নিহতের পরিবার বা আহত কাউকে সহযোগিতা করতে চান, আমরা মধ্যস্থতা করে সরাসরি তাদের দিয়ে দেই। অনেক সময় হয়তো চেক হস্তান্তর বা ডোনেশন দেওয়ার সময় সমন্বয়কদের দেখে থাকবেন। কিন্তু আমরা সে টাকা হাতে নেই না। সরাসরি সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে পৌঁছে দেই।
প্রশ্ন: জনশ্রুতি আছে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমঝোতা হয়েছে? আপনাদের নাকি আগামী সংসদে বিরোধী দল হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে?
হাসনাত আব্দুল্লাহ : এটিও আমি মনে করি একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।