মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অনিয়ম ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে একটি মহিলা মাদ্রাসার সাইনবোর্ড থেকে ভূমি দাতার নাম অপসারণের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। এদিকে মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে দাতা মরহুম ইয়াকুব আলীর নাম সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁর উত্তরাধিকারী। এ ঘটনায় দাতা পরিবারের উত্তরাধিকারী মুহাম্মদ আব্দুল বাতিন বাদী হয়ে আদালত ও কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) ইসলামিক মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০২ সালে। এরআগে ১৯৮৩ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি উপজেলার পাবই মৌজায় ১৭ শতক জমি রজনপুর মক্তব পরিচালনার উদ্দেশ্য ওয়াক্ফ করে দেন পাবই গ্রামের বাসিন্দা মৃত ফজল মামুদের ছেলে মরহুম হাজী ইয়াকুব আলী। পরবর্তীতে ওই মক্তবটি স্থানীয় এলাকার মানুষের সহযোগিতায় মাদ্রাসায় পরিণত হয়। জমি দান করায় ২০০৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ওই মাদ্রাসায় দাতা হিসেবে মরহুম হাজী ইয়াকুব আলীর নাম সাইনবোর্ডে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তির সাথে কোন ধরণের পরামর্শ ছাড়াই মাদ্রাসার সাইনবোর্ড থেকে দাতা মরহুম হাজী ইয়াকুব আলীর নাম অপসারণ করেন মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় রজনপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত রিয়াজ উল্লাহ’র ছেলে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মতলিব, মৃত কলিম উল্লাহর ছেলে আমির আলী, বাহার উল্লাহ’র ছেলে তাহির আলী, মৃত ইরফান আলীর ছেলে আলমাছ মিয়া, মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুস সালামকে বিবাদী করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার আদালতে (২৫২/২০২৪ ইং স্বত্ব) মামলা দায়ের করেন দাতা সদস্য মরহুম ইয়াকুব আলীর নাতি মুহাম্মদ আব্দুল বাতিন। মামলা দায়েরের পর মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা এলাকায় বৈঠক করে ইয়াকুব আলীর নাতি মুহাম্মদ আব্দুল বাতিনের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আব্দুল বাতিনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হয়। এমনকি বিভিন্নভাবে আব্দুল বাতিনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর পাবই গ্রামের আলফু মিয়ার ছেলে আব্দুল করিম মিন্টু, রজনপুর গ্রামের জুবের হোসেনের ছেলে আউয়াল হোসেন, বাহার উল্লাহ’র ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য তাহির আলীর বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করেন কুলাউড়া থানার এসআই সুজন তালুকদার। পরবর্তীতে এই ঘটনায় গত ৬ অক্টোবর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কুলাউড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-৩০৪) দায়ের করেন ভুক্তভোগী মুহাম্মদ আব্দুল বাতিন।
এ বিষয়ে দাতা পরিবারের সদস্য মুহাম্মদ আব্দুল বাতিন বলেন, আমার দাদা মরহুম হাজী ইয়াকুব আলী পাবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০ শতক ভূমি ও হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) ইসলামিক মহিলা মাদ্রাসায় ১৭ শতক জমি দান করেন। পাশপাশি এলাকায় মসজিদ ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে অনেক জমি দান করেন। আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) মরহুম মোহাম্মদ আলী (বীরপ্রতীক) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ৩৪ বছর সুনামের সহিত চাকরি করে অবসর গ্রহন করেন। তিনি পাবই রেলগেটে “আমিনা-আলী শিশু একাডেমী” প্রতিষ্ঠা করেন। আমার পিতা ২০১৮ সালে মারা যাবার পর এলাকায় আমাদের পারিবারিক সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট করার জন্য মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরাসহ আব্দুল করিম মিন্টু ও আউয়াল হোসেন আমার পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে লোকজনকে উত্তেজিত করে। এমনকি বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশে গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমার পিতার প্রতিষ্ঠিত “আমিনা-আলী শিশু একাডেমীতে” অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করি। তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষরা আমাকে এখন নানাভাবে হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হুয়রানি করার অপতৎপরতার চেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে। সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আমাদের পারিবারিক সামাজিক মান মর্যাদা রক্ষায় হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) ইসলামিক মহিলা মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে আমার দাদার নাম দাতা হিসেবে যুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মতলিব বলেন, ‘আমি মাদ্রাসায় ১৫ শতক জমি দান করি। আর মরহুম ইয়াকুব আলী তৎকালীন সময়ে ১৭ শতক জমি স্থানীয় রজনপুর মক্তবে দান করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটি আলোচনা করে মাদ্রাসার ১৫ শতক জমি মসজিদের নামে আর মসজিদের সাড়ে ১০ শতক জমি মাদ্রাসার নামে বিনিময় দলিল করা হয়। এখন প্রতিপক্ষ বাতিন আমাদের ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে বিবাদী করে মামলা করেছেন। এখন আদালত থেকে যে রায় আসবে সেটি আমরা মেনে নিবো। তিনি আরো বলেন, অতীতে কখনো এই মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে দাতা হিসেবে ইয়াকুব আলীর নাম ছিলনা। এখন প্রতিপক্ষ বাতিন যদি মনে করেন, দাতা হিসেবে এলাকায় তার দাদার নাম যদি প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকে তাহলে সাইনবোর্ডে তাঁর দাদার নাম প্রতিস্থাপন করুক আমাদের কোন আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, স্থানীয় এলাকায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমি দান করেছেন মরহুম হাজী ইয়াকুব আলী। এলাকার উন্নয়নে ওই পরিবারের অনেক অবদান রয়েছে। একজনের ওয়াক্ফ করা জমি কিভাবে বিনিময় করা হয় সেটি আমার জানা নেই। অতীতে ওই মাদ্রাসার সাইনবোর্ড দাতা হিসেবে মরহুম ইয়াকুব আলীর নাম ছিল। বর্তমানে উনার নামটি কে বা কারা সাইনবোর্ড থেকে সরিয়েছে সেটি জানিনা। এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্টানের সুনাম রক্ষার্থে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করার চেষ্টা করবো।