1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

চাকরি ফিরে পেতে পাগলের মতো ঘুরছেন পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল করিম

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১০৯ বার পঠিত

এম এ ওয়াহিদ রুনু,কমলগঞ্জ থেকে : পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল করিম মিন্টু। পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালে। বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন এর পাবই গ্রামে। মা বাবা স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিলো আব্দুল করিম মিন্টু। হঠাৎ নেমে আসে চাকরি জীবনে ঝড়। ২০২০ সালে ফেসবুকে আইজিপির বরাত দিয়ে একটি পোস্ট কপি করে শেয়ার করেন তিনি। সেই পোস্টে লিখা ছিল ‘কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে লাশ বাড়ি যাবে না।’ এই পোস্ট দিয়েই বরখাস্ত হয়েছেন করিম। চাকরি যাওয়ার পর থেকেই আইনি ভাবে লড়ছেন করিম। এখন কিভাবে চাকরি ফিরে পাওয়া যায় সেভাবেই কোর্টের দ্বারপ্রান্তে পেতে আবেদন করছেন তিনি। এসব ক$#থা জানান এই প্রতিবেদককে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, অভাব অনটনের সংসার ছিল আব্দুল করিম মিন্টুর। ২০১২সালে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়। তখন আবেদন করেন আব্দুল করিম মিন্টু। টাকা ছাড়াই চাকরি হয় তার। পরিবারের ভাগ্য খুলে যায় তখন। সামান্য বেতন দিয়ে মা বাবা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে চলছিল তার সংসার। তবে কে জানতো হঠাৎ পরিবারের উপড় এভাবে ঝড় নেমে আসবে। ২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইজিপির বরাত দিয়ে একটি পোস্ট কপি করে শেয়ার করেন তিনি। সেই পোস্টে লিখা ছিল ‘কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে লাশ বাড়ি যাবে না।’ এই পোস্ট দিয়েই বরখাস্ত হয়েছেন করিম। এর পর থেকে মানুষের কাজ করে মা বাবাকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন করিম।

আরও জানা যায়, পুলিশের চাকরি হওয়ার আগে তিনি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। যার কারণে চাকরি হয় তার।

চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল করিম মিন্টু এর মা আয়রুন বেগম বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ। বিভিন্ন অসুখে আমায় জ্বালা দিচ্ছে। অভাবের সংসার। নুন আনতে পানতা পুরায়। আমার ছেলেটা পুলিশে চাকরি করতো। তার টাকা দিয়ে আমার অসুখের খরচ ও আমাদের পুরা সংসার চলতো। কিন্তু হঠাৎ এভাবে তার চাকরি চলে যাবে মেনে নিতে পারছিনা। চোখের সামনে ছেলেটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ছেলেটা। অনেক সময় না খেয়ে আমার পরিবারের দিন কাটাতে হচ্ছে। আমি সরকারের কাছে জোড় দাবী করছি আমার ছেলেটার যেন চাকরিটা ফিরিয়ে দেন।’

করিম-এর বৃদ্ধ বাবা আলফু মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ছেলেটার চাকরির বেতন দিয়ে কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে কত সুন্দর চলছিল আমাদের সংসার। ফেসবুকে কি এক পোস্টে দিচে শুনেছি তার জন্য চাকরিটা চলে গেছে। সরকারের উর্দ্ধতন ব্যক্তিদের কাছে অনুরোধ করছি আমার ছেলেটার যেন চাকরিটা ফিরে পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি আইনে যদি ভুল করে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে যেন দেখা হয়। তার মা স্ত্রী বাচ্চা সবাই খুব কষ্টে দিন পার করছে। আমিও অসুস্থ মানুষ। ছেলের চাকরি হারানোর পর বিভিন্ন বাজারে বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাই। কবে দুনিয়া থেকে চলে যাই ঠিক নাই। কিন্তু ছেলেটার মুখে হাসি দেখে মরতে চাই।’

কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর বাজারের কম্পিউটার ও ট্রেনিং সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন বলেন, ‘আব্দুল করিম মিন্টু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত না। চাকরি যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মানুষজন তাকে পরামর্শ দিয়েছিল আওয়ামীলীগের নেতাদের দারেপ্রান্তে গেলে তুমি চাকরি ফিরে পেতে পার সেজন্য বিভিন্ন নেতাদের কাছে যায় সে। এটা তো অন্যায়ের কিছুনা। এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তাই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য ঘুরছে সে।’

একই এলাকার হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৭ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘পুলিশ করিমকে খুব ভালো করে চিনি। পুলিশের চাকরি পাওয়ার তার ভাগ্যে ছিল। অভাবের সংসার ছিল তাদের। হয়তো মানুষের দোয়া ছিল তাই পুলিশের চাকরিটা পাইছে। কিন্তু সে সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে তার চাকরিটা চলে যায়। চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে যায় ছবি তুলে। সেটা বিভিন্নজন ফেইসবুকে দেয়। তাই বলে সে আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে গেছে? আমি এটা বলতে চাই সে ভালো ছেলে। দ্রুত যেন এই সরকার তার চাকরিটা ফিরিয়ে দেন।’

এবিষয়ে চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল করিম মিন্টু বলেন, ‘আমি চাকরি জীবনে কারো ক্ষতি করিনি। খুব কষ্টের সংসার আমার। বাবা মানুষের দোকানের সামনে কাচামাল বিক্রি করে আমাদের সংসার চালাচ্ছেন। রাজনীতির দলের সাথে আমার সম্পর্ক নাই। এলাকায় চাকরি যাওয়ার পর মানুষের কাজ করে সংসার চালাই। অসুস্থ মা বাবা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট দেওয়ার পর আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাকরিটা ফিরে পাওয়ার জন্য আমি আইনি ভাবে লড়ছি। আমি বিশ্বাস করি আমি আমার চাকরি ফিরে পাব। আমি কোনো অন্যায় করিনি।’

আপনাকে নিয়ে বিভিন্ন অনলাইনে নিউজ হচ্ছে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরোদ্ধে একটি চক্র লাগছে। যাতে আমি চাকরি ফিরে না পাই। কিন্ত তারা সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ আমি চাকরি ফিরে পাব। যে পোস্টের কারণে আপনার চাকরি গেলে সেটা কি পোস্ট ছিল? আমি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেই ৬ অক্টোবর ২০১৩ সালে। ২০২০ সালে ফেসবুকে আইজিপির বরাত দিয়ে একটি পোস্ট কপি করে শেয়ার করি কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে লাশ বাড়ি যাবে না। এরপর আমি চাকরি থেকে বরখাস্ত হই।’

বিভিন্ন আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ এর নেতার সাথে আপনার ছবি? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরি চলে যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের কাছে গিয়েছি যাতে চাকরিটা ফিরে পাই। সুশীল সমাজের মানুষ বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে যাও চাকরি পিরে পাবে। এখন তারাই সব। তাই গেছি তাদের কাছে। তাই বলে আমি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা হয়ে গেলাম। আমি কাজ করে সংসার চালাই। বাবা কাঁচামালের সবজী বিক্রি করে এখন সংসার চালান। চাকরি যাওয়ার পর আমি বেকার হয়ে পাগলের মতো ঘুরছি। আমি কখনো কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। রাজনীতি আমি পছন্দ করিনা।’

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..