শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি :: গত ৮ জুলাই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তিন জনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের ভেতর। একইভাবে গোলাপগঞ্জ উপজেলাতেও গেলো এক সপ্তাহে করোনা উপসর্গে অন্তত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের ধনপুর (চন্দ্রপুর) গ্রামের রাশেদ মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৭০) শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে মাত্র ১৫ মিনেটের মাথায় তাঁর মৃত্যু হয়। পরে নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। এভাবে সিলেট বিভাগের সকল উপজেলায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। যারা করোনার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগলেও কুসংস্কার আর ভয়ে করাচ্ছেন না পরীক্ষা। এমন অবস্থায় মৃত্যু বাড়লেও থাকছে হিসেবের বাইরে। যার সংখ্যা জানেন না কেউ।
এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৩৪ জন। আর এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে মোট ৩০ হাজার ৪৫৮ জনের। এমনকি গেলো এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। অপরদিকে শনাক্ত ধারাবাহিকভাবে ৩০০ থেকে ৬ শত’র ভিতর উঠানামা করছে।
তবে যাদের উপসর্গ আছে তারা সকলে নমুনা পরীক্ষা করালে মৃতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ থেকে ছয় গুণ এবং করোনা শনাক্তের সংখ্যা কয়েক লাখে গিয়ে ঠেকবে বলে জানালেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।
বর্তমানে হাসপাতালে গ্রামের রোগীর চাপ বেড়েছে জানিয়ে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, সাধারণত ৮০ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার উপসর্গ থাকে না। আর ২০ শতাংশের শরীরে উপসর্গ থাকলেও মাত্র ৫ শতাংশ, মানে যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আর এ সংখ্যায় এখন গ্রামের রোগী বেশি। সে ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকায় কুসংস্কার কিংবা সামাজিক বিচ্যুতির ভয়ে বেশিরভাগ মানুষই করোনা পরীক্ষায় আসেন না। তাই অনেকেই উপসর্গ নিয়ে মারা যান। আবার কেউ আক্রান্ত হয়ে এটা আরও ছড়ান। এতে অক্রান্ত ও মৃত্যু আরো বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ড পর্যায় টিম গঠন করে যাদের উপসর্গ আছে তাদের প্রত্যেককে নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনতে পারলে কিছুটা মুক্তি মিলতে পারে।
এদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট ও বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব উপজেলায় করোনা পরীক্ষায় মানুষের মাঝে খুব বেশি আগ্রহ নেই। অনেকের জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনার উপসর্গ থাকলেও করাচ্ছেন না পরীক্ষা।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয় সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডা. নূরে আলম শামীম বলেন, উপজেলাগুলোতে টেস্টের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকে উপসর্গ নিযে মারা গেলেও পরীক্ষা না করানোর কারণে এটি হিসাবে আসে না। তবে সম্প্রতি গ্রামের মানুষের নমুনা পরীক্ষায় কিছুটা আগ্রহ বেড়েছে।