শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি: বড়লেখায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, রশি দিয়ে বেঁধে টেনে স্থানীয় বাজারে নিয়ে ওই নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি জোরপূর্বক তাকে ছেলেধরা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও চালানো হয়। মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার পানিধার এলাকায় অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করেছে। ঘটনাটির কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে স্বজনরা তাকে সনাক্ত করেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, এক নারীকে স্থানীয় লোকজন হাত বেঁধে টেনে নিচ্ছেন। পানিধার বাজারে তাকে লোকজন ঘিরে ধরেছে। তার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। লোকজন একের পর এক প্রশ্নবানে তাকে জর্জরিত করছেন। কেউ গালি দিচ্ছেন, চড় মারছেন। লাথি-গুঁতাও দিচ্ছেন। মারধরের ভয়ে ওই নারী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। জোর করে তাকে ছেলেধরা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর নাম তাহেরা বেগম (৩৫)। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের মেয়ে।
তাহেরার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাহেরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যা ভুগছেন। কয়েক বছর আগে তার বিয়ে হলেও মানসিক সমস্যার কারণে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতেই থাকেন। তবে তাহেরা প্রায় স্বজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হন। পরে স্বজনরা তাকে খোঁজে এনে বাড়িতে রাখেন। ৯ নভেম্বর স্বজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাহেরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। স্বজনরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি বড়লেখায় চলে আসেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকায় একটি বাড়িতে গেলে ওই বাড়ির লোকজন তাকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে জড় হয়ে সেখান থেকে তার হাত বেঁধে টেনেহেছড়ে তাকে পানিধার বাজারে নিয়ে যান। বাজারে নিয়ে তার ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। অনেকে এই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাহেরাকে উদ্ধার করে। তাকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্বজনরা তা দেখে তাহেরাকে চিনতে পারেন। পরে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারেন তাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। রাতেই তাহেরার স্বজনরা থানায় এসে তাকে নিয়ে যান।
তাহেরার চাচা ছালেহ আহমদ জানান, আমার ভাতিজি তাহেরা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যা ভুগছে। অনেক চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ হয়নি। সে প্রায়ই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। তখন তাকে ধরে এনে বাড়িতে রাখা হয়। রোববার সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বড়লেখায় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের একটি ভিডিও গতরাতে ফেসবুকে দেখতে পেয়ে আমরা স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান তাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। রাতেই থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে থানা থেকে তাকে আমাদের জিম্মায় নিয়েছি। মারধররে সে শরীরে কিছুটা আঘাত পেয়েছে। বিকেলে চিকিৎসা করাব। তাকে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি।
বড়লেখা থানার ওসি মো. আবদুল কাইয়ূম জানান, তাহেরা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয় লোকজন আটক করেন। শুনেছি তাকে কিছুটা মারধরও করা হয়েছে, যা মোটেও ঠিক হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। রাতে তাহেরার স্বজনরা থানায় এসে তাকে নিয়ে গেছেন।