শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন
: মুজিবুর রহমান মুজিব:
আমাদের স্বসস্ত্র বাহিনী দেশ ও জাতির গর্বও গৌরব আশা আকাংখার বিমূর্ত প্রতীক। একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাও বাঙ্গাঁলির হাজর বছরের গৌরবময় ইতিহাসে ঐতিহ্য মন্ডিত অধ্যায়। একাত্তোরের পঁচিশে মার্চ কাল রাত্রিতে পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল এ,এম,ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট নামে বাংলাদেশের মোট জন গোষ্টির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষনা করে হত্যা অগ্নি সংযোগ, ধর্ষন লুন্টন জাতীয় মানবতা বিরোধী অপরাধ শুরু করলে পাকিস্তান সসস্ত্র বাহিনীর বাংলাদেশী অফিসার ও জোয়ানদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পাক বাহিনীর এতদাঞ্চলীয় সামরীক কর্মকর্তাগন তৎকালীন ই,পি,আর হেড কোয়ার্টার, পিল খানা ও রাজার বাগ পুলিশ লাইন্স এ অভিযান পরিচালনা করে। দেশ ও জাতির এই কঠিন সময় ও অগ্নিঝরা দিন গুলিতে পাকিন্তান সেনাবাহিনীর এক চৌকশ মেজর স্বদেশ প্রেমও স্বদেশিতায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করতঃ উচ্চ কন্ঠে উচ্চারন করেন “আই মেজর জিয়া ডুহেয়ার বাই ডিকলিয়ার দি ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স”। চাব্বিশে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের এই স্বাধীনতার ঘোষনা দেশ ও জাতিকে একটি দিক নির্দেশনা এনে দেয়। পরবর্তী পর্যায়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এম,এন,এ এবং তাজ উদ্দিন আহমদ এম,এন,এ এর নেতৃত্বে প্রবাসী মুজিব নগর সরকার গঠিত হলে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অবসর প্রাপ্ত কর্নেল, পরবর্তী পর্য্যায়ে জেনারেল বঙ্গঁবীর মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানি এম,এন,এ,কে প্রধান সেনাপতি এবং অবসর প্রাপ্ত কর্নেল পরবর্তী পর্য্যায়ে মেজর জেনারেল এম,এ রব এম,এন,এ, কে উপপ্রধান নিযুক্ত করে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সাংঘটনিক কার্য্যক্রম শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে এগারো সেক্টারে এগারো জন সেক্টার কমান্ডার এবং তিন জন সেনা কর্মকর্তার নামে মেজর জিয়ার নামে “জেড ফোর্স” মেজর শফি উল্লাহর নামে “এস” ফোর্স এবং মেজর খালেদ মোশাররফ এর নামের আদ্যাক্ষর “কে” ফোর্স মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। মেজর আবুল মনজুর সহ একাধিক বাঙ্গাঁলি আর্মি অফিসার জীবনের ঝুকি নিয়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহন ও নেতৃত্ব দান করে ন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বীর বাঙ্গাঁলী বৈমানিক ফ্লাইট লেফ ট্যেনেন্ট মতিউর রহমান পাক বিমান বাহিনীর সঙ্গেঁ সম্পর্ক ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে শাহাদাত বরন করেন। জাতি তাকে সর্ব্বোচ্চ খেতাব “বীর শ্রেষ্ট” খেতাবে ভূষিত করেছেন। বাংলাদেশের সসস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠে-বেড়ে উঠে আমাদের দেশ প্রেমিক সসস্ত্র বাহিনী। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে আমাদের সসস্ত্র বাহিনীর অফিসার ও জওয়ান বৃন্দ অবর্ননীয় দূঃখ, কষ্ট ও বেদনার সম্মুখীন হয়েছেন, প্রয়োজনীয় রেশন, যান বাহন, বেতন ভাতা ছিল না। মহান আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস, মানুষের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা, স্বাদেশিকতা ও স্বদেশ প্রেমে উদ্ভোদ্ধ হয়ে জীবন বাজি রেখে একটি প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্দ করেছেন, এক বছরের মাথায় বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সেনা জনতার মধ্যে ভালোবাসা বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সেতু বন্ধন গড়ে উঠে। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সসস্ত্র বাহিনী এদেশের সু-সন্তান, আর্মি ডিসিপ্লেনের কারনে সেনা নিবাসে সেনা বিধি-বিধান মোতাবেক ক্যেন্টনমেন্ট এ বসবাস করলেও তাঁরা মনমানষিকাতয়, চিন্তায় চেতনায় এ দেশের জনগনেরই এক সচেতন অংশ বিচ্ছিন্ন নহেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গঁ বন্ধু শেখ মুজিবের সরকারামলে মেজর জেনারেল কে এম শফি উল্লা বি,ইউ,কে প্রধান এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কে উপপ্রধান নিযুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের সসস্ত্র বাহিনী জাতি সংঘের শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে পেশাগত দক্ষতা পারঙ্গঁমতা প্রদর্শন করতঃ বিদেশে বাংলাদশের ইমেজ ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছেন, প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশীয় অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করেছেন। স্বদেশের আপদে বিপদে বন্যায় প্রাকৃতিক গোল যোগে দেশীয় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আইনের শাসন সম্মুন্নত রাখতে সরকারের দাবী মোতাবেক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করেন আমাদের সসস্ত্র বাহিনী। বিশেষত বিগত কোভিড-১৯ এবং বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সসস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরনীয়। অতুলনীয়। যোগাযোগ ও নির্মান কাজে সেনাবাহিনীর ইজ্ঞিনিয়ারিং কোরের বিকল্প নাই। বিগত দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারমলে কোমল মতি ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে দেশে কথিত নির্বাচিত সরকারের স্বার্থ সংরক্ষন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনী ছাত্র জনতার বুকে বন্দুক তাক করেন নি, পুলিশের একাংশ যা করে ছিলেন। অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের জাতীয় প্রতিষ্টান “রাওয়া” রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সভা করে সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইঞা ও দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধাচরন না করতে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনী এবং অবঃ সেনা কর্মকর্তাদের সংস্থা “রাওয়া”-র জন কল্যান ও গনমুখি ভূমিকা বিশেষ ভাবে স্মরনীয়। এক ফ্যাসিষ্ট অনির্বাচিত নেতা শেখ হাসিনার গদি ও তার দূর্নীতিবাজ সরকারের স্বার্থ রক্ষায় সেনাবাহিনী গুলি চালালে লোকক্ষয় হত, দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়ে দেশ গৃহ যুদ্ধর পথে যেত। পাঁচ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ ত্যাগ করতঃ পলায়ন করলে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙ্গেঁ দিলে দেশে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয়। পাঁচ তারিখ থেকে দেশে কোন সরকার ছিল না, রাজধানী ঢাকায় ছিল না প্রয়োজনীয় পুলিশ ট্রাফিক পুলিশ। এই কঠিন সময়ে জাতির ত্রানকর্তা হিসাবে এগিয়ে আসেন দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনীর সুযোগ্য সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকারউজ জামান। দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনী বৈষম্য বিরোধী কুটা সংস্কার আন্দোলন এর সংঘটকদেরকে নিয়ে ঢাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখেন। সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকারউজ জামানের উদ্দ্যোগে দেশীয় রাজনীতিবিদ সুশীল সমাজ এর সাথে আলোচনা ক্রমে আইন মেনে সর্ব্ব সম্মতি ক্রমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তবর্তী কালীন সরকার গঠিত হয়। সেনা বাহিনী প্রধান এর এই বীরত্বপূর্ন ভূমিকা ও কৃতিত্বপূর্ন অবদান দেশ ও জাতি চীর কাল কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করবেন। এমনি ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবময় অধ্যায়ের অধিকারি বাংলােেদশর সসস্ত্র বাহিনী। ২১ নবেম্বর সসস্ত্র বাহিনী দিবস। সিলেট সেনা নিবাসে সসস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্টান মালায় এক জনমুক্তি যোদ্ধা হিসাবে আমন্ত্রন পেয়ে আন্তরিক ভাবে আনন্দিত। আবেগ আপ্লুত। সসস্ত্র বাহিনী দিবসে সশ্রদ্ধ অভিভাধন। মহতি অনুষ্টান মালার সার্বিক সাফল্য কামনা করি। মহান মালিক আমাদেরকে দেশ ও জাতির খেদমত করার তৌফিক এনায়েত করুন, দেশ এবং দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনীর প্রতি রহমত-বরকত অব্যাহত রাখুন এই মুনাজাত সহ আমীন ছুম্মা আমীন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধ। এডভোকেট হাইকোর্ট। সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]