1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

যে কাজ ত্যাগ করলে আজাব অবধারিত

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১০ বার পঠিত

সৎকাজের আদেশ বলতে সাধারণত কাউকে ন্যায় ও ভালো কাজের নির্দেশ দান করা বোঝায়। আর অসৎকাজের নিষেধ হলো যাবতীয় মন্দ ও খারাপ কাজ থেকে কাউকে বিরত রাখা। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা কল্যাণকর কাজ। এটি আদর্শ মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সৎকাজ করা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য, তেমনি অপরকে সৎকাজের জন্য আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখাও পবিত্র দায়িত্ব। অন্যথায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসবে ভয়াবহ আজাব। হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে। যদি তা না করো তাহলে অচিরেই আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর তার পক্ষ থেকে আজাব নিপতিত করবেন। তখন তোমরা তার কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া কবুল করবেন না।’ (তিরমিজি ২৩২৩)

যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য ইসলামকে দিয়েছে অনন্যতা সেগুলোর অন্যতম হলো সৎকাজের আদেশ দান এবং অসৎকাজে বাধা প্রদান। কারণ ইসলামের সবটুকু হলো সৎকাজ, যার অনুসরণ জরুরি। মানুষ যখন সৎকাজ পরিত্যাগ করবে বা এর বিরোধিতা করবে তখন তার মাধ্যমে অসৎকাজ সংঘটিত হবে, যা হতে নিষেধ করা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মুসলিম জাতিকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজে নিষেধ করো। আর আল্লাহকে বিশ্বাস করো।’ (সুরা আলে ইমরান ১১০) এ আয়াত থেকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝা যায়। কেননা বলা হয়েছে, যারা এ কাজ করবে তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহর দেওয়া এ বিধান বান্দার জন্য আমল করা ওয়াজিব। তাই ইসলামে সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করার গুরুত্ব অপরিসীম।

ভালো কাজ : ভালো কাজের আদেশের সময় এমন বিষয়গুলো আদেশ করতে হবে, যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা, রোজা পালন, জাকাত দেওয়া, হজ করা ইত্যাদি। নামাজ ও রোজা সর্বজনীন ইবাদত। পক্ষান্তরে জাকাত ও হজ ধনাঢ্য ও বিশেষ শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তির ওপর ফরজ। সত্য কথা বলা, ওয়াদা পূরণ করা, আমানত রক্ষা করা, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, সৎকাজ করার এবং অসৎকাজ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে একে অপরকে সাহায্য করা, প্রতিবেশী, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাথি-সঙ্গী ও স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা, পশুপাখির প্রতি যতœ নেওয়া, কথায় ও কাজে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখাও ভালো কাজের আদেশের মধ্যে গণ্য।

মন্দ কাজ : আল্লাহতায়ালা যেসব বিষয় হারাম করেছেন সবগুলোই মন্দ কাজ। যেমন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, চুরি, ডাকাতি, ব্যাভিচার, দুর্নীতি, গিবত করা, মিথ্যা বলা, অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ নিয়ে নেওয়া, ছিনতাই করা, সুদ খাওয়া, জুয়া খেলা, মদ পান, নিষিদ্ধ বেচাকেনা ও লেনদেন করা, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া, মাপ দেওয়ার সময় কমবেশি করা।

সৎকাজের নির্দেশ : আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন। তাদের (মানবজাতি) জন্য উত্তম ও পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করেন এবং অপবিত্র ও মন্দ বস্তুগুলো হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ ১৫৭) এ আয়াতে রাসুল (সা.)-এর বরকতময় রিসালাতের গুণ ও পূর্ণতার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। কারণ আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জবান দ্বারা প্রত্যেক ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সকল মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আর প্রতিটি পবিত্র বস্তুকে হালাল করা হয়েছে এবং প্রত্যেক মন্দ ও অপবিত্র বস্তুকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (সহিহুল জামে ২৩৪৯) আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ দেখতে পায়, তাহলে সে যেন তা নিজের শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে প্রতিরোধ করে। তবে যদি তার সেই সামর্থ্য না থাকে, তাহলে যেন মুখের কথা দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। যদি তাও করতে না পারে, তাহলে যেন অন্তর দিয়ে এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। আর এটি হলো সবচেয়ে দুর্বল ইমানের পরিচয়।’ (সহিহ মুসলিম ১৮৬)

যারা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে না রাসুল (সা.) তাদের নিজের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ঘোষণা করেছেন। এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের আদেশ দেয় না এবং অসৎকাজের বাধা দেয় না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি ১৯২১) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ যখন কোনো সমাজের মানুষ পরিত্যাগ করে, তখন সে সমাজে আল্লাহর আজাব ও গজব নেমে আসে। আজাবের ধরন একেক সময় একেক রকম হয়। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা এ আয়াতটি পাঠ করো, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের নিজেদের সংশোধনই তোমাদের কর্তব্য। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সুরা মায়েদা ১০৫) অথচ আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন জালেমকে জুলুম করতে দেখে তখন তারা যদি তার হাত ধরে প্রতিহত না করে তবে আল্লাহতায়ালা অচিরেই তাদের সবাইকে আজাবে নিপতিত করবেন। (তিরমিজি ২১৬৮) সে আজাব ও গজব থেকে মুক্তির জন্য যতই আল্লাহর কাছে দোয়া করা হোক না কেন কোনো দোয়াই কবুল হবে না।

জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো মানুষ কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে পাপের কাজ করে এবং তারা তাকে বাধা দেওয়ার সক্ষম হওয়ার পরও বাধা দেয় না, তাহলে আল্লাহ তাদের মরণের পূর্বে তাদের সকলের ওপর শাস্তি চাপিয়ে দেবেন।’ (আবু দাউদ ৪৩৪১) বস্তুত যারা অন্যায় করে এবং যারা অন্যায় দেখে বাধা দেয় না, তারা উভয়ে পাপী। তাদের উভয়ের অপরাধ সমান। ভালো কাজের আদেশ দিলে নিজেরও পালন করতে হবে। অন্যথায় পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা তোমরা করো না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা এমন কথা বলো, যা তোমরা কাজে পরিণত করো না।’ (সুরা ছফ ২-৩)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একদল লোককে দেখলাম, যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের ওয়াজ-নসিহতকারী লোক, তারা মানুষকে সৎকাজের আদেশ-উপদেশ দিত, কিন্তু নিজেরা তা অনুযায়ী আমল করত না।’ (ইবনে হিব্বান ৫৩) এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘কি আশ্চর্য! তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেরা নিজেদের ভুলে থাকো। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো। তবুও কি তোমরা চিন্তা করো না?’ (সুরা বাকারা ৪৪) সুতরাং ইমানদার লোকের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে, অন্যকে সৎকাজের উপদেশ ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ব্যাপারে ভুলে না থাকা, বরং নিজেও সৎকাজ করবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকবে।

মো. আবদুর রহমান:

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..