1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

শীতের গরম কাপড়ের ব্যবসা মন্দা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : শীতের পোশাকের মৌসুমি ব্যবসা তিন মাসের। শুরু হয় নভেম্বরে, চলে জানুয়ারির শেষ অবধি। শীতের ওঠানামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেচাকেনা বাড়ে-কমে। তবে এ বাস্তবতার সঙ্গে এবারের কোনো মিল নেই। কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, শাল ও চাদরসহ অন্যান্য শীতবস্ত্রের পাইকারি বেচাকেনার মৌসুমে এ বাজারে এখনো মন্দা লেগেই রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে মৌসুমি এ ব্যবসার উৎপাদক, আমদানিকারক ও পাইকাররা বড় ধরনের বিপাকে পড়বেন- বাজার পর্যবেক্ষকরা এমনটাই আশঙ্কা করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, সব মিলিয়ে শীতের পোশাকের শীতকেন্দ্রিক মৌসুমি বাণিজ্যের আকার হাজার কোটি টাকার ওপরে। সাধারণত পাইকারিতে শীতের বেচাকেনা জমে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে। আর খুচরায় বেচাকেনা জমে ওঠে ডিসেম্বরের শুরুতেই। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাইকারিতেই এখনো ব্যবসা জমেনি। তাই শীত জেঁকে বসলে তখন খুচরা ব্যবসা ভালো হবে এমন আশা করতে পারছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ব্যবসার বড় অংশই রাজধানীর বঙ্গবাজার ও গুলিস্তান কেন্দ্রিক। এই দুই বাজারে কম্বলসহ অন্যান্য শীতের পোশাক বেচাকেনা হয় ৩০০ কোটি টাকার মতো। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে আরও দেড়শ’ কোটি টাকার বাজার। কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লী ও কামরাঙ্গীরচরে তৈরি হয় স্বল্প দামের শীতের পোশাক। তুলনামূলক কম দামি হলেও এসব পোশাকের বাজার কয়েকশ’ কোটি টাকার। এর বাইরে মিরপুর, গাজীপুর ও সাভারে শীতের পোশাকের বাজার রয়েছে। এসব জায়গায় পোশাক কারখানাগুলো থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার শীতের পোশাক আসে। মৌসুমি এই ব্যবসায় নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোরও বড় বিনিয়োগ রয়েছে। সব মিলিয়ে শীতকেন্দ্রিক শীতের পোশাকের বাজারের আকার ন্যূনতম হাজার কোটি টাকার। বাজারের আকারের চেয়ে এই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ আরও বেশি। কারণ, স্বল্পসময়ের মধ্যে ব্যবসা করতে হলে লগ্নি বেশি করতে হয়। ব্যবসা ভালো না হলে পণ্য আটকে থাকে। পরের মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যা বড় ধরনের লোকসানের মুখে ফেলে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার শীতবস্ত্রসহ এ মৌসুমের সব ধরনের বেচাকেনাতেই বড় ধরনের মন্দার ধাক্কা লেগেছে। গত বছরে এ সময় পর্যন্ত যে পরিমাণ কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, শাল ও চাদরসহ অন্যান্য শীতকালীন পোশাক-পরিচ্ছদ বিক্রি হয়েছে এবার তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে এ মৌসুমে বিপুল পরিমাণ মাল অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজধানীর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শীত কম থাকায় বেচাবিক্রি তেমন নেই। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঢাকার বাইরে থেকেও কম আসছেন পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতারা। যেসব দোকানে গত বছর প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হতো দেড় থেকে ২ লাখ টাকার শীতের পোশাক, সেসব দোকানে এখন দিনে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। একই অবস্থা কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচরের পোশাকপল্লীতেও। সেখানেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা না মেলায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

এদিকে শীতবস্ত্র আমদানিকারকরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে প্রতিবছর শীতে একশ’ কোটি টাকার পুরানো কাপড় আমদানি করেন প্রায় ৩ হাজার ব্যবসায়ী। জাপান, কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ান থেকে মূলত এই কাপড় আনা হয়। তবে ডলারের বাজার স্বাভাবিক না হওয়ায় এ সংকটের ধাক্কা লেগেছে এ ব্যবসাতেও। এটি শতভাগ আমদানিনির্ভর ব্যবসা হওয়ায় এলসি খুলতে পারছেন না অনেকে। এছাড়া ডলারের দামও বেড়েছে। তাই বিদেশ থেকে আনা পুরানো এসব কাপড়ের দামও বাড়বে। অথচ বাজারে আশানুরূপ ক্রেতা নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরানো এসব শীতবস্ত্রের মূল ক্রেতা নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্তরাও এসব কাপড় কেনেন। তবে গত কয়েকমাস ধরে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দুই শ্রেণির মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই শীতবস্ত্রের মার্কেটে তাদের আনাগোনা কম। অনেকে গত বছরের পুরানো কাপড় দিয়েই এবারের শীতের মৌসুম পার করার চিন্তাভাবনা করছেন। তাই আমদানিকারকরা গতবারের মতো পর্যাপ্ত পুরানো শীতবস্ত্র আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।

এছাড়া মৌসুমি এ ব্যবসায়ীদের অনেকের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ৫ আগস্টের সরকারের পট পরিবর্তনের পর তাদের একটি বড় অংশ আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে আত্মীয়-স্বজন কিংবা ব্যবসায়িক অংশীদার দিয়ে কোনোরকমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তাই তাদের অনেকেই মৌসুমি পণ্য আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে শীতের গরম কাপড়ের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয় আমদানি করা কাপড় দিয়ে। মূলত যেসব অঞ্চলে শীত বেশি বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এসব পণ্য কিনে নিয়ে যান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সারাদেশ থেকেই ক্রেতারা এখানেই আসেন। কারণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাই মূলত পুরানো কাপড় আমদানি করেন। বিশেষ করে সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, মাফলার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট, ট্রাউজার ইত্যাদি গরম কাপড় আমদানি হয়। আমদানির পর পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রি হয়। চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কাপড় চলে যায়। ফুটপাতে ভ্যানের হকাররা খুচরা পর্যায়ে এ কাপড়ের বিক্রেতা। দেশের উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ শীতপ্রধান অঞ্চলে এ কাপড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

প্রসঙ্গত, প্রচলিত আমদানি প্রক্রিয়ার চেয়ে খানিকটা ভিন্ন পুরান কাপড় আমদানির বিষয়টি। পুরান কাপড় আমদানির জন্য প্রতি বছর সারাদেশে ৩০ হাজার লাইসেন্স বা পূর্বানুমতিপত্র দেওয়া হয়। বিভিন্ন জেলার আগ্রহীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতিপত্র ইস্যু করে আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তর। কোন জেলার জন্য কতটি লাইসেন্স ইস্যু করা হবে তা নির্ধারণ করা হয় সেই জেলার জনসংখ্যার অনুপাতে। আগ্রহী ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে তা আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। আঞ্চলিক দপ্তর থেকে পূর্বানুমতিপত্র জারি করা হয়। আর এ অনুমতিপত্র নিয়ে ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকরা ঋণপত্র (এলসি) খোলেন। কাপড় জাহাজীকরণের জন্যও সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

যাতে যথাসময়ে কাপড় চলে আসে এবং কেউ মনোপলি করতে না পারেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রতিটি আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে ১৫ কোটি টাকার পুরাতন কাপড় আমদানির অনুমোদন দেয়। সাধারণত শীত মৌসুম শুরুর আগে অক্টোবরের মধ্যে কাপড় আমদানি করা হয়। অথচ এ বছর আগস্টের আগে থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। ফলে পুরানো কাপড় আমদানিকারকদের অনেকেই মাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারেননি। এছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অনেকেই আগের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল আমদানির ঝুঁকি নেননি।

এদিকে আগামী সপ্তাহগুলোয় দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। তবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ বেশকিছু এলাকায় এখনই শীত জেঁকে বসেছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সেখানকার তাপমাত্রা নেমে আসছে ১১ ডিগ্রির ঘরে। ভোরেই ঝলমলে রোদ থাকলেও সকাল ৯টা পর্যন্ত কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। শিগগিরই বেশকিছু জেলাতে শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে।

অথচ এখনো পাইকারি কেন্দ্রগুলোতেই শীতবস্ত্র বিক্রি জমে না ওঠায় আগামীতে খুচরা বেচাকেনা কেমন হবে তা নিয়ে বিক্রেতাদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নিউমার্কেট, টিকাটুলী, ধানমন্ডি হকার্সসহ রাজধানীর ডজনখানেক মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, এবার বেচাবিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যান্য বছরের মতো এবার ডিসেম্বরের শুরুতে আশানুরূপ বিক্রি নেই।

তাদের ভাষ্য, মানুষের পকেটে টাকা নেই, ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। আগে যারা শীত শুরুর আগে দু’তিনটি গরম কাপড় কিনতেন, তারা এখন সময়ের অপেক্ষায় আছেন। শীত জেঁকে বসার পর প্রয়োজন বুঝে হয়তো পরিবারের শিশু-সন্তান ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য একটা-দু’টো কাপড় কিনবেন। আর্থিক সংকটে থাকা বেশিরভাগ ক্রেতাই হয়তো ফুটপাথের দোকানেই ঝুঁকবেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া জানান, প্রতি বছর শীতের মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার গরম কাপড়ের বাণিজ্য হয়। মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক চাপের কারণে এ বছর বাণিজ্যের আকার কমছে। তারপরও শীতের মৌসুমকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ঋণ করে হলেও বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু ব্যবসা নেই বললেই চলে।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, একদিকে আর্থিক অবস্থা খারাপ, অন্যদিকে রাজধানীতে একের পর এক অস্থিরতা। এর ফলে ঢাকার বাইরে থেকে এবার অর্ডার অনেকে কম পেয়েছি। গত বছরের তুলনায় অর্ডার প্রায় অর্ধেক কমে গেছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, পাইকারি বেচাকেনা যেভাবে কমেছে তাতে শীত জেঁকে বসলেও খুচরা বেচাকেনা বাড়বে তার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। চলমান পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া লাগতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..