1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

বারোই ডিসেম্বর গুনবতি রমনী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর মৃত্যো বার্ষিকী। অষ্টাদশ ওফাত বার্ষিকীর মোনাজাতঃ মাগফেরাত

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮২ বার পঠিত

। মুজিবুর রহমান মুজিব।
ইসলামী আইনের বিধি বিধান মোতাবেক “আলমে আরওয়া” রুহের জগৎ থেকে হাসরের ময়দানের সময়কালের মধ্যে মানবাত্বার দুনিয়াবি সময় ক্ষনস্থায়ী ও অনির্ধারিত। মহাপবিত্র কলামে পাক আল কোরআনে আমাদের মহান সৃষ্ট্রাও প্রতি পালক দোজাহানের খালিক মালিক আল্লাহ বলেন “কুল্লুন নাফসিন জ্যায়িকাতুল মউত” জগতের সকল প্রানীকেই একদিন মৃত্যো বরন করতে হবে। আল্লাহ অন্যত্র বলেন “তোমাদেরকে এই মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, এই মাটিতে একদিন শোয়ানো হবে, এই মাটি থেকেই একদিন উথ্বিত করব। মানুষের মৃত্যো অবধারিত ও চীরন্তন সত্য হলেও মুর্দার স্বজনগন করুন মৃত্যোকে সহজে মেনে নিতে পারেন না-মরা বাড়ীতে কান্নার রোল উঠে- আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন মুর্দার স্বজন শুভাকাংখীগন। অপরিনত কিংবা আকস্মিক মৃত্যো সহজে মেনে নেয়া যায় না। আফসোস আহাজারি হয়। গুনবতীরমনী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর পয়ষট্টি বছরি যাপিত জীবন শেষের মৃত্যো অকাল মৃত্যো না হলেও আকস্মিক ছিল। মাঝারি উচ্চতার সুস্ব্যাস্থ এর অধিকারীনি বেগম রাবেয়ার রোগবালাই খুব একটা ছিল না। গোল বাটা মুখী, ফর্সা চেহারার বেগম রাবেয়ার মুখে একচিলতে মায়াবি মুচকি হাসি লেগে থাকত সব সময়। রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট সহ অসংখ্য প্রতিষ্টানের প্রতিষ্টাতা দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক দান বীর আলহাজ ড. রাগিব আলীর সাথে ১৯৬৩ সালের ২৯ মার্চ পারিবারিক ভাবে শুভ বিবাহের পর যোগ্য জীবন সঙ্গিঁনী হিসাবে অমৃত্যো ছায়ার মত অনুসরন করেছেন, সকল কাজে কর্মে সহায়তা দিয়েছেন “লাভ আফটার ম্যেরেজ” এর উজ্জল উদাহরন রেখেছেন। মধ্য ডিসেম্বরে স্বামী আলহাজ্ব রাগিব আলীর সঙ্গেঁ মালনিছড়া চা বাগানের মালিক বাংলায় অবস্থান করছিলেন মালনিছড়ার “মালকিন” বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। বৃহত্তর সিলেটের প্রাচীনতম চা বাগান মালনিছড়ার মালিক বাংলোও প্রাচীন ও দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা। বারোই ডিসেম্বর রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করলেন বেগম রাবেয়া। অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রæত তাঁরই প্রতিষ্টিত রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। মান সম্মত চিকিৎসা সেবায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুনাম নাম ডাক আছে। চিকিৎসকদের আন্তরিক সেবা সকল প্রয়াস বিফল হল- তাঁর ম্যাসিভ হার্ট এটাক হয়েছে, তাঁর সময় শেষ হয়েগেছে- বারোই ডিসেম্বরের সুর্য্যােদয় এর সাথে সাথে মানব প্রেমিক শিক্ষানুরাগি সাধারন পোষাকের অসাধারন নারী বেগম রাবেয়া খাতুন শেষ ত্যাগ করে মহান মৃত্যোকে আলিঙ্গঁন করেন, তখন বয়স হয়েছিল মাত্র পয়ষট্টি বৎসর। সাউথ ইষ্ট ব্যাংক, মৌলভীবাজার শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মতিউর রব চৌধুরী সাহেব আমাকে মোবাইল মারফত এই দূঃসংবাদটি দিলেন, সাউথ ইষ্ট ব্যাংক পরিবার মরহুমের প্রতি শেষ সম্মান জানাতে জানাজার নামাজে শরীক হতে সিলেট যাবেন। মানব সেবার জীবন্ত কিংবদন্তী সহজ সরল সাদা মনের ভাল মানুষ শিক্ষানুরাগি আলহাজ্ব রাগিব আলী এবং তাঁর সহধর্মিনী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর সঙ্গেঁ আমার পেশাগত ও বৈষয়িক নয় আত্বীয়তা আত্বিক সম্পর্ক রয়েছে। পিতৃতুল্য অগ্রজ আলহাজ্ব রাগিব আলী সাহেব আমাকে সহোদরের মত ¯েœহ মমতা করেন, সহ মর্মিতা দেখান, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ও আমার কাছে প্রেমময়ী ভগিনি, ¯েœহ ময়ী জননী এবং গুনবতী রমনীর মত। বিগত দিন গুলিতে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্টানাদিতে তাঁর পর্দাপুসিদা, শিষ্টাচার সৌজন্য বোধ, বিনয়াচরন ও মায়া-মমতা দৃষ্টে বিমুগ্ধ হয়েছি, বিমোহিত হয়েছি। হবিগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন জনপ্রিয় পৌরপতি শহীদ চৌধুরী কর্তৃক দানবীর রাগিব আলী সাহেবকে প্রদত্ত সম্ভর্ধনায় আমিও আমন্ত্রিত অথিতি বক্তা ছিলাম, গিয়েছি, দেখেছি তাঁর সদাচরন। বিগত দশকের শুরুতে আলহাজ্ব রাগিব আলী সাহেব সাউথ ইষ্ট ব্যাংক এর পরিচালনা পর্ষদ এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে স্থানীয় চেম্বার এবং সাউথ ইষ্ট ব্যাংক গ্রাহক সমিতি সম্মিলিত ভাবে তাঁকে সম্ভর্ধনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হলে আমাকে উৎসবানুষ্টানের উৎযাপন কমিটির আহŸায়ক এবং চেম্বার নেতা তরুন রাজনীতিবিদ কামাল হোসেনকে সদস্য সচিব এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সেই বিশাল আয়োজন জাতীয় শিল্পী সমন্বয়ে বর্নাঢ্য সঙ্গীঁত সন্ধ্যার আন্তরিক আয়োজনে খুশী হয়েছিলেন রাগিব রাবেয়া দম্পতি। সম্ভর্ধিত মেহমানদের সম্মানে ইসলামপুরের ¯েœহ ভাজন ইকবাল আহমদ হোসেন আয়োজিত নৈশভোজটিও ছিল মনলোভা। এই আয়োজনে ও আন্তরিক ভাবে খুশী হয়েছিলেন রাগিব রাবেয়া দম্পত্তি। ঐ দশকে জৈন্তা গোয়াইনঘাট কানাই ঘাট এলাকায় এই দম্পতির জন্য একটি সম্ভর্ধনার আয়োজন করা হয়। শিক্ষানুরাগি দানবীর রাগিব আলী সাহেবের আমন্ত্রনে সেই সব সভানুষ্টানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আমাকে যোগ দিতে হয়ে ছিল। সিলেট-হবিগঞ্জ- মৌলভীবাজারের অনুষ্টানাদিতে যোগ দিয়ে তাঁর সাথে জনসেবা মূলক কাজে অংশ গ্রহন করে দেখেছি তিনি সংবেদনশীল মানব দরদি মহিয়শী রমনি ছিলেন। পিতৃও স্বামী উভয় কূলে বশংমর্যাদা অর্থবিত্ত আভিজাত্য থাকলেও তাঁর অহংকার-অহংবোধ ছিল না, তিনি ছিলেন সাধারন পোষাকে এক অসাধারন মুসলিম নারী। তাঁর পিতা ইরফান আলী চৌধুরী সাহেব, পিতার আম্বরখানা, রায় হোসেন পাক্কা বাড়ীর নাম ডাক বিত্ত বেসতে দেশে বিদেশে। দানবীর আলহাজ্ব ডক্টর রাগিব আলী সাহেবের বিত্ত বৈভবের মাঝে ও তিনি বাহারি শাড়ি ও চোখ ধাধানো গয়না ব্যবহার করতেন না, একজন পাক্কা ইমানদার ফরেজগার মুসলিম রমনী ছিলেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। দুই হাজার ছয় সালের বারোই ডিসেম্বর বাদ আছর রাগিবনগর বেগম রাবেয়া খাতুনের নামাজে জানাজা। আমাকে যেতেই হবে এ আমার ইমানী দায়িত্ব। ঐ দিন বাদ জোহর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বাধীনতার সংঘটক, সাবেক সাংসদ অগ্রজ প্রতিম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সাহেবের নামাজে জানাজা। আমি তাঁর ¯েœহ ধন্য ছিলাম। তাঁর সাঙ্গেঁ আমার একটি সুসম্পর্ক আজীবন বিদ্যমান ছিল। জোহর থেকে আছর দুই বেলা নামাজ শেষে দুটি নামাজে জানাজা, আমর জীবনে এই প্রথম। শ্রদ্ধেয় গিয়াস ভাইর জানাজার নামাজ শেষেই বিশিষ্ট কবিও গীতিকার শ্রদ্ধেয় মামা আকবর হোসেন সাহেবের সঙ্গেঁ সাক্ষাত। তিনিও জানাজায় যেতে চাইলেন। আল্লাহ ভরসা করে মামা ভাগ্না সিলেট অভিমুখে রওয়ানা হলাম। আমার ড্রাইবার গফুর একজন দক্ষ চালক। সব সময় আস্থে চল বল্লেও সেদিন বলে ছিলাম চালাও সিলেট আছরের নামাজ পড়ব। আছরের আজানের সময় তালিবপুর হাল আমলের জনতা দেয়া নাম রাগিবনগর জামে মসজিদ এর সামনে এলাম। এটি মরহুমার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হলেও ঢাকা চট্টগ্রাম বৃহত্তর সিলেটের সকল এলাকা থেকে আগত মানুষের ঢল নেমেছিল সে দিন। মসজিদ সংলগ্ন বিশাল মাঠে মরহুমার বিশাল নামাজে জানাজা হল। মিষ্টি কথার যাদুঘর মিঠা বুলির মানুষ দানবীর রাগিব আলী সাহেব আকস্মিক পতিœ বিয়োগে কাতর। প্রায় পাথর। নির্বাক। নিশ্চুপ। আমি তাকে সমবেদনা জানাবার ভাষা পেলাম না শুধূ মাত্র -“ভাই সাহেব”- বলে জড়িয়ে ধরলাম। বুক মিলালাম। উভয়েই নির্বাক ছিলাম। নামাজ শেষে দোয়া দুরুদ আল্লাহর নাম নিয়ে মাটির মানুষ বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে মাটির বিছানায় চীর শয়ানে শায়িত করা হল। মাটি চাপা দেয়া হল, তিনি চীর তরে চলেগেলেন নাফেরার দেশে। ইসলামী বিধান মোতাবেক একজন মানুষের মৃত্যোই শেষ নয়, বরং অনাগত অনন্ত মহাজীবনের শুরু। মৃত্যোর পর মানবাত্বার “আলমে বরযকি” জীবন। মৃত্যোর পর মরহুমের ওয়ারিশগন মূর্দার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া দুরুদ করেন, শিরনী সালাত করা হয়, মিলাদ মাহফিল জিয়ারত হয়। রাগিব রাবেয়া ফাউন্ডেশন মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধুরী প্রত্যেক মৃত্যো বার্ষিকীতে অনুষ্টানাদির আয়োজন করেন, সিলেটের ডাক ক্রোড়পত্র বের করেন। ইদানিং শারীরিক অসুস্থতা, বার্ধক্য জনিত ব্যাধি ও দূর্বলতায় রাগিবনগর যেতে না পারলেও সাংবাদিক প্রবর বন্ধুবর আফতাব চৌধুরী মারফত খুঁজ খবর সংবাদাদি পাই, নেই। গুনবতী রমনী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অষ্টাদশ মৃত্যোবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিলেটে রাগিব রাবেয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিনভর ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। রেওয়াজ মোতাবেক আমন্ত্রনপত্র পেয়েছি, কিন্তু বর্তমানে আমি বহুবিধ বার্ধক্য জনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শাহ আব্দুল করিম এর ভাষায় এখন আমার “গাড়ী চলে না, চলে নারে” অবস্থা শয্যাশায়ী সোফাশায়ী কষ্টে কালাতিপাত করছি। কার জার্নি শরীর এলাও করেই না, গত মাসে জালালাবাদ সেনা নিবাস থেকে দু’জন অফিসার মারফত সসস্ত্র বাহিনী দিবসে আন্তরিক আমন্ত্রন পেয়ে যাবার লোভ সামলাতে পারিনি, সামনের বছর পর্যন্ত বেঁচে নাও থাকতে পারি। গিয়েছলাম। আন্তরিক ভাবে সম্ভর্ধিত সম্মানিত পুরস্কৃত হয়েছিলাম। একাত্তোরের অকুতভয় বীর সিলেটের কৃতি সন্তান মেজর জেনারেল (অবঃ) আজিজুর রহমান বীর উত্তম এর স্মৃতি চারন মূলক চমৎকার বক্তৃতা শুনে উজ্জিবিত হয়েছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে “ইমিষ্টেট” খেয়ে ও স্বস্থি পাই নি বমি-শ্বাস কষ্টে, অসুখে কষ্ট পেয়েছি এর পর থেকে কার জার্নি পরিহার করছি। আমার শ্রদ্ধেয়া গুনবতী রমনী শিক্ষানুরাগী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অষ্টাদশ ওফাত বার্ষিকীতে মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, পতিœ বিযোগে কাতর মানব প্রেমিক দানবীর আলহাজ্ব রাগিব আলীকে শুধু সমবেদনা নয়, তাঁর সুস্ব্যাস্থ দীর্ঘায়ু ও কল্যান কামনা করছি।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। এডভোকটে হাইকোট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..