শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এগিয়ে আনতে আবেদন করেছেন ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবী। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত সব দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করে। তবে এদিন শুনানিতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আসামিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ তিনটি দরখাস্ত দিয়েছেন আদালতে। এর মধ্যে একটি চিন্ময়ের মামলাটি শুনানি করার জন্য, আরেকটি নথি উপস্থাপনের জন্য এবং অন্যটি জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য।যেহেতু তার সাথে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবী ছিলেন না, আসামির পক্ষে ওকালতনামা নেই এবং ফাইলিং আইনজীবীরও লিখিত অনুমতি নেই সেহেতু আদালত তার দরখাস্ত নট মেইন্টেইনেবল বলে নামঞ্জুর করেছেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এমন কারোর ওকালতনামা লাগবে যেকোনো পিটিশন দায়েরের জন্য।
আদালতে আসামি চিন্ময়ের পক্ষে জমা দেওয়া আবেদনে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত চিন্ময় দাস একজন সন্ন্যাসী। তিনি সনাতনীদের পবিত্র তীর্ঘপীঠ শ্রী শ্রী পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের একজন প্রধান মুখপাত্র। মামলায় চিন্ময়ের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর। তাছাড়া চিন্ময় দাস দীর্ঘমেয়াদি পাকস্থলী, কার্ডিওভাসকুলার, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীকে বিভিন্ন মাধ্যমে এ মামলা পরিচালনা তথা শুনানি না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই শুনানিতে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এটি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার বহির্ভূত। যেহেতু চিন্ময়ের পক্ষের আইনজীবী নিরাপত্তাজনিত কারণে এ মামলার জামিন শুনানির ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি, সেহেতু ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই ফৌজদারি মামলার ধার্য তারিখ অগ্রবর্তী পূর্বক শুনানি করা একান্ত আবশ্যক। না হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রক্ষ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধরা। আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মোট তিনটি মামলা করেছে। এতে ৭৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) চিন্ময় অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন ‘হেফাজতকর্মী’ চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।