মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
: আফতাব চৌধুরী:
আজ ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে- বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। বিরাজমান রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে এর চাইতে সহজ ও সংক্ষেপে মন্তব্যবাধ হয় না। যা চলছে তাতে পোষাক চড়ানো হয়েছে গণতন্ত্র, সংবিধান, মানবাধিকার ইত্যাদি মনোহর বক্তব্যের। রাজনীতি দেশে আজ দুঃসাধ্যই নয়, দুঃসহ হয়ে উঠেছে। রাজনীতির প্রতি জনগণকে বীতশ্রদ্ধ করে তুললে তা গণবিমুখ হয়ে পড়ে এবং এমন অবস্থাই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রতি চরম আঘাত। রাজনীতি হয়ে পড়েছে অস্ত্র ও অর্থ নির্ভর। তাই নীতি ও আদর্শ, গণসম্পৃক্ততা, জনকল্যাণ ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। শাস্তি ভোগ করছে সাধারণ জনগণ ।
এ দেশের অধিকাংশ মানুষের জায়গা জমি নেই, তারা দিনে আনে দিনে খায়। কর্মজীবি মানুষ বেতন ভাতা নিয়মিত পাচ্ছে না। কারণ ব্যাবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা বন্ধ, বন্দর নগরীতে কাজের পরিমাণ কম। স্তব্ধ পরিবহনের কারণে, টাকার অবমূল্যায়নে কৃষিজ দ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য দিনে দিনে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা কিভাবে করা যাবে সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাস্তবতার বিবেচনায়, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছু ছাড় ও বিরতি দিয়ে স্বস্তি দানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন অবশ্য রাজনীতি ছিল প্রত্যয়ী রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃত্ব ছিল ত্যাগী, আদর্শিক রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হয় উদাসীন, না হয় ভ্রান্ত ধারণায় তৃপ্ত। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় কিন্তু ভাব দেখে মনে হয় বাকীরা যেন সব সামলে উঠতে পারছেননা।
পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যায় সহিংসু ও অপরাধমূলক কার্যক্রম ক্রমেই ব্যাপকতা লাভ করছে। জনগণের জান, মাল, ইজ্জতের যেন নিরাপত্তা নেই। বিরাজমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যে দুষারোপ করছেন। কিন্তু দেশের তথা জনগণের হাল অবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে তা মূল্যায়ণ করছেন না। অনেকেরই মনোভাব-দেখি কি হয় ! কিভাবে সন্ত্রাসী, অপরাধী, চাঁদাবাজ, দৃস্কৃতিকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে, ভাব দেখে মনে হয় রাজনীতিবিদগণ বা প্রশাসন তা নিয়ে ভাবছেন না।
রাজনৈতিক হাল অবস্থা, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে তা যদি সহসাই সামাল দেয়া না যায় তাহলে দেশে যে কি অবস্থা হবে তা নিয়ে জনগণ শংকিত, আতংকিত, উৎকণ্ঠিত। জনজীবন দৃস্কৃতকারীদের হটকারীদের নিকট বন্দী। হিংসা, প্রতিহিংসা বিদ্বেষ-জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছুবে, জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি দিয়ে রাজনীতিবেদদের তা যাচাই করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার নামে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, দোষীদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে তা বন্ধ না করলে দিনে দিনে এরূপ হত্যাযজ্ঞ আরো বৃদ্ধি পাবে। নিরীহ, নির্দোষ মানুষ যন্ত্র দানবের হাতে তারা প্রাণ বিসর্জন দিবে তা মেনে নেয়া যায় না।
জনগণের কল্যানের জন্যই রাজনীতি। রাজনীতিবিদগণই বলে থাকেন ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়-দলের চেয়ে জাতি বড়। দেশবাসী এ সংকটময় মুহূর্তে তার প্রমাণ চায়। নৈরাজ্যের মধ্যে একটি জাতি বেঁচে থাকতে পারে না। তেমন পরিস্থিতিতে একটা তৃতীয় শক্তি যাতে সুযোগ না পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, নিরাপদ জীবন-ব্যবস্থা চায়। ভয়-ভীতি, উত্তেজনা, অস্থিরতার মধ্যে মানুষ বাঁচতে পারে না। ডুবন্ত মানুষও বাঁচার আগ্রহে খড় কুটোকে যেমন আকড়ে ধরতে চায়, অসহায় মানুষও অবাঞ্চিত পরিবেশকে অন্ততঃ কিছুকালের জন্য মেনে নয়। স্থায়ীভাবে নয়। এখানেই কোন কোন দল বা রাজীনতিবিদদের হয় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা তাদের জীবনে নিয়ে আসে নির্মম পরিণতি। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না-করতে পারে না।
জাতীয় জীবনের এ দুর্যোগে আমরা আশা করব, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চিন্তা চেতনায় শুভবুদ্ধির উদয় হবে, জাতিকে আত্মহননের পথ থেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালাবে।
আমি রাজনীতি করি না-কিন্তু সচেতন মন দিয়ে অন্ততঃ এটা বুঝি, ধরাবাধা কাঠামোর মধ্যে রাজনীতি সব সময় চলে না। অবস্থা ভেদে পরিবর্তন হয়। লক্ষ্য অর্জনের জন্যই এর প্রয়োজন। জেদ রাজনীতির ভাষা নয়। এটা একনায়ক ও স্বৈরাচারের বেলায় সাজে। নমনীয়তা দুর্বলতা নয়-কৌশল হিসাবেও বিবেচিত। প্রজ্ঞাতেই নেতৃত্বের সাফল্য। জনগণের আস্তাতেই নেতৃত্বের স্থায়িত্ব। সাংবাদিক-কলামিস্ট। ১৪.১২.২০২৪