শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট: জুনে লাখ রোগী শনাক্তের পর জুলাইয়ে ইতোমধ্যে ২লাখ ছাড়িয়ে গেছে শনাক্ত। ঈদের তৃতীয় দিন আজ (২৩জুলাই) ভোর থেকে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে দেশব্যাপী ১৪দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এ সময় সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এমনকি গার্মেন্ট কারখানাও। তবে ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটা প্রবণতা দেখা গেছে গরুর হাটে ও ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের মধ্যে। ঈদের পর এর একটা প্রভাব চলমান উচ্চ সংক্রমণের ওপর পড়বে বলে ধারণা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। আগের লকডাউনে সংক্রমণের হারে খুব একটা প্রভাব না পড়ায় লকডাউনকে খুব কঠিন সময় হিসাবেই দেখছেন তারা।
দেশে করোনা মহামারির চরম সংকট যাচ্ছে বর্তমানে। জুনে এক লাখের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হলেও জুলাইয়ের অর্ধেক সময়ে তা ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র সাত দিন আগে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ১৩হাজার ৭৬৮জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর গত ৯দিনে প্রায় সাড়ে ৯৫ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০হাজার করে শনাক্ত হচ্ছেন। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোও পড়ছে সংকটে। ধীরে ধীরে কমে আসছে খালি শয্যা এবং আইসিইউ বেডের সংখ্যা। তাছাড়া মৃত্যুর হারও আছে ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছেন ২০০জনের কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ২৩১জন,যেটি দু’দিন আগেই জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ঈদের ছুটিতে করোনা শনাক্তের হার কিছুটা কম হলেও তা নমুনা পরীক্ষার তুলনায় বেশি। ছুটির প্রথম দিনেই শনাক্তের হার ৩০শতাংশের ওপরে দাঁড়িয়েছে। দেশে মোট মৃত্যু পেরিয়ে গেছে ১৮হাজার। আতঙ্কের তথ্য হলো- এর অর্ধেক মৃত্যুই ঘটেছে সর্বশেষ সাড়ে তিন মাস সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ গত বছরের মার্চ থেকে শুরু করে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৩মাসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে যত মানুষ মারা গেছেন,তার চেয়েও বেশি মানুষ মারা গেছেন এ বছরের এপ্রিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সময়ে।
এমন উদ্বিগ্ন পরিস্থিতির মধ্যেও ঈদের আগে শিথিল করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। তাতে আবারও স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে মানুষ। সর্বশেষ আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সংক্রমণ আর মৃত্যু কোনোটাই কমানো যায়নি। ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ আজ ২৩জুলাই ভোর ৬টা থেকে আবারও শুরু হবে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। তবে কিছু সময়ের জন্য শিথিল করে দিয়ে পুনরায় লকডাউনের মধ্যে আশার আলো খুব একটা দেখছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সত্যিকার অর্থে যদি কঠোর লকডাউন পালন করা যায় এবং তার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরীক্ষা, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যায় তাহলে সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তারা। তাছাড়া শিথিল লকডাউনের কারণে যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঈদের ছুটিতে যাতায়াত করেছেন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে, তার প্রতিফলন ঈদের পরপরই পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।
সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সেল বলেন, ‘গত ১ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট যে বিধিনিষেধ ছিল কোনোভাবেই তাকে লকডাউন বলা যাবে না। এ সময় অনেক হেলাফেলা করা হয়েছে। মানুষ যার যার জায়গায় সবকিছুই করেছে। এতে লকডাউনের যে সুফল তা কোনোভাবেই আশা করা উচিত না। এখন খুলে দেওয়ার পর সেটা আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। আজকের (২২ জুলাই) রেজাল্ট বলছে, সংক্রমণের হার এখনও অনেক বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও একই কথা বলছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো একটা ক্রিটিক্যাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যা হচ্ছে তা নিয়ে তো আমাদের প্রচণ্ড শঙ্কার মধ্যে থাকা উচিত।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন,‘লকডাউন খুব একটা কাজে দেবে না। কারণ,ঈদের সময় আমাদের যতগুলো মানুষ বাইরে গেছে,এরমধ্যে বেশ কিছু ফিরে আসবে। লকডাউন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সংক্রমণ ট্রান্সফার বন্ধে সাহায্য করে। সংক্রমণের হার কমাতে সাহায্য করে না। সংক্রমণের হার কমাতে গেলে একজন একজন করে টেস্ট করে আইসোলেশনে নিতে হবে অথবা বাসাটিকে কোয়ারেন্টিনের আওতায় নিতে হবে। এছাড়া কিন্তু জেনারেল লকডাউনে এটা কমবে না। লকডাউন করতে হলে ‘রিয়েল লকডাউন’ লাগবে এবং সেটি যদি ৩ সপ্তাহ অন্তত করা যায় তাহলে লেভেল কমে যাবে। অনবরত কিন্তু রিয়েল লকডাউন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক কমপ্লিকেশন আছে। রিয়েল লকডাউনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া সরকারের সক্ষমতার একটা ব্যাপার আছে। সুতরাং যেভাবে লকডাউন হয়ে আসছে তা দিয়ে কিছু হবে না। তাই সামনে একটা কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন,‘লকডাউনের বিকল্প নেই। তবে তার সঙ্গে কিছু উপাদান যুক্ত হতে হবে, তাহলে তাতে কাজ হবে। লকডাউনের সঙ্গে আইসোলেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং,টেস্টিং,কোয়ারেন্টিন যুক্ত করতে হবে। ঈদের সময় যারা বাড়ি গেছে,তাদের মধ্যে থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি চিহ্নিত করে আইসোলেশনে নেওয়া হয়, তাতে সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে।