শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : মহান মে দিবসের ঐতিহাসিক শিক্ষাকে সামনে রেখে মজুরি দাসত্ব উচ্ছেদ করে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার দৃপ্ত শপথ আর অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা আন্তজাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস “মহান মে দিবস” পালন করে। ১ মে বুধবার সকাল ১১ টায় মৌলভীবাজার পৌর মিলনায়তনে জমায়েত হয়ে লাল পতাকা ও বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন সহকারে এক বর্ণাঢ্য র্যালী শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে পৌর মিলনায়তনে মহান মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুশ শহীদ সাগ্নিক। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ সুমন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের মোঃ সোহেল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা, কমলগঞ্জ উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোস্তাক মিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, নারী চা-শ্রমিক নেত্রী লক্ষীমনি বাক্তি, শ্রমিকনেতা মোঃ দুলাল মিয়া ও গিয়াস মিয়া, হোটেল শ্রমিকনেতা মোঃ শাহিন মিয়া প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন ১৮৮৬ সালে রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণি সামাজিক স্বীকৃতি এবং বিশ্বব্যাপী ৮ ঘন্টা শ্রম, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘন্টা বিনোদনের দাবি প্রতিষ্ঠিত করে। ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস এবং মহান মে দিবসে ছুটি কারো দান নয় বরং শ্রমিক শ্রেণির রক্তস্নাত পথে অর্জিত অধিকার। বক্তারা শ্রমিক শ্রেণির মহান শিক্ষা গুরু কমরেড এঙ্গেলেসের বক্তব্য উদৃত করে বলেন ‘মে দিবসের সংগ্রাম শুধু মাত্র ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, মে দিবসের সংগ্রাম শ্রমিক শ্রেণির মজুরি দাসত্ব ব্যবস্থার উচ্ছেদের অবিচ্ছেদ্য সংগ্রাম।’ তাই আজকে প্রতিক্রিয়াশীল মহলসহ বিভিন্ন মহলের উদ্দেশ্যমূলকভাবে মে দিবস পালনের বিপরীতে শ্রমিকশ্রেণিকে মে দিবসের বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করে মজুরি দাসত্ব উচ্ছেদ করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত শপথ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন বাজার ও প্রভাব বলয় পুর্নবন্টন নিয়ে পুঁজি ও শক্তি অনুপাতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা প্রতিদ্ব›িদ্বতা তীব্র রূপ ধারণ করে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট ইসরাইল প্যালেস্টাইনের গাজায় হামাস নির্মূলের নামে যে আগ্রাসন ও গণহত্যা চালায় তা প্রায় দেড় বছর হতে চললেও ইসরাইল তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এ প্রেক্ষিতে যুদ্ধ বিরোধী চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইল সরকার গাজাকে জনশূন্য করার লক্ষ্যে পুণরায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার প্রতিপক্ষ চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে তার ইন্দো-প্যাসিফিক(ওচঝ), কোয়াড, স্কোয়াড, অকাস ইত্যাদি জোট প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধ তৎপরতার প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদী চীন যুক্তরাস্ট্রের বিরুদ্ধে সকল রূপের যুদ্ধের জন্য প্রস্তত বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে। এ প্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার বিপদের মুখে। এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নয়াউপনিবেশিক, আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত সামগ্রিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য ও প্রতিপক্ষ চীন-রাশিয়া বাংলাদেশকে স্ব স্ব পক্ষের যুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে ষড়যন্ত্র চক্রান্তে লিপ্ত। এ প্রেক্ষিতে দালাল স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনাকে ৫ আগষ্টে শহুরে ছাত্র-মধ্যবিত্তদের গণআন্দোলনে পট পরিবর্তণে ক্ষমতায় আনে মার্কিনের বিশ্বস্ত দালাল ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে। এর ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান অগ্রসর হয়, প্রতিপক্ষ চীন রাশিয়া স্বীয় অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকে এবং সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারতের অবস্থান দূর্বল ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই সরকার ক্ষমতায় এসে খুনি শেখ হাসিনা সরকারের আমলের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে ৭২-এর সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা মার্কিন পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে অন্তবর্তী সরকার আরাকানে মানবিক করিডোর প্রদানের নামে বাংলাদেশের মাটিকে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার চক্রান্ত চালাচ্ছে। এপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গাক্যাম্প সফর, মার্কিন সামরিক কমকর্তা সফর, মায়ানমারের মার্কিন রাষ্ট্রদুতসহ দুই জন মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সফরের পাশাপাশি মার্কিন দুতাবাস থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মার্কিন নাগরিকদের সফর নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং বাংলাদেশের স্টার লিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর চুক্তি সম্পাদন তাৎপর্যপূর্ণ। এরকম প্রেক্ষাপটে এবারের মে দিবস এমন এক সময়ে পালিত হচ্ছে যখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বাণিজ্য যুদ্ধ, মুদ্রা যুদ্ধ, সর্বাত্মক রূপ ধারণ করে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির ফলে শ্রমিকশ্রেণির মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তেমনি স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধ তথা পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিশ্বযুদ্ধের বিপদ তরান্বিত করছে। এ প্রেক্ষিতে মে দিবসের শিক্ষাকে সামনে রেখে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে আজ মজুরি দাসত্ব উচ্ছেদের আন্দোলন-সংগ্রামে পরিণত করতে হবে। একই সাথে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণিকে সোচ্চার হয়ে অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ন্যায় ও বিপ্লবী যুদ্ধের পথে অগ্রসর হওয়া শ্রমিকশ্রেণির ঐতিহাসিক দায়িত্ব।