শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : মহান মে দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা কমিটির উদ্যোগে লাল পতাকার র্যালী ও শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের অব্যাহত আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে বিগত বছরের ন্যায় এবছরও হোটেল শ্রমিকরা সর্বাতœক ছুটি ভোগ করায় কুলাউড়ায় সকল হোটেল রেস্টুরেন্ট এ দিন বন্ধ ছিল। ১ মে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দলে দলে হোটেল শ্রমিকরা কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে জমায়েত হয়ে সম্মিলিতভাবে লাল পাতাকার র্যালী বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে পৌরসভা মিলনায়তনে কুলাউড়া হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শ্রমিকনেতা আবুল কালামের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কুলাউড়া হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিক খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম-সমাবেশ রমজান আলী পটু। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কুলাউড়া হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ছায়েদ মুন্সী, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সোহেল মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমেদ, হোটেল শ্রমিকনেতা মিজান মিয়া।
সমাবেশে বক্তারা বলেন রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দাবি বাংলাদেশে আজও পরিপূর্ণ মাত্রায় বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয় হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প সেক্টরে শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, নিয়মিত মজুরি পরিশোধের আইন থাকলেও মালিকরা তা মানে না আবার সরকারও তা বাস্তবায়নে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এছাড়া হোটেল সেক্টর, স’মিল, নির্মাণ ও পরিবহন সেক্টরে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের নিয়ম উপেক্ষিত। এমনই এক বাস্তবতায় পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে ১৩৯তম মহান মে দিবস, তাই আজ বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ নিতœতম মজুরি ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রসহ সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। মে দিবসের শিক্ষা হচ্ছে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের সংগ্রামকে শ্রেণি বৈষম্য উচ্ছেদের লক্ষ্যে অগ্রসর করা। মহান মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির ঐক্য ও সংহতি প্রকাশের দিন। এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ( অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি ও উৎসব বোনাস প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হন। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সমাবেশ থেকে আসন্ন ঈদুল আযহায় মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর, অবিলম্বে হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ, দফায় গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুর দাবি জানান।