1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবস- পরমাণু যুদ্ধের বিস্তার রোধে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১
  • ২৩৯ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরী

আগস্ট মাস বিশ্ব ইতিহাসের সর্বপ্রথম আণবিক বিস্ফোরণের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিতে রঞ্জিত। দ্বিতীয় বিশ্ব মহাযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) শেষ অধ্যায়ে পৃথিবীর সর্বপ্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরণে জাপানের দুটি বন্দর নগরী ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট একটি আমেরিকান সমর বিমান হিরোশিমার উপর আকস্মিক আণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দুই লক্ষ লোক নিহত হয় এবং চার লক্ষ মানুষ অধুষ্যিত হিরোশিমা নগরী একটি দগ্ধ বিরান প্রন্তরে পরিণত হয়। সমগ্র শহর ৭৫ বছর আগে এই দিনে গগণবিদারী শব্দে কম্পিত হয়ে উঠে এবং আগুন বিস্ফোরিত হয়ে ভূমি এলাকার প্রায় ৯২ শতাংশ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখায় ও আণবিক বিস্ফোরণের বিষাক্ত উত্তাপে মানুষ জীবন্মৃত হয়ে পড়ে, শরীর থেকে চামড়া খসে যায় এবং বিকৃত নগ্ন দেহে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে। আণবিক বোমার বিস্ফোরণে আহত মানুষদের রক্ত বিষাক্ত হয়ে যায় এবং তারা ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির শিকারে পরিণত হয়। বিগত ৬৫ বছরের সময়সীমায় এসব রোগ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সংক্রমিত হচ্ছে। আণবিক বোমার শিকারে বেঁচে থাকা এসব লোকদের জাপানী ভাষায় ‘হিবাকুমা’ নামে অভিহিত করা হয়।
পরবর্তী ৯ আগস্ট তারিখে আমেরিকান যুদ্ধ বিমান নাগাসাকি নগরীতে আবার আণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে ঐ নগরীও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। অসংখ্য মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হয় এবং জীবন্মৃত ব্যক্তিরা আণবিক বিস্ফোরণের বিষাক্ত উত্তাপের প্রতিক্রিয়া বহন করে ক্যান্সারসহ নানা কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন-যাপন করছে।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষ আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠল। ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে এ মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে এশিয়া ভূখন্ডে জাপানের পরাজয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটল। জাপান আমেরিকার কাছে আতœসমর্পণ করল কিন্তু সাগর তীরবর্তী পাহাড়ঘেরা অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভিত এ দুটি ছোট নগরী আণবিক ধ্বংসলীলার প্রতীক হয়ে শান্তিকামী মানবজাতিকে আতংকিত করল।
১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে জাপানে আমার ভ্রমণকালীন সময়ে হিরোশিমা যাওয়ার সুযোগ হয়। জাপান বুদ্ধ সংঘের সভাপতি সে দেশের প্রবীণতম ধর্মীয় গুরু নিচিদাতসু ফুজি হিরোশিমা ও নাগাসাকির আনবিক বিস্ফোরণের প্রতিবাদে ‘আণবিক ও পারমাণবিক অস্ত্র’ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের দাবীতে পৃথিবীব্যাপী শান্তি আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৮২ সালের এপ্রিলে তাঁর নেতৃত্বে জাপানের রাজধানী টোকিওতে সাধারণ ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দাবীতে পৃথিবীর ৬০টি দেশের সকল ধর্মীয় কর্মীদের অংশগ্রহণে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রবীণতম ধর্মীয় গুরু সম্প্রতি প্রয়াত সংঘরাজ শীলালঙ্কার মহাথেরও সম্মেলনে যোগদান করেন। পাঁচদিনব্যাপী সম্মেলন শেষে তিনি জাপান বুদ্ধ সংঘের অতিথি হিসাবে হিরোশিমা সফর করেন। এ সময় আমিও সেখানে ছিলাম। টোকিওতে কর্মরত দূতাবাসের মি. সচিবের মাধ্যমে শীফা নফীর সাথে আমার পরিচয় হয়। আমরা একই সঙ্গে এ অনুপম সুন্দর নগরীর উপর আনবিক ধ্বংসলীলার ইতিহাস প্রত্যক্ষ করি। একটি রৌদ্রস্নাত সকালে ৩৮ বছর আগে আমরা যখন হিরোশিমার শান্তি স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করি, তখন দেখতে পাই চারীদিকে চেরী ফুলের সমারোহে অবস্থিত স্মৃতিসৌধ আণবিক বোমা বিস্ফোরণের আঘাতে নিহত শহীদদের স্মৃতিতে উৎসর্গকৃত। ‘ওহফঁংঃৎরধষ চৎড়সড়ঃরধং ঐধষষ’ নামে অভিহিত যে প্রাসাদোপম ভবন এর উপর প্রথম আণবিক বোমা নিক্ষিপ্ত হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে দেখলাম, ভবনটি ধ্বংসলীলার স্তম্ভ ও স্বারক হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে এবং একটি মার্বেল ফলকে লেখা রয়েছেঃ “প্রায় ৬০০ মিটার উপর থেকে এ ভবনে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয় এবং তাতে আবার দুই লক্ষ লোক নিহত হয়। দুই কিলোমিটার ব্যাপী এলাকা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়। এ মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির সত্য পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। আণবিক বোমা বিস্ফোরণের এ স্থানে শান্তি স্মারক পার্ক জাপানের ও জাপানের বাইরের লোকদের বদান্যতায় নির্মীত হয়েছে। (ইংরেজী থেকে অনুবাদ)”। একটু দূরে আনবিক ধ্বংসলীলায় নিহত শিশুদের স্মৃতিতে নির্মীত এক স্মৃতিসৌধ। তার পাশে একটি ছোট আকারের বৌদ্ধ মন্দির। যেখানে নিহত ব্যক্তিদের ভস্ম সংরক্ষিত রয়েছে। ফুল শোভিত পার্কের অন্যদিকে পৌঁছে দেখলাম, একটি জলধারার পাশে নির্মীত শহীদদের জন্য স্মৃতি স্তম্ভের সামনে অনির্বাণ শিখা প্রজ্জ্বলিত হয়ে রয়েছে এবং একটি মার্বেলের গায়ে খোদিত রয়েছে অবিস্মরণীয় একটি বাক্যঃ “শান্তিতে ঘুমাও এবং এ ভুলের পুনরাবৃত্তি আর কখনো হবে না।” মৌন গম্ভীর প্রার্থনায় আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। পার্কের সর্ব দক্ষিণ প্রান্তে চবধপব গবসড়ৎরধষ গঁংবঁস এর প্রবেশ পথে একটি ফলকে লেখা রয়েছে “ এ যাদুঘর দুই লক্ষ নিহত শহীদদের পক্ষে নীরব ভাষায় ইতিহাসের কথা বলবে এবং হিরোশিমায় আনবিক বিস্ফোরণের সময় কি ঘটেছিল, তার নির্মম তথ্য পৃথিবীর সামনে তুলে ধরবে।” যাদুঘরের ভেতরে বিভিন্ন গ্যালারী ঘুরে দেখলাম। আনবিক ধ্বংসলীলার নিদর্শন, পাথর ও অনেক স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসলীলার শক্তি এবং যারা বেঁচেছে, তাদের উপর আণবিক তাপ বিকিরণের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের মর্মান্তিক চিত্র আলো ও রঙের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ায় একটি কাঁচের আধারে দেখানো হচ্ছে এবং তাতে দেখা যায়, দূর দিগন্তে গনগনে রঙীন ভীষণ বর্ণের পটে সাদা-লাল আবহাওয়ায় বিশাল ধূ¤্র বিকীর্ণ হয়ে মেঘের মতো মানুষেরা এদিক সেদিক যখন দৌড়াচ্ছে, তখন তাদের শরীর থেকে চামড়া ঝুলে বেরিয়ে পড়ছে। হিরোশিমা ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের আগুনের সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সেদিন যেন সময় স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল সমগ্র যাদুঘর ঘুরে দেখে একটি মর্মান্তিক দুঃখের অনুভূতি আমাদের আপ্লুত করে ফেলল। যাদুঘরের বাইরে পার্কে অসংখ্য পায়রা গাছে এবং মাটিতে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব পায়রা শান্তির প্রতীক হিসাবে হিরোশিমার মর্মবাণী যেন জানিয়ে দিচ্ছে। সবশেষে যাদুঘরের পাশে একটি হলে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমার মর্মান্তিক ঘটনাবলী সম্বলিত একটি ছায়াছবি ইংরেজী ও জাপানী ভাষায় দর্শকদের আনবিক ধ্বংসলীলার বাস্তব ঘটনাবলী প্রতিভাত করছে।
হিরোশিমা শান্তি পার্কের কয়েক মাইল দূরে জাপানের সর্বোচ্চতম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু নিচিদাতসু ফুজি একটি বিশালাকার বিশ্ব শান্তি মন্দির নির্মাণ করেছেন। হিরোশিমার এ শানিস্তুপের মতো প্রায় ৬০টি স্তুপ তিনি জাপানে এবং পৃথিবীর আরো কয়েকটি দেশে নির্মাণ করেছেন। সে স্তুপের সাথে নির্মিত বৌদ্ধ মন্দিরে আনবিক বোমা বিধ্বস্ত ‘হিবাকুশা’ দের অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ আমাদের ঘটে। এক বয়স্ক প্রবীণ মহিলা স্মৃতিতে হারিয়ে গেলেন এবং বললেন, আনবিক বোমা বিস্ফোরণের পর কালো বৃষ্টি অন্ধকারে আগুনের মধ্যে তিনি অন্যদের সাথে হেঁটে গিয়েছেন। শরীরের চামড়া খসে পড়েছে, তবু জীবিত লোকেরা প্রাণপণে এদিক সেদিক দৌড়ে গেছে। তিনি বলেন, সে মর্মবিদারী স্মৃতি তিনি ভুলে যেতে চান কিন্তু কখনো কখনো স্মৃতির আক্রমণে তিনি স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হন। ঘটনার ৭৫ বছর পরেও এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত আনবিক বোমায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অসুখ সংক্রমিত হচ্ছে।
এখন হিরোশিমা একটি উজ্জ্বল আলোকিত নগরী। তিনদিকে পাহাড়ঘেরা সমুদ্র থেকে অদূরে এ নগরী তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের আনন্দে কলহাস্য মুখর। কিন্তু ১৯৪৫ সালে ৬ আগস্টের স্মৃতি হিরোশিমার জনগণকে, জাপানের নাগরিকদের এবং বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষদের পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব রচনার শপথে উদ্দীপিত করে। এ আগস্টের ৬ তারিখ জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ শান্তির অন্বেষায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শান্তিকামী প্রতিনিধিরা হিরোশিমায় এসে পারমানবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে সমবেত হয়েছেন।
কালের প্রবাহে ৭৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। তবু হিরোশিমা ও নাগাসাকির স্মৃতি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় সার্বিক নিরস্ত্রীকরণের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। হিরোশিমা স্মৃতি আমার হৃদয়ে জেগে রয়েছে এবং জেগে থাকবেও আমরণ। সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ০৩.০৮.২০২১

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..