শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে মাদককাণ্ডসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতারের পর আরও ১০-১২ জন সুন্দরী মডেলের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। যারা কিনা ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লেট নাইট পার্টি করে আপত্তিকর ছবি তুলে ও গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এমনকি তারা দু’একটি বিজ্ঞাপন ও ইউটিউবভিত্তিক নাটকে অভিনয় করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের নামে নিজেদের সামান্য পরিচিতও করে।
পুলিশ বলছে, নিজেদের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই সক্রিয়। নিজেদের মধ্যে একটি চক্র গড়ে তুলে এসব মডেলরা ব্ল্যাকমেইলিং করে ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত পিয়াসা ও মৌকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, এসব মডেলদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা মডেল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসে শুরুতে ছোটখাট কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও নিজেদের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। আবার তাদেরই কেউ কেউ ইউটিউবভিত্তিক কয়েকটি নাটকে কাজ করে নিজেদের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এক পর্যায়ে তারা ১০-১২ জন মিলে একটি চক্র গড়ে তোলে। যে চক্রের অন্যতম সদস্য ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ।
জানা যায়, এ চক্রের সদস্যরা বিজ্ঞাপন ও নাটকে কাজের সুবাদে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পার্টিতে যেতেন। সেখানে গিয়ে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। ধনীর দুলালদের সঙ্গে সখ্যতার পর অনেক সময় পার্টি শেষে তাদের সঙ্গে রাত কাটাতেন। লিপ্ত হতেন অসামাজিক কার্যকলাপে। কথিত এসব মডেলদের মধ্যে অনেকে লেট নাইট পার্টির দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরার ধারণ করতেন।
পার্টি শেষে হওয়ার কয়েকদিন পর ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও ধনীর দুলালদের পাঠিয়ে তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করতেন এই কথিত মডেলরা। অনেকেই নিজেদের মান-সম্মান ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে চক্রটিকেহ টাকা দিয়ে ভিডিও ডিলিট করাতেন। যারা টাকা দিতে রাজি হতেন না তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে বা সামাজিক মাধ্যমে এসব ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো। তখন তারা বাধ্য হয়েই টাকা দিতেন।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পিয়াসা ও মৌয়ের মোবাইল পরীক্ষা করে এমনই কয়েকটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিও দিয়েই তারা মূলত ব্ল্যাকমেইল করতেন।
ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলের বারে কিংবা পার্টি সেন্টারে এসব মডেলদের নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লেট নাইট পার্টি হতো। এসব পার্টিতে সমাজের বিত্তশালী পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। তারা মদ্যপান করে ও উদ্যাম নাচে-গানে মডেলদের নিয়ে রাত কাটাতেন।
গত রবিবার (১ আগস্ট) রাত ১টার দিকে রাজধানীর বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে পিয়াসাকে ও মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে মৌকে আটক করা হয়। এসময় তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা জব্দ করা হয়।
পরদিন সোমবার (২ আগস্ট) গুলশান থানায় পিয়াসা ও মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওইদিন গুলশান থানায় মাদক মামলায় পিয়াসাকে ১০ দিন ও মোহাম্মদপুর থানায় মাদক মামলায় মৌকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত মডেল পিয়াসার ৩ দিন এবং ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালত মডেল মৌয়ের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।