সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ অপরাহ্ন
মশাহিদ আহমদ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় পরিকল্পিত অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৩১দিন পর আজ ৭ আগষ্ট রাতে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী কম্পা রানী বর্মন এর লাশ মৌলভীবাজারে এসে পৌছেছে। সে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৫নং আখাইলকুড়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের দিনমজুর পখরা চন্দ্র বর্মন এর কন্যা এবং চাঁনপুর সুফিয়া তরফদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আজ শনিবার রাতে লাশটি একটি এ্যম্বুলেন্সে তার গ্রামের বাড়ীতে পৌছার সাথে সাথেই সেখানে স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়। দৈনিক মৌমাছি কন্ঠর সাংবাদিকরা সরজমিনে পৌছলে লোকজনদের মধ্যে কেউ চোঁখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। নিহত শিশুটির বাবা পখরা চন্দ্র বর্মন, মা- সুমা রানী বর্মন, ভাই দুর্জয় বর্মন, ফতি রানী বর্মন, বীথি রানী বর্মনসহ একাধিক স্বজনরা অভিযোগ করেন- গত ৮ জুলাই বিকেলে সজীব গ্রুপে অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানার ছয়তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের ঘটনায় শ্রমিকরা ছাদঁ থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং সে সময় আগুনে দগ্ধ হয় অনেকেই। এ সময় মালিক পক্ষ শ্রমিকদের বাঁচাতে এগিয়ে না এসে প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ইউনিট শ্রমিকসহ বন্ধ করে দেয় এবং মূল ফটকে তালাবন্ধ করে দেয়। তালা বন্ধ অবস্থায় শ্রমিকরা মোবাইল ফোনে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তুু মালিক পক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় সেই তালা বন্ধ ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটে থাকা সকল শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা লোকজন আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত হন। প্রাথমিক ভাবে কারখানার ৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিহত হন মর্মে নিশ্চিত হওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাদেরকে। ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। দৈনিক মৌমাছি কন্ঠর সাংবাদিকরা নিহতের বাড়িতে পৌছলে ঘটনাস্থলে থাকা শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টুন থেকে হঠাৎ করে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। আগুন বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছুটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। অগ্নিকান্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে ৮জনের নাম উলেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিন দুপুরেই রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাসেম (৭০), ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাসীব বিন হাসেম (৩৯), ডিরেক্টর তারেক ইব্রাহীম (৩৫), ছেলে তাওসিব ইব্রাহিম (৩৩) ও তানজিম ইব্রাহিম (২১)সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৭ জুলাই জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে ৫২ জন‘র নিহতের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র নারায়ণগঞ্জ জেলা ইন্সপেক্টর মো আতাউরসহ ৪সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। অপরদিকে, কারখানটিতে শিশুশ্রমের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে শ্রম আদালতে অপর একটি মামলা দায়ের করেন।