বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: ‘গাছ হিলাইলে রুপিয়া মিলিবে’ এমন লোভ দেখিয়েই এদেশে আনা হয়েছিলো চা শ্রমিকদের। অথচ আজও ভোটের অধিকার ছাড়া কিছুই পায়নি অবহেলিত এ জনগোষ্ঠী। কেবল তাই না, মহামারী করোনায় যখন টালমাটাল বিশ্ব তখন চা শ্রমিকদের উপসর্গে মৃত্যু বাড়লেও বাগান অভ্যন্তরে নেই নমুনা সংগ্রহের কোন উদ্যোগ। তাইতো মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের লক্ষাধিক শ্রমিক আছেন করোনার ঝুঁকিতে। মৃতরা পাচ্ছেন না কোন প্রণোদনা। আক্রান্তদের করা হচ্ছে না কোন সহায়তা।
চা বাগান সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের ১৬৩ চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলাতেই ৯২টি। আর এসব বাগানে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক শ্রমিকের বসবাস। এর মধ্যে নিবন্ধিত চা শ্রমিক আছেন ৭৫ হাজার। নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সব মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার চা শ্রমিক বাগানে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। আর এ জেলায় মোট জনসংখ্যার ২০ লক্ষ। সে হিসেবে ২৫ শতাংশই চা শ্রমিক। এ অবস্থায় চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে উপসর্গ থাকলেও বাগান অভ্যন্তর থেকে নমুনা সংগ্রহের কোন উদ্যোগ না থাকা এবং কাজে অনুস্থিত থাকলে মজুরি না পাওয়ার ভয়ে অধিকাংশই থাকছেন পরীক্ষার বাইরে। আর উপসর্গ নিয়েই করছেন কাজ। ফলে সংক্রমণ বাড়ছেই।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী অভিযোগ করে বলেন, চা বাগানে করোনা পরীক্ষা হয় না বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকজন পরীক্ষা করাচ্ছে। বাগান অভ্যন্তরে নমুনা জমা দেওয়ার উদ্যোগ না থাকা এবং নমুনা দিতে গিয়ে শ্রমিকদের দিন চলে গেলে মজুরি মেলে না। তাই সামান্য দৈনিক মজুরিতে কাজ করা এসব শ্রমিকরা করোনা পরীক্ষা করান না। সে ক্ষেত্রে বাগান অভ্যন্তরে নমুনা দেওয়ার এবং টিকাদান কিংবা নমুনা পরীক্ষায় যে দিন ব্যয় হবে এর মজুরি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তা না হলে চা শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে।
এদিকে জেলায় সাড়ে চার লক্ষাধিক চা শ্রমিক থাকলেও সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মাত্র ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪শত ৩৯ জন। এর মধ্যে জুড়ি ৭২১, কমলগঞ্জ ৪০১, শ্রীমঙ্গল ১৩১৭ জন। কিন্তু কুলাউড়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি চা বাগান থাকলেও সিভিল সার্জন থেকে এর তথ্য পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, বাগানে টিকা কার্যক্রমের সময় করোনা সম্পর্কে সচেতন করি। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়। এনজিও পার্টনাররাও বিভিন্ন চা বাগানে সেশন পরিচালনা করে। সরকারি প্রোগ্রাম যেমন মক সমাবেশের সময় সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান এনডিসি পিএসসি মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের যত ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন তা করা হয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেনতা মেনে উৎপাদন করা যায় সেটা করা হচ্ছে। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সম্মুখ জ্ঞান দেয়া হচ্ছে যাতে এই রোগে আক্রান্ত না হয়।