বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা সরকারি কলেজের নৈশ্যপ্রহরী মোস্তফা উদ্দিন বাদলের বিরুদ্ধে চাকরির তথ্য গোপন করে আইনজীবী সহকারি (মোহরার) হিসেবে লাইসেন্স গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সহকর্মী (আইনজীবী সহকারি) ও ক্লায়েন্ট (মক্কেলের) সঙ্গে অসদাচারণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ এনে লাইসেন্স বাতিলসহ বাদলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) রাজিব ইসলাম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আইনজীবী সমিতি মোস্তফা উদ্দিন বাদলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে তাকে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসঙ্গে দুটি চাকরি করার কোনো নিয়ম নেই। এক্ষেত্রে বাদলকে বড়লেখা সরকারি কলেজের নৈশ্যপ্রহরী চাকরি ছাড়তে হবে। নাহলে তার লাইসেন্স বাতিল হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোস্তফা উদ্দিন বাদল দীর্ঘদিন ধরে বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে চাকরি করছেন। একইসঙ্গে তিনি বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) হিসেবেও কাজ করছেন। অভিযোগ ওঠেছে, কলেজের নৈশ্যপ্রহরী চাকরির তথ্য গোপন করে তিনি আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত লাইসেন্স (নং-২৩৩) নিয়েছেন। বিধি অনুযায়ী একসঙ্গে দুটি চাকরি করার নিয়ম নেই। কিন্তু মোস্তফা উদ্দিন বাদল বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে চাকরির পাশাপাশি বিধি ভেঙে বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) হিসেবে লাইসেন্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু বাদল লকাডউন উপেক্ষা করে আদালতে ঘোরফেরা করতেন। আইনজীবী সহকারিদের বসার কক্ষ বন্ধ থাকলেও তিনি জোরে তালা ভেঙে বসে কাজ করতেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মী ও ক্লায়েন্টের (মক্কেলের) সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
অভিযোগকারী বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) রাজিব ইসলাম বলেন, মোস্তফা উদ্দিন বাদল বড়লেখা সরকারি কলেজের নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। কিন্তু তিনি এই তথ্য গোপন করে আইনজীবী সহকারিও (মোহরার) হিসেবে কাজ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী কেউ সরকারি চাকরি করলে মোহরার হিসেবে কাজ করতে পারবে না। কিন্তু বাদল বিধি ভেঙে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি প্রায় সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মী ও ক্লাইন্টদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তিনি জোরপূর্বক আমাদের বসার কক্ষের তালা ভেঙে কাজ করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাকে হুমিক দেন। খারাপ ব্যবহার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইনজীবী সহকারি (মোহরার) মোস্তফা উদ্দিন বাদলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। একসঙ্গে দুটি চাকরি করার নিয়ম আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো সুদত্তর দিতে পারেননি।
বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জায়েদ আহমদ বলেন, মোস্তফা উদ্দিন বাদল আমাদের কলেজের নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে চাকরি করছে। আমি জেনেছি, সে বড়লেখা আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) হিসেবেও কাজ করছে। জানার পর তাকে সতর্ক করেছি। এরপরও সে যদি কথা না মানে তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালিক বলেন, বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারি (মোহরার) মোস্তফা উদ্দিন বাদল বিরুদ্ধে আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে দুটি চাকির করা যাবে না। কেউ চাকরি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।