মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি :: ইতিহাস, ইতিহ্যের ধারক-বাহক পুণ্যভূমি সিলেটে একের পর এক মোড়ে মোড়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে নগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার মোড়ে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত ও নির্মাণাধীন এসব স্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনা হলেও তাতে কর্ণপাত করেননি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সর্বশেষ আম্বরখানা মোড়ের স্থাপনাকে ঘিরে আবারও আলোচনায় এসেছে ’অপরিকল্পিত স্থাপনা’ নির্মাণের বিষয়টি। সদ্য নির্মাণ করা এই স্থাপনাকে অনেকেই তাচ্ছিল্য করে ‘ঝুনঝুনি চত্বর’ বা ‘ললিপপ চত্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে এই স্থাপনা নিয়ে কোনো কিছুই জানা নেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী বিধায়ক রায় চৌধুরীর। তিনি সিসিকের প্রধান নির্বাহী নুর আজিজুর রহমান বা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। আর এই দুজনকে কয়েকবার মুঠোফোনে কল করলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, নতুন এই চত্বর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই এই চত্বরকে ঘিরে নানা ধরণের ব্যঙ্গ করছেন। কেউ কেউ এর নাম দিয়েছেন ‘ঝুনঝুনি চত্বর’। আবার অনেকেই এটিকে চলছেন ‘ললিপপ চত্বর’। এই সমালোচনায় যুক্ত হয়েছেন সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনিও স্থাপনাটি নিয়ে বিব্রত বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া এই স্থাপনার সমালোচনা করেছেন স্থপতি, পরিবেশকর্মী, নাট্যকর্মী, সুধিজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সিলেটের লিডিং ইনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাশ আম্বরখানা মোড়ের এই স্থপনাকে বলেছেন, অসম্ভব, অদ্ভুত, অমূল্য, অবাক, অদৃশ্যপূর্ব, অজ্ঞান, অবোধ ও অসুস্থ সুন্দর!
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, এটাকে আমরা সর্বোচ্চ ‘ঝুনঝুনি চত্বর’ বলতে পারি। এর আগেও নগরে বিভিন্ন চত্বরে এমন সব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যার কোনো অর্থই নেই। এর মধ্যে নাইওরপুল পয়েন্টে পুলিশ কমিশনারের সাবেক কার্যালয়ের সামনে করোনাভাইরাস আকৃতির একটি স্থাপনা আছে। কোনোভাবেই এটার কোনো অর্থ প্রকাশ পায় না। নাইওরপুল পয়েন্টে কলস আকৃতির একটি স্থাপনা আছে, এই কলসের সঙ্গে গ্রাম-বাংলার কলসের কোনো মিল নেই।
তিনি আরও বলেন, এর বাইরে আমরা লক্ষ্য করেছি নগরের বিভিন্ন চত্বরে ধর্মকে ব্যবহার করে প্রতিটি পয়েন্টে ধর্মীয় স্থপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ধর্মকে টেনে রাস্তায় নামানোও এক ধরনের স্ট্যান্টবাজি। নগরের বিভিন্ন চত্বরে সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে রেখে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে।
সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আম্বরখানা সিলেট নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেট নগরে প্রবেশের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এটি। এই মোড় থেকে পূর্বদিকের রাস্তা চলে গেছে শাহী ঈদগাহ হয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজের দিকে। সেখান থেকে সিলেট সেনানিবাস, তামাবিল সীমান্ত ও জাফলং। পশ্চিমের রাস্তা ধরে চলে যাওয়া যায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প নগরী ছাতক ও সুনামগঞ্জ জেলা সদরে। আর দক্ষিণে সোজা কিছুদূর পাড়ি দিলেই দরগা-ই-হযরত শাহ জালাল (রহ) ও সিলেট নগরের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেই আম্বরখানা পয়েন্টে সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটি দৃষ্টিকটু, অর্থহীন, অরুচিকর স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কিম্ভুত আকৃতির স্থাপনার নামকরণ হয়েছে ‘ঝুনঝুনি চত্বর’, যা নিয়ে মানুষ হাসি-তামাশা করছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সূচনাকাল থেকে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই ঝুনঝুনি নির্মাণে আমি বিব্রতবোধ করছি।