1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

আফগানিস্তান ইস্যু: দুশ্চিন্তায় পূর্ব এশিয়া, চীনের পোয়াবারো!

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১
  • ২৬৬ বার পঠিত

বিবিসির বিশ্লেষণ: তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার এক ঝটিকা সফরের শুরুতে রবিবার সিঙ্গাপুরে এসে নামেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। আফগান পরিস্থিতি দিয়ে উদ্বিগ্ন এই অঞ্চলকে ভরসা দিতে তিনি তাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেয়। কিন্তু তার এই মুখের কথায় কি এশিয়ার এই অঞ্চল নিশ্চিন্ত হবে? যুক্তরাষ্ট্রকে খাটো করতে চীন যেভাবে আফগান পরিস্থিতিতে বিরল একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে তা কি আটকাতে পারবেন কমালা হ্যারিস?

উদ্বিগ্ন কানাঘুষা

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং সোমবার সতর্ক করেন যে আফগানিস্তানে যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে আঞ্চলিক অনেক দেশ নজর রাখছে।এশিয়ার এই অঞ্চলে আমেরিকার সবচেয়ে বড় দুই মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। এই দুটো দেশে আমেরিকার প্রতি ভরসা হয়ত সামগ্রিকভাবে ততটা এখনো তেমন পোড় খায়নি, কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ আর উদ্বেগের সুর শোনা যাচ্ছে। এই দুই দেশের রক্ষণশীল কিছু মহল থেকে এখন নতুন করে খোলাখুলি বলা শুরু হয়েছে যেকোনো সামরিক সংঘাতে আমেরিকা পাশে এসে দাঁড়াবেই- এই ভরসায় না থেকে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনো হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তার নেওয়া ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে এই দুই দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্কে চাপা টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন টিভি এবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তান আর দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান-তাইওয়ান এক নয়, আফগানিস্তানের সাথে এই মিত্র দেশগুলোর ‘মৌলিক তফাৎ’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলে না।অনেক বিশ্লেষকও অবশ্য বাইডেনের এই কথার সাথে একমত। তারও মনে করেন, পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর সাথে আফগানিস্তানের বিস্তর ফারাক। এই দেশগুলোতে শক্ত সরকার রয়েছে এবং সামরিক দিক থেকেও তারা বেশ শক্তিধর। রাজনৈতিক এবং অন্য অনেক দিক থেকে তাদের সাথে আমেরিকার মূল্যবোধের মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য রয়েছে। এবং অনেক দিন ধরেই এই দেশগুলো আমেরিকার শক্ত সামরিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগী।অনেক বিশ্লেষক এও মনে করেন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ এশিয়ায় আমেরিকার সামরিক কৌশলের কেন্দ্রে এবং অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকা ওই দেশ থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়ে যাবে, সে সম্ভাবনা খুবই কম।

‘ধ্বংসাত্মক আমেরিকা’

কিন্তু আফগানিস্তানের পরিস্থিতির জেরে একটি অনিশ্চয়তার যে আবর্ত তৈরি হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে চীন আমেরিকাকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে তাদের প্রচারণা বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত সপ্তাহে বলেন, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার তাড়াহুড়ো করে প্রত্যাহারের ফলে ‘মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখা দিয়েছে। চীন সরকারের মধ্যে কট্টরপন্থীরা আরও একধাপ এগিয়ে কথা বলছেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান একাধিকবার আফগান পরিস্থিতিকে ‘সায়গন পতনের’ সাথে তুলনা করেছেন।

অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার সহকর্মী হুয়া চুনইং যুক্তরাষ্ট্রের গায়ে ‘ধ্বংসাত্মক’ তকমা এঁটে দিয়ে বলেন, ‘যখনই যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশে পা রাখে. আমরা সেখানে অস্থিরতা, বিভেদ, পরিবারের ভাঙ্গন আর মৃত্যু দেখেতে পাই…এগুলোর মধ্যে একটি দেশকে রেখে আমেরিকা কেটে পড়ে।’চীনা সরকারে মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমস তাদের এক সম্পাদকীয়তে তাইওয়ানকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে তাদের উচিত ‘চীনবিরোধী আমেরিকান রথে না ওঠা।’ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে নিয়ে আমেরিকা চীনের সাথে এক ঝুঁকিপূর্ণ কোনো যুদ্ধে কখনই লিপ্ত হবে না।

তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বলে দাবি করে এবং তারা আমেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র কেনে। কিন্তু চীনারা মনে করে তাইওয়ান তাদেরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি অংশ যেটিকে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও পুনরায় মূল দেশের সাথে যুক্ত করতে হবে।

তবে আমেরিকা তাদের বিপদে কতটা রক্ষকের ভূমিকা নেবে তা নিয়ে তাইওয়ানের যে সন্দেহ তাতে পরোক্ষাভাবে বাইডেন নিজেও কিছুটা বাতাস দিয়েছেন। যেমন, এবিসির সাথে তার সাক্ষাৎকারে তিনি তাইওয়ানকে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এক কাতারে ফেলে কথা বলেছেন। কিন্তু যেকোনো যুদ্ধ শুরু হলে আমেরিকা তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে বলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আমেরিকার যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে তাইওয়ানের সাথে তেমন কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই।

ফলে, জো বাইডেন তাইওয়ানকে আদৌ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা নিয়েও তাইওয়ানকে খোঁটা দিতে ছাড়েনি চীনের সরকারি মিডিয়া।

আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা যেভাবে বেরিয়ে গেল সেটিকে দেখিয়ে চীন এশিয়ার দেশগুলোর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলছে – ‘দেখ আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না।’

‘চীনের এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে এশিয়ায় যেসব দেশের সরকারের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশের জনগণের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো,’ বলেন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. ইয়ান চং।

সরু সুতোর ওপর হাঁটা

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যে চীনের জন্য সোনায় সোহাগা হয়েছে তা বলা যাবে না।

গবেষণা সংস্থা জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া বিশেষজ্ঞ বনি গ্লেজার মনে করেন, আফগানিস্তানের নতুন পরিস্থিতি চীনের জন্য সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই ডেকে আনতে পারে।

‘আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি নিয়ে চীনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। কারণ অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে আফগানিস্তান জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে যাবে,’ বলেন মিজ গ্লেজার।

এই বাস্তবতার কারণেই চীন সরকার গত মাসে তালেবানের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে কথা বলেছে। সেখানে তালেবানের নেতাদের আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শর্ত দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা চলবে না।

তবে চীনা সরকারের সাথে তালেবানের সাথে এই মিত্রতা এবং সম্পর্ক নিয়ে চীনে অনেকের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে এবং সরকারের পক্ষে তাদের মনে ভরসা জোগানো কষ্ট হচ্ছে। গত সপ্তাহে তালেবানের কাবুল দখলের পর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেন, ‘চীন আফগান জনগণের ইচ্ছার মর্যাদা দেয়।’ এই বক্তব্য নিয়ে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক সমালোচনা হয়েছে।

 

নারী অধিকার নিয়ে চীনারা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক সোচ্চার। ফলে, নারীদের বিষয়ে তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করছেন।তাছাড়া, নিজের দেশে চীন সরকার যেখানে ইসলামি উগ্রবাদ সামলানোর যুক্তিতে উইগুরদের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতনমুলক নীতি নিয়েছে, সেখানে তাদের দোরগোড়ায় আরেকটি কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্পর্ক গড়তে হচ্ছে যার ভেতর অনেক চীনা স্ব-বিরোধিতা দেখছে।

‘উইগুরদের ওপর খড়গহস্ত হয়ে চীনা সরকার তাদের জনগণের সামনে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে একটি বার্তা দিচ্ছে। ফলে তালেবানের সাথে ঘনিষ্ঠতার ভেতর চীনা জনগণ একটি স্ব-বিরোধিতা দেখতে পাচ্ছে,’ বলেন ড. চং।

‘চীন এখন চেষ্টা করছে আফগানিস্তানে কৌশলগত সুবিধা যতটা সম্ভব নিশ্চিত করার। কিন্তু এই সুবিধা আসলে শেষ পর্যন্ত কত সুবিধা চীনকে দেবে তা অনিশ্চিত। আমরা এখনও জানি না আফগানিস্তান আসলে কোনো দিকে যাচ্ছে।’

চোখ আমেরিকার দিকে

মিজ গ্লেজারের মতো অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন না যে, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আমেরিকান নেতৃত্বের ‘মৃত্যু ঘণ্টা’ বাজবে। অনেকে বরঞ্চ মনে করেন, এশিয়ায় আমেরিকার মিত্ররা এখন আশ্বস্ত হবে যে, এই অঞ্চলে এখন আমেরিকার মনোযোগ বাড়বে এবং চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় আমেরিকা আরও বেশি মন দেবে।

মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে তার ভাষণে কমালা হ্যারিস এশিয়াতে আমেরিকা কতটা প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ তার একটি ভিশন তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে আমেরিকার যে দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থ এবং প্রতিশ্রুতি রয়েছে সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই …এই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষাও সেই প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।’

গবেষণা সংস্থা আইআইএসএস এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক জেমস ক্র্যাবট্রি বলেন, এই ভরসা দিতে মিজ হ্যারিস ছাড়াও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা এশিয়া সফর করেছেন।

‘তোমরা আমাদের ভুলে গেছ’ – এই যে অভিযোগ তার জবাব দিতে আমেরিকানরা এভাবে সফরে আসছেন’ বলেন ক্র্যাবট্রি। ‘এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে এই সহযোগিতার যেসব কথাবার্তা হচ্ছে তা অর্থ ঠিক কি? এর পরিধি কতটা?’

অনেক বিশ্লেষক বলেন, এশিয়ার তাদের মিত্রদের ভরসা দিতে আমেরিকানদের শুধু মুখে প্রতিশ্রুতি দিলে এখন আর চলবে না, কাজে দেখাতে হবে।

ড. চং বলেন মার্কিন সরকারের এসব প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে যে যুক্তরাষ্ট্রে দুই দলের মধ্যে ঐক্যমত্য রয়েছে তা দেখাতে হবে, জাতিসংঘের সমুদ্র চলাচল বিষয়ক আইন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমোদন করতে হবে এবং প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্য চুক্তি টিটিপিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ফিরতে হবে।

মিস্টার ক্র্যাবট্রি বলেন, ‘এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কি করে তার দিকে এই অঞ্চলের মানুষজন এখন আরো বেশি নজর দেবে। কারণ আফগানিস্তানের কারণে অনেকের মনেই সন্দেহ ঢুকেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করা কতটা ঠিক হবে।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..