মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি খাসিয়া পুঞ্জিতে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ সামাজিক বনায়নের উপকাভোগী কর্তৃক পান জুমের ২৮০০ গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠেছে। ২৫ আগস্ট গভীর রাতে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বেলুয়া পুঞ্জিতে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বেলুয়া পুঞ্জির হেডম্যান হেনরী তালাং ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছেন আরো ৩০-৪০ জন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে সামাজিক বনায়ন নিয়ে উপকারভোগী কর্মধার বাসিন্দা রফিক মিয়ার নেতৃত্বে, বশির মিয়া, হারিছ আলী, হারুন মিয়া, ইসরাইল আলী গংরা পূর্ব বিরোধের জেরে স্থানীয় ডুলুছড়া পুঞ্জির খাসি জনগোষ্ঠীর বিরোধ চলছিলো। এরই জের ধরে ২৫ আগস্ট গভীর রাত আনুমানিক ২টার দিকে পার্শ্ববর্তী বেলুয়া পুঞ্জির পাঁচ বাসিন্দাদের ২৫ একর জমির পানজুমের ২ হাজার ৮শত গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে খাসিদের প্রায় ১৮ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বেলুয়া পুঞ্জি প্রধান (হেডম্যান) হেনরী তালাং বলেন, রফিক গংরা কর্মধার সবক’টি টিলায় বসবাসরত পান জুমের ভূমি সামাজিক বনায়নের দাবি করে জোরপূর্বক জুম দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের পুঞ্জির বাসিন্দাদের পান জুম ধ্বংসের চেষ্ঠায় লিপ্ত থাকে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমরা পুঞ্জিবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছি, সামাজিক বনায়নের নামে আমাদের উচ্ছেদের পায়তারা করছে। এ ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বশির মিয়া ও ইসরাইল মিয়ার সাথে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে মুঠোফোনে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, বনবিভাগ সামাজিক বনায়নের জন্য পাহাড়ে গাছ রোপণ করছে। আমাদেরকে উপকাভোগী করা হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। ডলুছড়া পুঞ্জির বাসিন্দারা দুই সপ্তাহ আগে বনায়নের ৭ হাজার চারা উপড়ে ফেলে। এ ব্যাপারে বন বিভাগ থানায় মামলা করেছিলো। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করার জন্য বনায়ন এলাকা পরিদর্শন করবেন। তদন্তের আগে আমাদেরকে বনায়ন এলাকায় না যাওয়া জন্য বলা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তাঁরা আরো জানান, বেলুয়া পুঞ্জি বনায়ন এলাকা থেকে প্রায় ৫ কিলোমটিার দুরত্ব। সেখানে গিয়ে পানগাছ কাটার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এদিকে বার বার পানের গাছ কর্তনের ঘটনায় কুলাউড়ার সকল খাসি পুঞ্জির আদিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে কাকড়া ছড়া পুঞ্জি, নুন ছড়া পুঞ্জি, সাহেব টিলা পুঞ্জি, ইছলা ছড়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন পুঞ্জির পান জুমে পান গাছ কর্তনে খাসিদের জীবিকায়নের প্রধান মাধ্যম চরম হুমকির মুখে পড়েছে। উল্লেখ্য, পাহাড়ী পুঞ্জিগুলো উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার গভীর অরণ্যে অবস্থিত। পাহাড়ে বসবাসরত খাসি জনগোষ্ঠী ও বনবিভাগ থেকে লিজকৃত ভূমিতে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে এ বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষই থানা ও কোর্টে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তাদের দ্বন্ধ নিরসনে একাধিকবার বৈঠক করে তা নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক ও আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) কুলাউড়ার সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন, পূর্ব পূরুষদের সময়কাল থেকে আমরা পাহাড়ে বসবাস ও পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বনবিভাগ সামাজিক বনায়ন করুক এটা আমরাও চাই। কিন্তুু বনায়নের নামে পানজুম ধ্বংস করে খাসি জনগোষ্ঠীদের উচ্ছেদের অপচেষ্ঠায় চালাচ্ছে একটি মহল। এর আগেও কুলাউড়ার বিভিন্ন পুঞ্জিতে এমনভাবে পানগাছ কর্তন করে খাসিদের জীবিকায় আঘাত করা হয়েছে। নিরীহ খাসিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও হামলা বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
স্থানীয় মুড়ইছড়া বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বলেন, লংলা পাহাড়ে এসব জমি বনবিভাগের। সরকার প্রতিবছরের মত এবার সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়ন করছে উপকারভোগীদের মাধ্যমে। কিন্তুু খাসিয়ারা নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস না করে পুরো পাহাড় দখল করার পায়তারা করছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষন রায় বলেন, এ ঘটনায় খাসিদের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।