সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে লংলা পাহাড়ে বসবাসরত খাসি সম্প্রদায়ের পানের জুম দখল ও বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের বিরোধে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পুঞ্জির পানজুমের গাছ কর্তন নিয়ে ও হামলার ঘটনায় এ অঞ্চলে খাসি জনগোষ্ঠি ও স্থানীয় উপকারভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংর্ষের উভয়পক্ষের ৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে খাসি ও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগিদের পক্ষে কুলাউড়া থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
খাসিদের অভিযোগ, মূলত ডলুছড়া ও বেলুয়া পুঞ্জি থেকে খাসিদের ভূমি বেদখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুড়ইছড়া বনবিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদারের ইন্ধনে কথিত বনায়নের উপকারভোগীরা বার বার খাসিদের পান জুমে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালিয়ে পান জুমের ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। বিনিময়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই বিট কর্মকর্তা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কুলাউড়ার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীর, অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায়, ওসি (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলামসহ থানা পুলিশ ২৮ আগস্ট শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন ও উভয়পক্ষের অভিযোগ থেকে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগিরা জোরপূর্বক ঢলুছড়ার পানজুমে ঢুকে পান উঠাতে থাকে। এ সময় পাহারারত খাসিরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করে। অপরদিকে পাহাড়ে বাঙ্গালী বনায়নের উপকারভোগি পাহারাদার স্থানীয় টাট্টিউলী গ্রামের বাসিন্দা ছুরক মিয়া ও আছকির আলীর উপর হামলা হয়েছে খবরে পাহাড়ের সমতলে মুরইছড়া বাগানের রাস্তা সম্মুখে উপকারভোগিরা জড়ো হয়। এদিকে বেলকুমা পুঞ্জির লিভিংস্টোন ইয়ংনিয়ং, লেবেলসন খংজ, ফিডালিয়া লামিন চিকিৎসা শেষে পুঞ্জিতে ফেরার পথে মুরইছড়া ৪নং গেইট এলাকায় উপকারভোগিদের হামলায় কুকিজুরী পুঞ্জির বাসিন্দা সিল প:লং ও রেডিমার ছেল্লা আহত হন বলে খাসিদের অভিযোগ। কুকিজুরী পুঞ্জির রাজ নংরুম ও মুরইছড়া পুঞ্জির গারো তরুণ উজ্জ্বল এম সাংমাকে ওই স্থানে বেধড়ক মারধর করে। এই হামলার সাথে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় উপকারভোগী হারুন মিয়া, বশির মিয়া, রফিক মিয়া গং। মূলত তাদের কারনে দফায় দফায় বাঙ্গালি ও খাসিদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে পুঞ্জি এলাকাগুলোতে খাসি ও উপকারভোগীদের মধ্যে চলমান বিরোধে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আদিবাসী নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন, খাসিরা পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসলেও আজও ভূমির অধিকার থেকে বঞ্ছিত। পানচাষ করে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করা হয়। সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে খাসিদের পানজুম অবাধে কাটা হচ্ছে। এতে খাসিদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম চরম হুমকিতে রয়েছে। বর্তমানে আমাদের লোকজনকে যাতায়াতের সময় রাস্তায় অতর্কিত হামলা করা হচ্ছে। খাসিরা প্রাণনাশের হুমকিতে চরম আতঙ্কে রয়েছে। বনবিভাগের যোগসাজশে সাজানো মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
স্থানীয় উপকারভোগী আছকির আলী ও ইসরাইল মিয়া জানান, বনবিভাগ থেকে আমরা লিজ এনে দীর্ঘদিন থেকে সামাজিক বনায়ন করে আসছি। কিন্তুু খাসিয়ারা নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস না করে পুরো পাহাড়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার, সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন ও নার্সারীর চারা বিনষ্ট করে পানজুমের নামে পাহাড় দখলের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। খাসিদের উগ্র আচরনের কারণে আমরা সমতল থেকে পাহাড়ের ভিতর বনায়নের জায়গায় যেতে পারছিনা।
স্থানীয় মুড়ইছড়া বনবিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বলেন, বনের ভেতরে সরকারীভাবে সামাজিক বনায়ন করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তুু খাসিয়ারা এতে বাধা প্রদান করছে। জনবল কম থাকায় গত ১৫দিন ধরে বনের ভিতরে বনায়নের জায়গায় যেতে পারছিনা তাদের কারণে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। আপনার ইন্ধনে উপকারভোগীরা বার বার পান জুমে হামলা চালাচ্ছে খাসিদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খাসিদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় জানান, খবর পেয়ে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় মুড়ইছড়া বাজারে বৈঠক করি। পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আমরা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।