বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সম্পূর্ণ ভূমি সেবাকে দেশের জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘবে সরকার সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমি সেবা যেন হাতের মুঠোয় পায় সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি।
আজ বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি তথ্য ব্যাংক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, ই-মিউটেশনে সহজেই খতিয়ান প্রদান, অনলাইনে ভূমিকর পরিশোধ ও দাখিলা প্রদান, এক ছাদের নিচে ভূমির সবসেবা কার্যক্রম তুলে ধরে অন্যান্য সরকারের সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতার সরকারের ১৩ জানুয়ারির কেবিনেট সভায় তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ছিল যুগান্তকারী। তিনি যত সার্টিফিকেট মামলা ছিল কৃষকদের বিরুদ্ধে, সব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ভূমিকর যারা দিতে পারেননি, মাফ করে দেন। সেই সঙ্গে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করে দেন। মানুষের যে অধিকার, সেই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, এটা একটা পদক্ষেপ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, একজন মানুষের নামে কত জমি থাকবে? তিনি একশ বিঘার একটি সিলিংও করে দিয়েছিলেন। জাতির পিতার একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ভূমিহীন মানুষের জন্য তিনি গৃহনির্মাণের পদক্ষেপ নেন, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নেন এবং খাসজমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ শুরু করেন।
এ দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যেমন খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল করে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। ড. কুদরত-এ খোদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাটাকে আরও উন্নত করতে চাই। আর সেই সাথে আমরা জানি যে সারাদেশে অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করা যেত না।’
ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে অনুষ্ঠানে দেখানে একটি তথ্যচিত্রের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কিছুক্ষণ আগে যে ভিডিওটা দেখালেন, সেখানে একেকটা ভূমি অফিসের যে জীর্ণ দশা, সেই জীর্ণ দশাটাৃ আমি জানি না কেনৃ আমাদের আগে তো অনেকেই ক্ষমতায় এসেছে, কেন এই ব্যাপারে কোনো সংস্কার করা হয়নি, সেটাই বড় প্রশ্ন।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, আরেকটি কথা না বলে পারছি না, এখানে যে আপনারা জানেন যে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক ভূমি অফিস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শুধু ভূমি অফিস জ্বালায়নি, চলন্ত বাসে যাত্রীরা যাচ্ছে সেখানে নারী, পুরুষ, শিশু, সেই বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারে। সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি চালিয়ে যাচ্ছে তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে, গাড়ির থেকে ড্রাইভারকে টেনে বের করে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। এইভাবে তারা একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে। এবং সেখানে প্রায় ছয়টি ভূমি অফিসসহ অনেক ভূমি অফিস তারা নষ্ট করে দেয় এবং সেগুলো পুড়িয়ে দেয়।
ভূমি অফিসে আগুন দেওয়া ঠেকাতে সে সময় হুঁশিয়ারি দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখন একটা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে, তাদের যেন আর কোনোদিন কখনো জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আর পাবে কেন। এই হুমকি দেওয়ার পরে কিন্তু তাদের এই ভূমি অফিস পোড়ানোটা বন্ধ হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখেছি, কারণ আসলে বিএনপি-জামাত এরা তো মানুষের জন্য কাজ করে না। এদের ক্ষমতাটা অবৈধভাবে দখলকারীর হাত দিয়ে, একটা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি করা এই সংগঠন। কাজেই মানুষের প্রতি এদের কোনোৃ আমি বলব দায়িত্ববোধও নেই, দেশের জন্যও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতার থেকে টাকা বানানো, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি- এটাই তাদের কাজ এবং সেটাই তারা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ মিউট্রেশন সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কেননা, মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন। মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমি সেবা যেন হাতের মুঠোয় পায় সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, হাতের মুঠোয় ভুমি সেবা নিশ্চিত করতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেজসহ ভূমিসেবার সকল ক্ষেত্রে অধিকতর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশন্স পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের এ পুরস্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এ স্বীকৃতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়কে আরও গতিশীল করেছে এবং বিশ্ব দরবারে আমাদের মর্যাদা অধিকতর সুসংহত হয়েছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে ভূমি ভবন ছাড়াও উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান থেকে ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং ১২৯টি উপজেলা ভূমি অফিস উদ্বোধন করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ঢাকা শহরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যালয় ও একটি আধুনিক রেকর্ড রুমের সংস্থান এ ভূমি ভবন কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। উক্ত অফিসগুলো একই ভবনে অবস্থানের ফলে ভূমি সংক্রান্ত সেবাদান ও সেবাগ্রহণ প্রক্রিয়া সহজতর হবে।
ভূমি ভবন কমপ্লেক্সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার্থে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা। নির্মিত ভবনটি ২টি বেজমেন্টসহ মোট ১৩ তলা বিশিষ্ট মূল ভবনটির নির্মাণ এরিয়া প্রায় ৩২ হাজার ২শ’ বর্গ মিটার।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সকল দপ্তর ও সংস্থাকে একই ছাদের নীচে এনে জনগণকে ‘এক জায়গায় সকল সেবা’ প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।
তার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে একই স্থানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থাসমূহের স্থান সংকুলানের জন্য ভূমি ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।