1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

“কাছে থেকে আমার দেখা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবঃ পনেরোই আগষ্টের স্মৃতি কথাঃ কিছু কথা

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪৫৫ বার পঠিত

মুজিবুর রহমান মুজিব

বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন জনক, স্বাধীনতার মহানস্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মত বড় মাপের জাতীয় নেতার কাছাকাছি যাওয়া, সান্যিধ্য লাভের সুযোগ প্রাপ্তি, স্মৃতি কথা, স্মৃতি চারন-একজন মফস্বলীয় কর্মির জন্য চরম সৌভাগ্য ও গৌরবের ব্যাপার। বঙ্গঁবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পর্য্যায় থেকে আঞ্চলিক পর্য্যায় পর্য্যন্ত এই প্রসঙ্গঁ ও প্রেক্ষিতে মূল্যবান ও তথ্য বহুল আলোচনা, টিভি টকশো, লেখালেখিতে বঙ্গঁবন্ধুর কর্ম ও জীবন দর্শন সংক্রান্ত গবেষনা লেখা-লেখি হচ্ছে-চলছে। সেই ষাটের দশকে, বাঙ্গঁলা ও বাঙ্গাঁলির সেই কঠিন দূঃসময় ও দুর্দিনে বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন মহান নেতা বঙ্গঁ শার্দুল শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বে চলছিল বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলন। বঙ্গঁবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচী বাঙ্গাঁলির মুক্তি সনদ হিসাবে খ্যাতিও স্বীকৃতি পায়। তখন পাকিস্তানী রাষ্ট্র ক্ষমতায় সামরীক শ্বৈর শাসক স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আয়ূব খাঁন। দেশব্যাপী ডিফেন্স অব পাকিস্তান রোল-ডি.পি.আর, এব্ডো,প্রডো, জাতীয় কালাকানুন জারী করে পাক সামরীক স্বৈর শাসক গোষ্ঠী ও ক্ষমতালিপ্সু পাঞ্জাবী উচ্চাভিলাসি আমলাতন্ত্র দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ও রাজনীতির বিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করে, বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একক নেতা আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গঁ শার্দুল শেখ মুজিবকে দেশ রক্ষা আইন সহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও কারারুদ্ধ করা হয়, সর্বশেষ পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন কায়েমী স্বার্থবাদি গোষ্ঠী বাংলাও বাঙ্গাঁলির আশা আকাংখার বিমূর্ত প্রতীক শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তখন এক আমেনা বেগম ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে বাতি জ্বালাতে আওয়ামী লীগের আর কোন নেতাই বাহিরে ছিলেন না। তখন আজকের মত আওয়ামী লীগের এত অঙ্গঁ বা সহযোগী সংঘটন ছিল না শুধুমাত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগকেই সে দায়িত্ব একক ভাবে পালন করতে হত করতে হয়েছে। সে সময় ছাত্রলীগ দেশব্যাপী একটি জনপ্রিয় ছাত্র-সংঘটন। দেশের আশি ভাগেরও অধিক কলেজ ছাত্র সংসদ ছাত্র লীগের নিয়ন্ত্রনে ছিল। ঐ দশকে শেখ ফজলুল হক মনি, কে.এম.ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খাঁন, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ, আশম রব প্রমুখ তারকা ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন।
আমার ছাত্র ও ছাত্র রাজনৈতিক জীবনের চরম সৌভাগ্য ও পরম পাওয়া এই, এদের অনেকের সংস্পর্শে যাবার, সাহচর্য্য ও ¯েœহ মমতা পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার তাও শুধুমাত্র ছাত্র রাজনীতিও ছাত্র লীগের কারণে। এখনও অনেকের সঙ্গেঁ সেই মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাষট্টি সালে মেট্রিক কেন্ডিডেইট ছিলাম, আমরাই ছিলাম শেষ ব্যাচ-এরপর শুরু হয় এস,এস,সি, সিষ্টেম। প্রবাসী পিতা-মাতার (উভয়েই এখন পরলোকে। আল্লাহ তাঁদের বেহেশ্ত নসীব করুন। আল্লাহ পাকের অপার মেহের বানী এবং তাঁদের দয়া ও দোয়ার বরকতে আমার লেখাপড়া ও এই অবস্থান।) আমার কাছে একমাত্র দাবী ছিল বিলেত নয়, দেশে থেকে লেখাপড়া করা দেশের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া, দেশের জন্য কাজ করা, এমন কিছু না করা যাতে আমার বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে কোন নালিশ যায়। আমি আমার কথা রেখেছি, দেশও ভার্সিটির সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছি, আমার বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে কোনদিন কোন নালিশ যায় নি, বরং আমার পিতা-মাতা হিসাবে আমার পরিচিত মহল তাঁদেরকে সম্মান করতেন।
পিতা-মাতার সম্মতিও সহযোগিতা পেয়ে আমি লেখাপড়ার সাথে সাথে ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ কর্মে সম্পৃক্ত হই-নেতৃত্বও দায়িত্ব প্রাপ্ত হই।
পরিবারের প্রথম সন্তান হিসাবে কারো কোন দায় বদ্ধতা ছিল না, পূর্ন স্বাধীনতা নিয়ে আমি স্বাধীন ভাবেই চলাফেরা করেছি। সাহিত্যও সাংস্কৃতিক সংঘটক হিসাবে ঐ দশকে পূর্ব পাকিস্তান শিল্প ও সাহিত্য সংঘ, মৌলভীবাজার মহকুমা শাখার সভাপতি নির্ব্বাচিত হই। আমার সহপাঠিও বিশিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছাত্রলীগ নেতা সংঘটক ছিলেন এদের মধ্যে আজিজুল হক ইকবাল (প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক-প্রয়াত), মাহমুদুর রহমান (সাবেক মহকুমা সভাপতি। মুক্তিযোদ্ধা। প্রবীন আয়কর আইনজীবী), গোলাম মওলা (মুক্তিযোদ্ধা। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী), হারুনুর রশীদ (বীর মুক্তিযোদ্ধ। সাংবাদিক আইনজীবী-প্রবাসী), ফররুখ আহমদ চৌধুরী (অবঃ অতিঃ, আই, জি, পি,) গাজি গোলাম ছরোয়ার হাদি গাজি (নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রয়াত) এ,এস,এম, আতাউর রহমান জলি এ,এস,পি, মরহুম, সৈয়দ বজলুল করিম (অবঃএ.আই.জি.অব পুলিশ)প্রমুখের নাম সবিশেষ উল্লেখ যোগ্য।
তখন মৌলভীবাজার মহকুমা সদরে আওয়ামী লীগের কোন অফিস, কমিটি, সাংঘটনিক কার্য্যক্রম, মিটিং-মিছিল ছিল না, হয় নি, কেউ কোন দিন দেখেন নি- আমরা দেখিনি। তবে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারন মানুষের সমর্থন-সহানুভূতি, ছিল। আওয়ামী লীগের শাখা ও সাংঘটনিক কার্য্যক্রম না থাকলেও ব্যক্তি পর্য্যায়ে কয়েকজন মুজিব ভক্ত ও আওয়ামী লীগ কর্মি ছিলেন এদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আমজদ আলী (পরে মহকুমা গণ ফোরামের সভাপতি। প্রয়াত।), মির্জা আজিজ আহমদ বেগ, (চৌমুহনায় ভেরাইটিজ ষ্টোর ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়াত) মইন উদ্দিন আহমদ (নাজিরাবাদ সাহেব বাড়ি-প্রয়াত), আস্কর উল্লাহ (মুসলিম হেয়ার কার্টিং সেলুন, চৌমুহনা।) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মাঠ কর্মি না হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক-সংঘটকদের মধ্যে বাবু ব্যোমকেষ ঘোষ টেমা বাবু মোক্তার,বিশিষ্ট প্রবাসী ও ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রদ্মন্ন কুমার রায় ও শৈলেন্দ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। জনাব আবু সুফিয়ান মৌলভীবাজার সদর এবং বাবু ব্যোমকেষ ঘোষ রাজ নগরে সত্তোরের সাধারন নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এরা সকলেই এখন পরলোকে। বাবু ব্যোমকেষ ঘোষ এর চৌমুহনা এলাকাধীন বিশাল বাস গৃহ ঘোষ লজে আমাদের আসা-যাওয়া ছিল-ঘরোয়া বৈঠক হত। ঘোষ লজ-কে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক কার্য্যক্রমও পরিচালিত হত। আমার পারিবারিক বাসগৃহ মুসলিম কোয়ার্টারস্থ বর্ত্তমান রসুলপুর হাউস ছিল ব্যেচেলার্স হাউস-ফলতঃ সমগ্র বাসা বাড়িটি আমাদের অঘোষিত দপ্তর হিসাবে ব্যবহৃত হত।

আমার বন্ধু মহলের রাজনৈতিক আসর বসত এই বাসগৃহে। একাত্তোরের পঁচিশে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী আমাকে গ্রেফতারের জন্য এই বাসায় রেইড দিয়েছিল-আমি ঐ রাতে আমার বাসায় না থাকায় পাকসেনারা আমাকে পায়নি।
বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব প্রসঙ্গেঁ স্মৃতি কথা লিখতে গেলে প্রথমতঃ তাঁকে তাঁর দলও দর্শনের অনুসারি এবং তাঁকে ন্যূনতম পক্ষে সত্তরোর্ধ হওয়া উচিত। এই দুই বিষয়েই আমি সুবিধা জনক অবস্থানে আছি বিধায় কাছে থেকে আমার দেখা শেখ মুজিব এবং শোকাবহ পনেরোই আগষ্ট প্রসঙ্গেঁ স্মৃতি কথা লেখার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সিলেট বেতার এবং বিভিন্ন মিডিয়া মহল থেকে অনুরোধ হলেও বিষয়টি কঠিন বিবেচনায় সাহস পাইনি। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে আমি নিজেই এখন জীবন সায়াহ্নে-পড়ন্ত বেলায়। সর্ব্বোপরি সম্প্রতি বৈশ্বিক ব্যাধি ভয়ানক করনা, ডায়বেটিস, রক্তচাপ, শ্বাস কষ্ট সহ বিভিন্ন জটিল-দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস যাবত শয্যাশায়ী আছি-মহান মালিকের অপার মেহের বানী ও সহকর্মি-স্বজন-শুভাকাংখীদের দোয়ার বরকতে বেঁচে গেছি। জীবন সায়াহ্নে যাবার বেলায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে-ইতিহাসের ¯্রষ্টা নই-ইতিহাসের শরিক ও দর্শক হিসাবে আমার দেখা বঙ্গঁবন্ধু এবং ষাটের দশকের কঠিন রাজনীতি ও শোকাবহ, পনেরোই আগষ্টের ঘটনা এবং সম সাময়ীক রাজনৈতিক অবস্থান আমার বিবেক বুদ্ধি মোতাবেক সহজ সরল ভাষায় বয়ান আমার ঈমানি দায়িত্ব বলে আমার এই প্রয়াস-কোন উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে নয়-কারন আমার এমন কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।

বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবকে কাছে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে দেখলেও এই স্বল্প পরিসরে ব্যাপক বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। এখানে একান্তই প্রাসঙ্গিঁক কিছু বর্ণনা করা গেল মাত্র।
তৎকালীন ইকবাল হল-বর্ত্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছিল ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মিলন কেন্দ্র। আমাদের শ্রদ্ধেয় মনির ভাই (গিয়াস উদ্দিন মনির, বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সমাজ সেবা সম্পাদক। যুক্ত রাজ্যে বাংলা দেশের সাবেক হাই কমিশনার) এই হলের ১৬১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার গোপন সংঘটন নিউক্লিয়াসের জনক ছাত্র লীগ নেতাও তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন এর ভক্ত ও সমর্থক ছিলাম, তিনি এখনও আমাকে খুবই ¯েœহ করেন। দাদা হিসাবে পরিচিত সিরাজ ভাইকে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবও (তখন ও বঙ্গঁবন্ধু হন নি) খুবই ¯েœহ করতেন। আমি সিরাজ ভাইকে বঙ্গঁবন্ধুর সঙ্গেঁ সাক্ষাত ও কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বলেন কোন অসুবিধা হবে না, কারণ তখন তাঁকে পাওয়া খুবই সহজ ছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে তিনি বিকেলে নিয়মিত বসেন। পুরানা পল্টন এলাকায় একটি বাড়িতে তখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস। নিচ তলায় একটি কক্ষে সাপ্তাহিক বাংলার বানীর অফিস। বাংলার বানীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারন সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি ভাইর সঙ্গেঁ ও আমার পরিচয় ও সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে বাংলার বানীর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি নিয়মিত বাংলার বানীর অফিসে বসতেন। উজ্জল ফর্সা চেহারার ব্যেক ব্রাশ করা চুল আর আকর্ষনীয় সরু গোঁফ সমেত সাদা হাফ সার্ট এর সঙ্গেঁ লালটাই পরিহিত মনি ভাইকে দারুন মানাত। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও দক্ষ সংঘটক শেখ ফজলুল হক মনি একজন আকর্ষনীয় ও ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি ছিলেন। বাংলার বানীকে তিনি দৈনিকে রূপান্তরিত করেন, পত্রিকাটি বাংলা ও বাঙ্গাঁলির প্রধান মুখ পত্র হিসাবে পরিচিতি পায়। আমি দীর্ঘদিন দৈনিক বাংলার বানীতে ফিচার লেখক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সাংবাদিকতায় আমি ধৈর্য্য সহকারে লেগে থাকতে পারিনি। সাংবাদিকতা অন্তপ্রাণ-জাত সাংবাদিক অনুজ প্রতিম মতিউর রহমান চৌধুরী দৈনিক বাংলার বানীতে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগ দিয়ে সততা ও সুনামের সঙ্গেঁ কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য্য সহকারে পেশাদারি সাংবাদিকতায় লেগে থেকে বর্ত্তমানে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সিনিওর সাংবাদিক হিসাবে খ্যাত। মনি ভাই মুক্তি যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর-আমাদের আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলৈন। এই বীর যোদ্ধা ও নির্ভীক সাংবাদিক পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্ট সস্ত্রীক ঘাতকদের হাতে শাহদাত বরণ করেন। মধ্য ষাটের দশকের এক বিকাল বেলা-এতদিন পরে দিন তারিখ মনে থাকার কথা নয়-কারন ও নাই, সিরাজ ভাইর সঙ্গেঁ কথা মোতাবেক পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে যাই। তখন ঢাকা শহর প্রায় ফাঁকা ছিল-এত জন সংখ্যা ও যানবাহন ছিল না। ভবনটি ও প্রায় ফাঁকা। নীচ তলায় বাংলার বানীর অফিসে মনি ভাইর সঙ্গেঁ সাক্ষাত করি, সংবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁর দিক নির্দেশনা নেই। সিরাজ ভাইর সঙ্গেঁ কথা মোতাবেক শেখ মুজিবের সঙ্গেঁ সাক্ষাত করতে আওয়ামী লীগ অফিস এর দো’তলায় যাই। একজন অফিস সহকারীকে আমার নাম, সিরাজ ভাইর প্রসঙ্গঁ উত্থাপন করলে আমাকে নেতার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশাল কক্ষে একটি বৃহদাকৃতির টেবিলের এক পাশে হাতাওয়ালা কাঠের সাধারন চেয়ারে বসা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব। ইতিপূর্বে আমি তাঁকে সভামঞ্চে-ইকবাল হলের মাঠে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে দেখেছি-পেয়েছি কিন্তু এভাবে সামনা সামনি মুজিব দর্শন ও কথোপকতন এই প্রথম। উজ্জল ফর্সা চেহারা, দীর্ঘদেহী, সুঠাম শরীরের বঙ্গঁবন্ধু একজন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর গোলবাটা মুখ, উন্নত নাসিকা, আকর্ষনীয় পূরুষালি গোঁফ, সাদা পাজামা পাঞ্জাবি, কালো মোটা ফ্রেমের হাই পাওয়ারের চশমা, মুজিব কোর্ট ভরাট কন্ঠস্বর-সবকিছুই ছিল একটি স্বতন্ত্র স্বকীয়তা এবং বৈশিষ্টের দাবীদার। আমি অবাক বিস্ময়ে তৃপ্তি ও আনন্দের সাথে আমার প্রিয় নেতাকে দেখলাম। তিনি আমাকে বসতে বল্লে একটি চেয়ারে বসলাম। এ সময় তাঁর কক্ষে কোন স্বাক্ষাত প্রার্থী কিংবা দলীয় নেতা কর্মি ছিলেন না। একজন অজানা অচেনা মফস্বলিয় ছাত্র লীগ কর্মিকে নেতা শেখ মুজিব পরম মমতায় নাম পরিচয় জেনে, স্বাক্ষাতের কারন শুনে খুবই খুশী হলেন। তাঁর নামে নাম শুনে এবং আমার দীর্ঘ দেহী ছ’ফুটি ফিগার, লম্বা চুল গোঁফ-পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত নবীন নেতা সূলভ বেশ-ভূষা দেখে নিঃশব্দে সন্তস প্রকাশ করলেন, আওয়ামী লীগ এর সাংগঠনিক কার্য্যক্রমের খুঁজ খবর নিলেন। ছয় দফার প্রচারে ছাত্র লীগকেই মুখ্য ভূমিকা পালনের কথা বল্লেন, আমি সাংবাদিকতা, বাংলার বানীর সঙ্গেঁ জড়িত আছি জেনে আনন্দ প্রকাশ করলেন, আমাকে উৎসাহ দিলেন।

আমি আমাদের মহকুমায় আওয়ামী লীগের শাখা গঠন এবং কার্য্যক্রম পরিচালনায় কতেক প্রস্তাব রাখলে তিনি নীতিগত ভাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আমি তাকে সবিনয়ে জানিয়ে ছিলাম ৫৪ সালের সাধারন নির্বাচনে যুক্ত ফ্রন্টের জয় জয়কার এবং মুসলীম লীগের ভরাডুবির মাঝেও এখানে মুসলিম লীগের বিজয় হয়েছিল-দেশব্যাপী মুসলীম লীগের মাত্র সাত প্রার্থীর মধ্যে একজন ছিলেন এখানকার। একটি সুন্দর সাক্ষাত ও সফল আলোচনা শেষে তাঁর দোয়াও শুভেচ্ছা নিয়ে আমি নেতার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসি। আমার প্রিয় নেতার সঙ্গেঁ আমার দ্বিতীয় সাক্ষাত কাছে যাওয়া ও কথা বলা এর কিছুদিন পর আমাদের মৌলভীবাজার মহকুমা সদরেই। এই সময় তাঁর মৌলভীবাজার সফরের তারিখ জানতে অনেক উৎসাহী সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেন কিন্তু ঐ তারিখটি আমার এখন আর মনে নাই। কর্ম্মসূচীটি ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের। পূর্বে উল্লেখিত আওয়ামী লীগের সেই সব কর্মি ও সমর্থকদের মধ্যে কেহই আর এখন বেঁচে নাই-তারা প্রায় পরিণত বয়সেই পরলোকে গমন করেছেন। ঐ সময় আওয়ামী লীগের একটি কর্মি সভা অনুষ্ঠিত হয় তৎকালীন জিন্নাহ হলে-যা বর্ত্তমানে পৌর জনমিলন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। জনমিলন কেন্দ্রের ঐ কর্মি সভায় খুবই কম কর্মি-জনগণ উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রিয় ও চীরা চরিত পোষাক পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব এলেন তাঁর নিজস্ব জীপ গাড়িতে চড়ে। আধুনিক জমানার মত মোটর সাইকেল স্কোয়াড-গাড়ি বহর ছিল না, কারন তখন এখানে এ সব ছিলও না। সেই সভাটি মূলত ছিল সিলেটে যাওয়ার পথে একটি কর্মি সভা। সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা ও শেখ মুজিবের ঘনিষ্ট সহচর দেওয়ান ফরিদ গাজি আওয়ামী লীগের সভা আয়োজন করেছেন। যাত্রা পথে জিন্নাহ জনমিলনে কর্ম্মি সভা এবং শাহ মোস্তফা সড়কস্থ ওয়াপদা রেষ্ট হাউসে বিশ্রামও আহার গ্রণ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব। জিন্নাহ হলের কর্মি সভায় আশানুরূপ কর্মি-জনগন উপস্থিত না হওয়াতে বাস্তব ধর্মি প্রকৃত রাজনীতিবিদ শেখ মুজিব নারাজ হয়ে উষ্মা প্রকাশ কিংবা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নি, নিজ দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা এবং দেশীয় রাজনীতির অচলাবস্থার কারণে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে উপস্থিত সামান্য সংখ্যক কর্মি ও জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন-আমাকে একটি শক্তিশালী দল দেন-আমি আপনাদেরকে গণতন্ত্র ও আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে দেব। একমাত্র আওয়ামী লীগ সে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কর্মি সভা শেষে ওয়াপদা রেষ্ট হাউসের বৈঠকেও আমি ছাত্র লীগ নেতা হিসাবে উপস্থিত ছিলাম। এখান থেকেই তিনি সিলেট অভিমুখে রওয়ানা হন। এবারও কোন গাড়ি বহর নেই, কারণ আমাদের কোন নেতারই গাড়ি নেই। শ্লোগান ও সঙ্গঁ দেয়ার প্রয়োজনে আমি নেতার জীপের পিছনে উঠে বসি। সরাসরি গিয়ে নামি আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় গাজি ভাই-দেওয়ান ফরিদ গাজির শেখ ঘাটের বাসায়। সেখানে উষ্ণ ও আন্তরিক ভাবে সম্ভর্ধিত হন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান। সিলেটে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের শক্তিশালী সংগঠন ছিল-দেওয়ান ফরিদ গাজির দারুন জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আমাকে পুত্র বৎ ¯েœহ মমতা করতেন দেওয়ান ফরিদ গাজি। আমাকে দেখে-পেয়ে খুবই খুশী হলেন-সিলেট গিয়েছি বলে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালেন। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গেঁ আমার পরবর্তী দেখা সাক্ষাত তাঁর ধানমন্ডির বাস ভবন বত্রিশ নম্বরে। আগড় তলা ষঢ়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। এখন তিনি বাংলার অবি সংবাদিত নেতা। জাতি সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে। সমগ্র দেশ ব্যাপী বঙ্গঁবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও জয় বাংলার জয় জয়াকার।
১৯৭০ সাল। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের সভাপতি অনল বর্ষী বক্তা নূরে আলম সিদ্দিকী সাধারন সম্পাদক শক্তিমান সংঘটক শাহজাহান সিরাজ। আমার মহকুমা মৌলভীবাজারে আমি সভাপতি-আখসুজাউল করিম (প্রবাসে) সাধারন সম্পাদক। সিলেট জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি সম্পাদক দুই তুখোড় বক্তা-শক্তিমান সংঘটক সদর উদ্দিন চৌধুরীও মকসুদ ইবনে আজি লামা। উভয়েই আমার প্রিয় বন্ধু-সেই সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত এখনও আছেন।
ইতিমধ্যে আমাদের এলাকার সমাজ ও রাজনীতিতে বেশ গুণগত মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। পাক ফৌজি প্রেসিডেস্ট স্বৈর শাসক আয়ূব খাঁনের পতনে ক্ষমতা থেকে মুসলিম লীগের বিদায় এর ফলে লীগ পান্ডা- চেলাচামুন্ডাদের প্রভাব প্রতি আরনাই। মহকুমা সদরের এম.পি.এ. মুসলিম লীগ নেতা-সালারে জিলা-ইনাম উল্যা সাহেব অত্যন্ত প্রভাব প্রতাপ শালীও ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর একটি নিজস্ব বাহিনী ছিল। তাঁর ভয়ে কেহ শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ এর পক্ষে এবং মুসলিম লীগ-আয়ূব খান মোনায়েম খাঁনের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেতেন না। ভাষানী ন্যাপ নেতা নবাব আলী সফদর খাঁন রাজা সাহেব পৃথিমপাশা থেকে এখানে এসে সভা সমাবেশ করতেন। তিনি উচ্চবিত্ত জমিদার ছাড়া ও দূঃসাহসী ও জনদরদি জননেতা ছিলেন। লীগ সরকারের পতনে মহকুমা ব্যাপী গণমুখী রাজনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংঘটনিক সংকট কেটে নির্ব্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্য্যক্রম জোরদার হতে থাকে। দেওয়ান ফরিদ গাজির মাধ্যমে শহরের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও নাট্যাঙ্গঁনের প্রিয় মুখ এম আজিজুর রহমান বঙ্গঁবন্ধুর আহŸানে আওয়ামী লীগে যোগদান করে দলের দায়িত্ব ভার ও প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দিলে রাজনৈতিক প্রাণ চাঞ্চল্য ও আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত সংঘটিত হতে থাকে। দেশীয় রাজনীতির সেই মহেন্দ্র ক্ষুনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ একটি বর্ধিত সভা আহŸান করেন। ৪২/বলাকা ভবনে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর ছিল। দেশীয় রাজনীতির অবস্থা, সাধারন নির্ব্বাচন কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের বর্ধিত সভাটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মহকুমার সভাপতি সম্পাদক বর্ধিত সভায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেই। ইতিমধ্যে অমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে মাষ্টার্স ফাইন্যাল পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আটষট্টি সালে আমাদের মৌলভীবাজার কলেজ থেকে হায়ার সেকেন্ড ক্লাশ নিয়ে বি.এ.পাশ করলে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হই। হাজি মোহাম্মদ মহসিন হলে নিউক্লিয়াস কর্মি কম থাকায় সিরাজ ভাইর ইচ্ছায় আমাকে মহসিন হলে সিট বরাদ্দ করে দেয়া হয়। ৫২৯ নম্বর কক্ষে আমার রুমমেট ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু ছয়ফুল আলম খাঁন।
সত্তোরের সেই উত্তাল দিন গুলি ৪২/বলাকা ভবনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের বর্ধিত সভাটি ছিল দারুন রমরমা ও জমজমাট। বলাকা সিনেমা হল প্রাঙ্গঁন-নিউ মার্কেট এলাকা-কলেজ রেষ্টুরেন্ট-পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ-মহকুমা সভাপতি-সম্পাদক দের উচ্ছল পদ ভারে প্রকম্পিত। পাজামা পাঞ্জাবি মুজিব কোর্ট এর ছড়াছড়ি। ইতিপূর্বে ইকবাল হলে সভার বিষয় এবং আমাদের বক্তব্য প্রসঙ্গেঁ ব্যাপক ব্রিফিং পেয়েছি। বর্ধিত সভার আলোচন্য বিষয় একটি বঙ্গঁবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সমাজতান্ত্রীক বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তাব পাশ করানো। ঢাকায় আওয়াজ উঠেছে পিন্ডি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা, জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান-আজিমপুরের গোরস্থান, তোমার নেতা আমার নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব, জাতির পিতা শেখ মুজিব লও সালাম-লও সালাম, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি। আমি নিজে খুবই উচ্চ কন্ঠে শ্লোগান দিতাম আমার ছ’ফুটি দীর্ঘ দেহ, দূঃসাহস, আকর্ষনীয় বাবরি চুল এবং জেনারেল ওসমানী স্টাইলের বিশাল গোফ সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করত। ইতিপূর্বে মৌলভীবাজার শহরে উচ্চ কন্ঠে শ্লোগান দিতে গিয়ে নাক মুখ দিয়ে রক্তপাত হয়েছিল, আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেই নি, তাছাড়া তখন এখন কার মত এত ডাক্তার কম্পাউন্ডার ও ফার্মেসী ছিল না। অধিক রক্ত পাতে দুর্বল হয়ে পড়লে আমার প্রতিবেশী ও আত্মীয় আব্দুছ ছোবহান মসু তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা.আব্দুল হেকিম সাহেবকে নিয়ে এসে আমার সু-চিকিৎসা করায়। ডা.হেকিম আমাদের সমর্থক হিসাবে বিনা-ফিতে আমাকে যে আন্তরিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন তা এখনও আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করি। তিনি যেখানেই থাকুন মহান মালিক তাঁকে মঙ্গঁল মত রাখুন এই দোয়া করি।
অনেকে বলেছিলেন আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেই বলে নাক মুখ দিয়ে রক্ত যেতে যেতে আমার মৃত্যো হবে। আমাদের মহান স্রষ্টা বড়ই মেহেরবান, তাঁর দয়া এবং আমার পিতা-মাতা ও শুভা কাংখীদের দোয়ার বরকতে এখনও আমি ঈমান, আমল, আহার, বাসস্থান সামান্য মান সম্মান সহকারে বেঁচে আছি। ২৩শে মার্চ একাত্তোর পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে আমাদের চৌমুহনা চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের পতাকা এবং পাকিস্তানী জাতির পিতা জিন্নাহ সাহেবের ছবি পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা বঙ্গঁবন্ধুর ছবি উড়িয়ে ছিলাম, ঐ সপ্তাহেই পাকিস্তানের মৃত্যো হয় এবং আল্লাহ পাকের অপার মেহের বানীতে একজন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পাক সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি।
আমি নিজে আমার বন্ধু সদর উদ্দিন চৌধুরী এবং মকসুদ ইবনে আজিজলামা নির্বাচনের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলার পক্ষে জোড়ালো বক্তৃতা দেই। সিলেট জেলা ছাত্র লীগের সংগ্রামী সভাপতি-সম্পাদক সদর উদ্দিন চৌধুরী এবং মকসুদ ইবনে আজিজ লামার যুক্তিপূর্ণ জ্বালাময়ী ভাষন খুবই প্রাঞ্চল ও আবেগময় ছিল। বর্ধিত সভায় যোগদান কারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি-সম্পাদকদের মধ্যে শতকরা নব্বই জনই বঙ্গঁবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার পক্ষে জোরালো ভাসন দেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ বিষয়ে আমাদের নেতা ছিলেন সেকাল থেকে একালের অনল বর্ষি নির্ভীক বক্তা ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আশম আব্দুর রব। আগে নির্বাচন পরে আন্দোলন কারিদের পক্ষে আধুনিক গণতন্ত্রী, সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত আরেক অনলবর্ষী বক্তা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, এম,এ, রশীদ এবং জগন্নাথ কলেজ শাখা ছাত্র লীগের ডাক সাইটে নেতা এম.এ. রেজা প্রমুখ। বিশাল শরীরের অধিকারি এম.এ. রেজার একটি বাহিনীও ছিল। এম.এ. রেজা তাঁর বাহিনী নিয়ে বালাকা ভবন এলাকায় নির্বাচনের পক্ষে শ্লোগান দিয়ে শোডাউন করতঃ মফস্বলের স্বাধীনতা পহ্ণী সভাপতি সম্পাদকদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ভাষন-পাল্টা ভাসনে সভা বিকাল সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্য্যন্ত গড়ায়, স্বাধীনতা পহ্ণীদের সংখ্যা বেশি হলেও কোন প্রস্তাব পাশ করানো গেল না, নির্ব্বাচন পহ্ণীগণ বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি করেন, ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আপোষ রক্ষা ও ঐক্যমতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আশম রব ধৈর্য্য সহকারে সংঘর্ষ এড়াতে চেষ্টা করেন। অবশেষে সভার পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব এলো বিষয়টি সুরাহা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বঙ্গঁবন্ধুর বাসায় বত্রিশ নম্বরে গিয়ে তাঁর মতামত নেয়া হউক। তিনি যে রায় দেবেন সকলেই তা মেনে নেবেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অফিস ৪২/বলাকা ভবন থেকে বঙ্গঁবন্ধুর বাস ভবন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর খুব দূরে নয়। ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পদ ব্রজেই রওয়ানা হলেন। এত রাতে রিক্সা-গাড়ি পাওয়ার কথা নয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছুপিছু আমরা দু’চার জন মফস্বলি ছুটলাম-নেতাকে দেখব-তাঁর কথা শুনব বলে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সু’নজরে থাকায় কেউ আপত্তি করলেন না, তাছাড়া এখন আর আমি নিছক মফস্বলি নই, ঢাবির মাষ্টার্স ফাইন্যাল-মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র লীগের সক্রিয় কর্মি-সংঘটক-মিটিং-মিছিলের প্রিয়মুখ। নেতা নীচের কক্ষে তাঁর বৈঠক খানায় নেমে এলেন। সাদা চেক লুঙ্গি, সাদা সেন্ড গেঞ্জির উপরে হালকা আকাশি রং এর টেঢ্রনের হাফ হাতা হাওয়াই সার্ট, হাতে তাঁর প্রিয় পাইপ। তাঁর নির্ধারিত আসনে তিনি বসলেন। ঘুম থেকে উঠে এলেও কোন সামান্যতম বিরক্তি প্রকাশ না করে তিনি জানতে চাইলেন তোমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভার সময় তোমরা এখানে কেন? তখন মোবাইলত নয়ই ল্যান্ড ফোন এরও সহজ লভ্যতা ছিল না। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব ধৈর্য্য ও গভীর মনোযোগ সহকারে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনলেন। পীন পতন নিরবতার মধ্যে বঙ্গঁবন্ধু বলতে লাগলেন তোমাদের সংখ্যা গরিষ্টের স্বাধীন বাংলা সংক্রান্ত প্রস্তাবের সঙ্গেঁ আমি নীতিগত ভাবে একমত হলেও নির্বাচনের আগে আমি এই আত্বঘাতি সিদ্ধান্তে যেতে পারি না, তা হলে আমি বিচ্ছিন্নতাবাদিদের নেতা হয়ে যাব, আমার আজীবনের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমি এই নির্বাচনকে ক্ষমতায় যাওয়া নয় বাঙ্গাঁলির মুক্তি সনদ ছয় দফার রেফারেন্ডাম হিসাবে ঘোষনা করেছি। সমগ্র জাতি আজ ছয় দফার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। আমার জরিফ তথ্য মতে শতকরা নব্বইটির বেশি আসন পাবে আমার ছয়দফার প্রার্থীরা। আমাকে জনগনের ম্যেনডেট নিতে দাও, নির্ব্বাচনের পরে ছয় দফা বিরোধী কোন রাজনৈতিক শক্তি এ দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সত্তোরের সাধারন নির্ব্বাচন পরিচালনা করবে তোমরাই। গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পক্ষে বঙ্গঁবন্ধুর আবেগময় যুক্তি নীরবে এক বাক্যে সকলে মেনে নিলেন। যে কোন মূল্যে নির্বাচন বান চালের ষঢ়যন্ত্র ঐব্যবদ্ধ ভাবে মোকাবিলা করার অঙ্গীঁকার করতঃ আলোচনা ক্রমে বর্ধিত সভাটি মূলতবি করা হল। এই মূলতবি সভাটি আর কোন দিন অনুষ্ঠিত হয় নাই, কারন তাঁর আর প্রয়োজন হয় নাই। বঙ্গঁবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই সঠিক ছিল, সত্তোর সালের সাধারন নির্ব্বাচনে তিনি জাতির একক নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। তাঁর প্রিয় দল আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্টতা অর্জন করেছিল। বঙ্গঁবন্ধুর সঙ্গেঁ পরবর্তী দুটি সাক্ষাত সংক্ষিপ্ত হলেও তাৎপর্য্যপূর্ণ। সত্তোর সালের সাধারন নির্বাচনে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল নির্বাচনী জনসভায় ভাষন দেন তিনি। এই আসনের দুই প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন-ইলিয়াস-আজিজ নয়-নৌকা মার্কায় ভোট দিলে আমি ভোট পাব। আমাকে ভোট দেবেন-বলতেই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বত্বঃস্ফূর্ত ভাবে আগত লক্ষ জনতা গগন বিদারি জয় বাংলা শ্লোগানের মাধ্যমে দুই হাত তুলে সমর্থন জানান। আমি আশম রব সরবরাহ কৃত লাল সবুজের জয় বাংলা বাহিনীর ক্যেপ মাথায় দিয়ে সাদা পোষাক পরিধান করে শ্লোগান প্রদান করতঃ ভলান্টিয়ারের কাজ করছিলাম। এই নির্ব্বাচনী জনসভার তারিখটিও স্মরন নাই। বঙ্গঁবন্ধুর সঙ্গেঁ আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার শেষ সাক্ষাত ও শেষ দেখা এই মৌলভীবাজার শহরে, স্বাধীন বাংলাদেশে।
স্বাধীনতা উত্তরকালে একজন স্বপ্ন বাজ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে মনের মত করে সাজাতে এখানে থেকে গেলাম-কোন সরকারি চাকরিতে গেলাম না, যদিও সে সময় সম্মান জনক সরকারি চাকরি খুব সহজ লভ্য ছিল। তখন বিপ্লব বিপ্লব সামাজিক বিপ্লব-সর্ব হারার মন্ত্র বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র এসবের প্রতি আমার দূর্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাধীনতা উত্তর এক সকালে আমাদের প্রিয় চৌমুহনা চত্বরে বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজিব সৈনিক-¯েœহ ভাজন মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গেঁ দেখা। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব সরকারি কাজে হেলিকপ্টার যোগে মৌলভীবাজার আসছেন আনছার ফিন্ডে নামবেন। সরকারি কাজে আসলেও তিনি আমাদের নেতা বঙ্গঁবন্ধু, তাঁকে রিসিভ করা, তাঁর সভায় যোগদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মতিউর শ্লোগান দিলেন-“বঙ্গঁবন্ধুর জনসভায় যোগ দিন, আসছেন আসছেন বঙ্গঁবন্ধু আসছেন” আমি তাঁর সঙ্গেঁ শ্লোগান ধরলাম মিছিলে শরীক হলাম। এখানে আওয়ামী লীগ ছাত্র লীগকে সংঘটিত করতে ছাত্র নেতা ও সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর বলিষ্ট ভূমিকা ছিল। পঁচিশে মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটের সময় খাঁন সেনাদের গতিপথ প্রতিরোধ ও ব্যেরিকেইড সৃষ্টির সময় তিনি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে নির্য্যাতনের শিকার হন। খাঁন সেনারা তাঁকে হত্যার জন্য তাঁদের টর্চার সেল পর্য্যটন রেষ্ট হাউসে আটক করে রাখে। আমার মুসলিম কোয়ার্টারস্থ বাস গৃহ থেকে ইতিপূর্বে আটক আমার ফুফাত ভ্রাতা কলেজ ছাত্র ও ছাত্র লীগ কর্মি আজিবুর রহমানকে (পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান বর্তমানে প্রবাসী।) ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার করে তাঁদের এই টর্চার সেলে রেখেছিল। তারা উভয়েই এক বাঙ্গাঁলি সৈনিকের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে যান।
আমি নির্ধারিত সময়ে আনছার ফিল্ডে যাই এবং সেখানে বিশৃংঙ্খলা দেখতে পাই। প্যেন্ডেল ও সভাটি না ছিল প্রশাসনের না ছিল দলগত ভাবে আওয়ামী লীগের তা বুঝার কোন উপায় ছিল না। তখন ছাত্র লীগ একটি শক্তিশালী ছাত্র সংঘটন। তখন দেশে প্রথম বিরোধী দল জাসদের জন্ম না হলেও ছাত্র লীগ এবং জাতীয় কৃষক লীগ এই জাতীয় গণমুখী শ্লোগান দিতেন। সভায় পাল্টাপাল্টি শ্লোগান এবং বিশৃংঙ্খল অবস্থা দেখে আমি স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে মঞ্চে উঠলাম। প্রশাসন কিংবা কোন আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে বাঁধা দিলেন না, তবে তাঁদের চোখের ভাষায় বুঝলাম তাঁরা আমার সহযোগিতা চাইছেন, আমিও নীরবে তাঁদেরকে সেই আশ্বাস দিলাম কারন আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন উভয়েই আমার সাথে সু-সম্পর্ক যুক্ত। স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে মাইক নিয়ে আমি কিছু কথা বল্লাম, সেদিন বলেছিলাম সভাটি প্রশাসনের-আমাদের নয়- বঙ্গঁবন্ধু আসছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সরকারী কাজে তাঁদেরকে সহযোগিতা করা ছাড়া আমাদের কিছু করা উচিত নয়, করলে আমাদের বদনাম হবে। তবে আমার কথায় বুঝা গেল আমি সামাজিক বিপ্লব ও সমাজ পরিবর্তনের বিপক্ষে নই। এতে সামাজিক বিপ্লবের পক্ষে উচ্চ কন্ঠে শ্লোগান হতে থাকে। বঙ্গঁবন্ধু আসার পূর্বে আমি মঞ্চ থেকে নেমে আসি-মঞ্চ খালি করে দেই। হেলিকাপ্টারটি আনছার ফিল্ডে নামল। বঙ্গঁবন্ধু তাঁর চীরচরিত পোষাক সাদা পাজামা পাঞ্জাবি কালো মুজিব কোর্ট-হাতে পাইপ-তাঁর সঙ্গেঁ তাঁর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমদ, প্রেস সেক্রেটারি আমিনুল হক বাদশার কথা আমার এখনও মনে আছে। সভাটি সংঘটিতও সুশৃংঙ্খল ছিল না, সরকারি দল কিংবা প্রশাসন এ ব্যাপারে হয়ত সজাগ ও সতর্ক ছিলেন না। ব্যক্তিত্ববান বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আত্ব প্রত্যয় ও দৃঢ়তার সাথে সভায় শান্তি শৃংঙ্খলা শ্লোগান প্রসঙ্গেঁ দিক নির্দেশনামূলক কড়া বক্তব্য দিলেন-সভায় পীন পতন নীরবতা নেমে এল, তিনি তাঁর নাতি দীর্ঘ ভাষন শেষ করলেন জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে। নীচে দর্শকের সারি থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলাম একজন ব্যক্তিত্ববান বঙ্গঁবন্ধু তাঁর ক্যারিসমাটিক ব্যক্তিত্ব দিয়ে একটি মফস্বলীয় অগোছালো জনসভাকে পূর্ণ শান্তি শৃংঙ্খলার মধ্যে এনে শান্তি পূর্ণ ভাবে সু-সমান্ত করলেন। দূরে থেকে- কাছে থেকে দেখেছি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন জনদরদি জন নেতা জনগণের চোখের ভাষা তিনি বুঝতেন বলেই টুঙ্গিঁপাড়ার খোকা থেকে মুজিব ভাই-বঙ্গঁবন্ধু হয়ে জাতির পিতা হয়েছেন। উপমহাদেশীয় রাজনীতির তিন প্রভাব শালী নেতা গণতন্ত্রের মানষ পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তি দূত মৌলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাষানীর মত নেতৃত্রয়ের সময় তাঁর বেড়ে উঠা। এইচ.এস.সোহরাওয়ার্দী সাহেব তাঁকে খুবই ¯েœহ করতেন। তাঁর অপূর্ব দেশপ্রেম, কষ্ট সহিষ্যূতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য, কর্মি বাৎসল্য, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ ও বিনয়াচরনে একদিন তিনি জনপ্রিয়তাও গ্রহণ যোগ্যতায় সকলকে ছাড়িয়ে যান, তিনি হয়ে উঠেন একও অদ্বিতীয়।
পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্ট মানব সভ্যতার সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি শোকাবহ দূঃখ জনক ঘটনা-দূর্ঘটনা। দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি-সসস্ত্র বাহিনী সমূহের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবকে সেনাবাহিনীর কতেক বিপথগামী উশৃংঙ্খল মাঝারি পদ মর্য্যাদার সেনা কর্ম্মকর্তা ঢাকা শহরের ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ কায়েম করে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে স-পরিবারে হত্যা করল।
এক দেশ প্রেমিক নির্ভীক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন ছাড়া কেউ এগিয়ে এলেন না, প্রতিরোধ করলেন না, এটা মেনে নেয়া যায় না। পুস্তকান্তরে খবরে প্রকাশে ঘাতকদের ব্রাস ফায়ারে আক্রান্ত, বঙ্গঁবন্ধু সেনা প্রধান জেনারেল কে.এম.শফি উল্লাহকে ফোন করে বলেছিলেন ঝযধভর টষষধয ঋবি গরংপৎবধহঃং ধঃঃধপশ সু যড়ঁংব যবষঢ় ধহফ ংধাব সব. অথর্ব সেনাপ্রধান জেনারেল শফি উল্লা বলেন ঝরৎ উড়হ’ঃ ঝধুসরং ঈৎবধহঃং ঃযবু ধৎব ঃযব গধসনবৎ ড়ভ ইধহমষধফবংয অৎসু. এই দায়িত্বজ্ঞান হীন ও কাপূরুষ জেনারেলকে বঙ্গঁবন্ধু পসন্দ করে পদোন্নতি দিয়ে স্বাধীন বাংলার প্রথম সেনা প্রধান করেছিলেন। দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং সসস্ত্র বাহিনী সমূহের প্রধানকে রক্ষায় ব্যর্থতার কারনে জেনারেল শফিউল্লাহর বিচার হওয়া উচিত ছিল, তা না হয়ে তিনি সাংসদ, হাই কমিশনার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম সেনা প্রধানের ব্যর্থতায় ভৎসনা করে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করলেও জেনারেল শফি উল্লাহ রহস্য জনক নীরবতা অবলম্বন করেছেন। বঙ্গঁবন্ধু এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় ব্যর্থতার সাথে সাথে জাতিকে শুনতে হয়েছে মুজিব মন্ত্রী সভার বানিজ্যমন্ত্রী কুমিল্লার খন্দকার মুশতাকের নির্লজ্য স্বীকারুক্তি-“দেশও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে পনেরোই আগষ্টের সারথী হয়ে এসেছি” । বানিজ্যমন্ত্রী বি-গ্রেডের আইনজীবী খন্দকার মুশতাক মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়ে আওয়ামী-লীগের কতেক নেতাকে নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আওয়ামী লীগে ভাঙ্গঁন এনে ডেমক্রেটিক লীগ নামে নূতন দল গঠন করেন। জাতি হিসাবে আমাদের দূর্ভাগ্য ব্যর্থতাও বেদনার আরো কারন বঙ্গঁবন্ধু হত্যার সঙ্গেঁ তার দল ও প্রশাসনের একাংশ এবং কতেক বিপথগামী পদ চ্যোত, অবসর প্রাপ্ত নি¤œ ও মাঝারি পদ পর্য্যাদার সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন-এদের অনেকেই ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গঁবন্ধুর সরকারামলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও আওয়ামী লীগের সমপরিমাণ সাংঘটনিক শক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন কোন রাজনৈতিক দল ছিল না তখন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল বলতে মৌলানা ভাষানীর ন্যাপ, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল জাসদ সহ আরো খুছরা কিছু ডান ও বাম পহ্ণি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডান পহ্ণি রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলামী নিষিদ্ধ, বি.এন.পি. জাতীয় পার্টির তখন জন্ম হয় নি তাই বঙ্গঁবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে রাজনীতি গত ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বিবেচনায় ঘাতক চক্রটি আধাসামরীক ক্যু-এর কুমতলব করে। জাতির জন্য আরো দূঃখও দূর্ভাগ্য জনক ছিল, সপরিবারে বঙ্গঁবঙ্গ হত্যার পর যেসব কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি বাদ কিংবা খুনী মুশতাক সরকারকে অসহযোগিতা করার কথা ছিল তারাই পইপই করে বেতার ভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সমর্থন জানালেন সেনা বাহিনী বিমান বাহিনী, বি.ডি.আর.প্রধান কেউই বাদ গেলেন না। আজীবনের আওয়ামী লীগার আব্দুল মালেক উকিল হিথ্র বিমান বন্দরে খুনী খন্দকার মুশতাকের পক্ষে ওকালতি করে বল্লেন বাংলাদেশে ফেরাউনের পতন হয়েছে। পাকিস্তানী সি.এস.পি. মুশতাক সরকারের সংস্থাপন সচিবএইচ, টি, ইমাম সাহেব বঙ্গঁ ভবনে বৈদেশিক সংবাদ দাতাদের প্রেস কনফারেন্স ডেকে বঙ্গঁভবনে অবস্থান রত খুনী সেনা কর্মকর্তাদেরকে “ঞযরং ুড়ঁহম গধলড়ৎং ধৎব ঃযব ংধাবৎং ড়ভ ঃযব হধঃরড়হ” এই তরুন মেজর গণ জাতির ত্রান কর্তা বলে আখ্যায়িত করা প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তার জন্য ছিল বে-আইনীও গর্হিত অপরাধ। ভাগ্যবান হোসেন তৌফিক ইমাম গাছের টা-তলের টাও খেলেন, সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন- মন্ত্রীর মর্য্যাদায় দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। বঙ্গঁভবনে সেনাদের নিয়ন্ত্রনাধীন খুনী খন্দকার মুশতাক নূতন রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অভিনন্দিত অভিসিক্ত হন। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বঙ্গঁভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট খন্দকার মুশতাক এর সঙ্গেঁ সাক্ষাত করমর্দন ও তাঁর সরকারের সমর্থন জানিয়ে যে বিশ্রী দেঁতো হাসি হেসেছিলেন সেই হাসি অশ্লীল না হলেও অশালীন ছিল। হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গাঁলি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা কারি খন্দকার মুশতাক এর সঙ্গেঁ হাত মিলিয়ে একজন বাঙ্গাঁলি কুটনীতিবিদ হিসাবে এমন বিশ্রী হাসি না হাসলেও পারতেন। তাছাড়া সেটা কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। একজন হাই কমিশনার একজন রাষ্ট্রপতির সামনে বেপরোওয়া হাসি হাসতে পারেন না। এই কলংক লজ্জার মাঝে বঙ্গঁবন্ধুর আদর্শের সন্তান এক বঙ্গঁবীর কাদের সিদ্দিকী মুজিব হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে তুলে নেন-প্রতি বাদ জানান-দীর্ঘ দিন ভারতে রানৈতিক আশ্রয়ে থাকেন। বঙ্গঁ বীর কাদের সিদ্দিকীকে অনুসরন করে মুজিব হতার আরেক প্রতিবাদি মুজিব সৈনিক এর নাম সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। জাতির দূর্ভাগ্য কাদের সিদ্দিকী এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এর সংখ্যা ছিল হাতে গুনা। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ছাত্রলীগের লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ডাকসুর ভি.পি. আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। বর্ত্তমানে এম.পি।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রক্ত ও রাজনীতির গৌরবোজ্জল উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্ত্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দলও সরকার এ কঠোর ভাবে দূর্নীতিকে জিরো টলারেন্স ঘোষনা দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীনতা উত্তর কালে ও বঙ্গঁবন্ধুর সরকার সন্ত্রাস ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন কিন্তু চাটার দল তা মানে নি। দীর্ঘ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সভানেত্রী শেখ হাসিনার দূর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের মাঝে ও হাইব্রীড, অনু প্রবেশ কারি, কাউয়ার দলের খাই খাই ও কাকারবে সরকারের উন্নয়ন কর্ম কান্ড গুলি প্রশ্নবিদ্ধ। বঙ্গঁবন্ধু বাঙ্গাঁলির অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ ছয় দফা কর্মসূচী দিয়েছিলেন পূর্বের টাকা পশ্চিমে না দিতে। সত্তোরের সাধারন নির্বাচনে বঙ্গঁবন্ধু ঘোষিত ছয়দফা কর্মসূচী রেফারেন্ডাম হিসাবে ঘোষনা দিয়ে শতকরা প্রায় নিরান্নব্বই ভাগ সমর্থন পেলেও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের টাকা লুটপাট করে কানাডায় বেগম বাজার সৃষ্টি শেখ মুজিবের আদর্শের পরিপহ্ণী। গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ছিল বঙ্গঁবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন। তাঁর সরকারের ঐতিহাসিক অবদান স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতিকে বাহাত্তোর সালে সংবিধান উপহার দেয়া। বাহাত্তোরের সংবিধান পৃথিবীর লিখিত সংবিধান সমূহের মধ্যে একটি চমৎকার উৎকৃষ্ট মানবিক দলিল। সংসদীয় গনতন্ত্র সংসদীয় সংস্কৃতি, মানবাধিকার, মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার এই সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলেও অদ্যাবধি সংসদীয় সংস্কৃতি চর্চাও চালু হয় নি বিধায় বঙ্গঁবন্ধুর স্বপ্নের গনতান্ত্রীক সোনার বাংলা চালু হয় নি, চর্চাও নেই, যাতার রাজনৈতিক জীবন দর্শনের পরিপহ্ণী।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি পেরিয়ে বঙ্গঁবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাকেই একক ভাবে আরো কঠোর হয়ে দূর্নীতির মূল উৎপাটনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিবেন-দেশ ও জাতি তাই প্রত্যাশা করেন।

[ষাটের দশকে ছাত্র লীগ নেতা। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..