অনলাইন ডেস্ক: নিখোঁজের পাঁচ দিন পর জামালপুরের ইসলামপুরের আবাসিক মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ তিন ছাত্রীকে ঢাকায় উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রীর এক হাজার টাকা হারানোর ঘটনায় তাদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছিলো। টাকা ফেরত দিতেও চাপ দেওয়া হয়। এই ভয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায় ওই তিন ছাত্রী। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে জামালপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ইসলামপুর সার্কেল) সুমন মিয়া, জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম খান, ইসলামপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজেদুর রহমানও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। সুমন মিয়া উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর মুগদা থানার মান্ডা এলাকার একটি বস্তি থেকে ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর দারুত তাক্কওয়া আবাসিক মহিলা মাদ্রাসার ওই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তারা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গোয়ালেরচর দারুত তাক্কওয়া আবাসিক মহিলা মাদ্রাসার মোহতামিম আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর এক হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ওই তিন ছাত্রী টাকা সরিয়েছে বলে সন্দেহ করে মাদ্রাসার সব শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীরা। টাকা ফেরত দিতেও তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এ ঘটনায় অন্যরা তাদের সম্পর্কে নানান কিছু কথা বলতে থাকে। এর থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তিন ছাত্রী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মাদ্রাসার একটি কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে বের হয়।এরপর হেঁটে ইসলামপুর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। তিন জনের কাছে মোট ৩৪০ টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাটে। তাদের ট্রেন ছাড়ে সোমবার ভোরে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে তিন ছাত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, তিন ছাত্রীর সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়। পরে স্থানীয় রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুগদা থানার মান্ডা এলাকায় রাজা মিয়া (১৪) নামে এক রিকশাওয়ালার মাধ্যমে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। রাজা ওই তিন ছাত্রীকে নিজের বোন পরিচয় দিয়ে বস্তির একটি ঘরে দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে দেয়। গত শনিবার রাতে মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে ওই তিন ছাত্রী। রবিবার ভোরে ফজরের নামাজের জন্য ছাত্রীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন বলে দাবি করেন শিক্ষকরা। অন্য ছাত্রীদের মতোই ওই তিনজনও নামাজের প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর থেকে তারা নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর এক ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ইসলামপুর থানায় একটি মানবপাচার মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ মাদরাসাটির পরিচালক মো. আসাদুজ্জামানসহ আরও তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।