সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মনছড়া বিট এলাকা থেকে সামাজিক বনায়নের বেশ কয়েকটি সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক উপকারভোগীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের আওতাধীন কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত মনছড়া বিটের ভেতরে কয়েকটি টিলায় ১৫ বছর পূর্বে সামাজিক বনায়নের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়। এতে প্রায় ৫০জন উপকারভোগী রয়েছেন। বর্তমানে গাছগুলো অনেক মূল্যবান ও বড় হওয়াতে এলাকার প্রভাবশালী অনেক কাঠ ব্যবসায়ীদের লোলুপদৃষ্টি পড়ে। ৩০ অক্টোবর স্থানীয় বনগাঁও-২ এলাকার ইউসুফ নামের এক ব্যক্তির ভাড়াটে ৬-৭জন শ্রমিক মনছড়া বিটের সামাজিক বনায়ন থেকে প্রায় ৬-৭টি আকাশমনি (প্রায় ৫০ ঘনফুট) গাছ কর্তন করেন। এদিকে খবর পেয়ে কর্তনকৃত গাছের প্রায় ২০ ঘনফুট কাঠ জব্দ করেছে স্থানীয় বনবিভাগ। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো বনবিভাগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী।
এলাকাবাসীর ধারণা, কর্তনকৃত গাছের আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা। এছাড়া এই মনছড়া বিট এলাকা থেকে প্রায়শই সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা হত বলে জানান এলাকাবাসী। এই চক্রটি এই গাছগুলি চুরি করে কেটে নিয়ে যায় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের অধীনে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মনছড়া বন বিটে ২০১ নং দাগে সামাজিক বনায়ন করার আবেদন করেন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা বন বিভাগের সঙ্গে আবেদনকারী সমিতির পরিচালনা কমিটি সামাজিক বনায়নের চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মনছড়া বিটের ভেতরে মাস খানেক আগের কাটা প্রায় অর্ধশতাধিক গাছের গোড়া পড়ে আছে। টিলার উপরে সামাজিক বনায়নের বেশ কয়েকটি আকাশমনি গাছ কাটতে ৬-৭ জন শ্রমিককে দেখতে পাওয়া যায়। ওইস্থানে ১০-১২টি গাছের গোল কাঠ পাওয়া যায়। এসময় জানতে চাইলে গাছ কাটায় নিয়োজিত শ্রমিক এরশাদ (২৭), ইয়াকুব আলী (২৯), মতিন মিয়া (৪০) বলেন, আমরা দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরীর ভিত্তিতে গাছ কাটতে এসেছি। গাছগুলো সামাজিক বনায়নের কিনা সেটা জানিনা। তবে ইউসুফ নামের একজন ব্যক্তি আমাদের এই গাছগুলো কাটতে বলেছেন।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বদরুল ইসলাম বদর, আব্দুস শহীদ চিনু, আবু সুফিয়ান, আব্দুল মুকিত বুলবুল, আব্দুর নুর নুনু, মোঃ আব্দুল মতলিব, তোফায়েল আহমদ ডালিম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, রামদাশসহ অনেক উপকারভোগী জানান, স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সামাজিক বনায়নের গাছগুলো কাটা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়টি আমরা বনবিভাগকে জানিয়েছি। এলাকায় সামাজিক বনায়ন রক্ষার জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বনবিভাগের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
কাঠ ব্যবসায়ী ইউসুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, বাড়ির কাজের জন্য কিছু গাছ কেটেছি তবে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটিনি। স্থানীয় নজিব আলী ও তাহির মিয়ার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে তাঁদের মালিকানাধীন জায়গা থেকে ওইগাছগুলো আমার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। বনবিভাগ থেকে গাছ কাটার কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাছ কাটার কোন অনুমতি নেইনি।
নজিব আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম মকুল বলেন, মনছড়া বিটে ২০১ দাগের একটি অংশের জায়গা আমাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন। জায়গাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ৪০ বছর ধরে ওই জায়গাটি আমার দখলে রয়েছে। তাছাড়া আমরা কারো কাছে গাছগুলো বিক্রি করিনি। হয়তো বা চুরেরা এই গাছগুলো কেটেছে।
স্থানীয় মনছড়া বিট কর্মকর্তা মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে বনায়ন থেকে সরকারি গাছ যিনি বিক্রি করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলা নং-০১।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে মনছড়া বিট থেকে ১৯.৪৫ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া মনছড়া বিটে ২০১ নং দাগে মোট জায়গা হলো ৭৮ একর। তারমধ্যে সামাজিক বনায়ন হলো ৫০ একর। বাকি ২৮ একর মামলার রায়ে বিভিন্নজনের দখলে রয়েছে।