1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১
  • ৬৭৯ বার পঠিত
  • আফতাব চৌধুরী

বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি নীরব মহামারী ডিজিজ। পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হল আনুমানিক ১৫ কোটি। বাংলাদেশকে ডায়াবেটিস রোগীর অঘোষিত রাজধানী বলা হয়। বংশগত, জিনগত ও লাইফ স্টাইলের কারণে ইদানিং অবশ্যই এ রোগ মানুষের ঘুম তাড়াচ্ছে। ১ মাসের বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পৌঢ় পর্যন্ত সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অহরহ। সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা যে খাবার খাই তাকে এনার্জিতে পরিণত করার মেটাবলিক অক্ষমতাই ডায়াবেটিসের উৎস, যার ফলে বøাড সুগার লেবেল নিয়ন্ত্রণে থাকে না। প্যানক্রিয়াস থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন যার প্রধান কাজ রক্তের শকরাকে দেহের বিভিন্ন কোষে কোষে পৌঁছে দেয়া আর এর কাজ যখনই ব্যাহত হয় তখনই সমস্যার শুরু হয়ে যায়। সোজা কথায় রক্তের শর্করা বøাডস্ট্রিম থেকে বøাডসেলে যথাযথ ভাবে পরিবাহিত হতে না পারলেই শরীরে বøাড সুগার লেবেল ভারসাম্য হারায়। জেনে রাখা ভালো ডায়াবেটিস কিন্তু দুই রকমের, টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ-২ডায়াবেটিস। টাইপট-১ ডায়াবেটিসকে জুভেনাইল ডায়াবেটিসও বলা হয়। এ রোগে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনস্যুলিন নিঃসরনে সম্পুন ঘাটতি দেখা যায়। সাধারনত বাচ্চাদের মধ্যে এ প্রকৃতির ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়, ইনসুলিন কম নিঃসরন হয়। সাধারনত এক্ষেত্রে তেমন কোনও সিম্পটম থাকে না, ফলে ধরা পড়তে দেরি হয়। যাদের ক্রমিক ইনফেকশন বেশী হয় তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার আশঙ্কা বেশি। এছাড়াও এক্সসারসাইজের অভাব এবং ওবেসিটিও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ। আবার ভাইরাল ইনফেকশন এবং অপুষ্টির তীব্রতায় ও প্যানক্রিয়াসের কোষসমূহ ধ্বংস হয়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের মত রোগ চলে আসতে পারে। এগুলোই হল ডায়াবেটিসের রিস্ক ফ্যাক্টর। একনজরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ-অতিরিক্ত পানির পিপাসা, যথেষ্ট খাবার খেলেও ওজন কমতে থাকা, দুর্বল ও নিস্তেজ লাগা, ঘনঘন প্র¯্রাব/বাথরুমে যাওয়া, চোখের ঝাপসা দৃষ্টি, শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে শুকাতে দেরী হওয়া, পায়ে ব্যথা বা একটু হাঁটলেই ব্যথা বা খিছে ধরা, জিভ শুকিয়ে যাওয়া, ত্বকে ইস্ট ইনফেকশন, চুলকানি।
ডায়াবেটিস হওয়ার আরও কিছু কারণ- আরাম আয়েশী জীবন-যাপন, কাজ কম খাবার খান বেশি, একদম না হাঁটা, লিফট ব্যবহারের অভ্যাস, কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, দীর্ঘদিন অসুখে ভোগাসহ নানা কারণে স্ট্রেস বাড়ে। ইনসুলিনের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। যারা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারি (ওবেসিটি) অর্থাৎ কোমড় ও পেটের অতিরিক্ত মেদ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কার্ডিও ভাসকুলার কমপ্লিকেশন দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস-ইনসুলিন দিয়ে বøাড সুগার কন্ট্রোল রাখতে পারলে নর্মাল প্রেগনেন্সিতে কোন সমস্যা নেই। তবে কনসিভ করার আগেই ইনসুলিন নেয়া শুরু করলে ভাল। গর্ভস্থ ভ্রæন ও মায়ের শরীরের জন্য প্রেগনেন্সির সময় ইনসুলিন নেয়া জরুরি। তবে তা হতে হবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হবার কারণ- ইদানিং বিশেষ করে শহরে বাচ্চাদের মধ্যে স্থুলতা ও ওভারওয়েটের সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। তাছাড়া স্কুলে পড়াশুনার ক্রমাগত চাপ, সারাক্ষণ বসেবসে টিভি/কম্পিউটার দেখা, ফাস্টফুড/জাঙ্কফুডে অভ্যস্ত হওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা, সাতার কাটা, সাইকেল চালানো, ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, নাচ, দৌড়ানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার কারণে এ রোগের হার বেড়ে চলেছে। কখন বেশি সচেতন থাকবেন – বয়স ৪০ এর বেশি হলে, পরিবারে ডায়াবেটিস এর ইতিহাস থাকলে, ওবিস হলে, পুরুষের ওয়েস্ট লাইন ৪০ ইঞ্চি ও মহিলাদের ওয়েস্ট লাইন ৩৫ ইঞ্চি এর বেশি হলেই সাবধান থাকতে হবে, কারণ কোমরের অতিরিক্ত মেদ এক ধরনের ক্যামিকেল নিঃসরন করে যা ইনসুলিন সিস্টেমের ক্ষতি করে, প্রেগনেন্সির সময়ে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে, জন্মের সময়ে শিশুর ওজন ৪.৫ কেজির বেশি হলে, টিউবারকিউলোসিস, হাইবøাডপ্রেসার, হাই ট্রাইগিøসারিড, কোলেস্টেরল থাকলে ডায়াবেটিসের রিস্ক বেড়ে যায়। স্টেরয়েড, ওরাল কনট্রাসেপটিভের দীর্ঘদিন ব্যবহারে বøাডে গøুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। মহিলাদের বডিমাস ইনডেক্স ৩০ এর বেশি হলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেশি।
রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের তিনটি পদ্ধতি হল-মেডিকেশন, নিউট্রিশন এবং এক্সসারসাইজ। মেডিকেশন-প্রাথমিক স্তরে টাইপ-২ ডায়াবেটিকের জন্য ডায়েট, এক্সসারইজের সঙ্গে কিছু ঔষধও খেতে হবে। আর পরের স্টেজে প্রয়োজনে ইনসুলিন দিতেও হতে পারে। ডায়েট-প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার-যেমন গোটা মুগ, শুটি, জোয়ার, গম বা ওই জাতীয় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। চিনি, গুড়, মধু, ক্যান্ডির মতো সিম্পল কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে অবশ্যই ফল খাবেন। প্রতিদিন আপনার ক্যালরি ইনটেকের ১২-১৮% রাখুন ডাল, মাছ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার। ঘি, তেলে ভাজাভুজি খাবার এড়িয়ে চলুন। কম তেলে রান্না সাড়–ন। ভাপে বা মাইক্রেওয়েভে রান্না আরও ভালো। জ্যাম-জ্যালি-সস-চকোলেট-আইনক্রীম-কোল্ডড্রিংকস-ক্যান্ডি-জুস-পটেটোচিপস্ ও জাঙ্কফুড-ফাস্টফুড একদম এড়িয়ে চলুন। চিনির বদলে জিরো ক্যালরি সম্পন্ন সুইটনার ব্যবহার করুন। সুগার লেবেল মেইনটেইনের জন্য মেথির রস খান। এক্সসারসাইজ ঃ হাঁটা/জগিং/সাইকেল চালানো/সাঁতারকাটা ইত্যাদি নিয়মিত করুন। ওছেঁ ট্রেনিং করবেন না, এরোবিক্স করুন, সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ দিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। আবার খালি পেটে প্রচন্ড পরিমাণে এক্সসারসাইজ করবেন না এত সুগার লেবেল নীচে নেমে যেতে পারে। প্রতিরোধ ঃ ময়দা ও রাইচ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারণ ময়দা সরাসরি গøুকোজ পরিণত হয়। বারবার অল্প অল্প করে হাই-ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণে দারুচিনি বা কফির অভ্যাস করুন এতে শরীরের কোষে গøুকোজ ট্রান্সপোট করতে ইনসুলিনকে সাহায্য করে। রিল্যাক্স করুন। স্ট্রেস শরীরে অ্যাড্রেনালিন ও কটিসল হরমোন ক্রমাগত গøুকোজ সঞ্চালন করে। প্রানীজ ফ্যাট কম খান এতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বাড়ে। লাইফস্টাইলে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন, আপনার উচ্চতা, গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওজন ঠিক রাখুন। এক্সারসাইজের সাথে মেনটেইন করুন হেলথি ইটিং হ্যাবিট। ধূমপান করবেন না। ইউরিন, বøাডপ্রেশার, কোলেস্টেরল, বøাডসুগারের রুটিন নিয়মিত চেকআপ করুন। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল প্যানক্রিয়াস ও লিভার ড্যামেজ করে এবং স্থ’লতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের অবস্থার চেকআপ করান এতে বøাড সার্কুলেশনে অসুবিধে হলে বা সেনসেসন চলে গেলে দ্রæত জানতে পারবেন। প্রতি ছ’মাস অন্তর গøুকোজ হিমুগøুবিন টেস্ট করান। মনে রাখবেন ডায়াবেটিস থেকে কিডনি ও চোখের সমস্যা হতে পারে তাই চোখ-কিডনি-পেট-হার্টের-অ্যানুয়াল চেক আপ করাতে ভুলবেন না। হাই বøাড সুগার লেবেল হলে মাড়ি দুর্বল হয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়। তাই অবশ্যই দাঁতের যতœ নিন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট। সদস্য, কার্যকরী পরিষদ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন, সিলেট। ১১.১১.২০২০

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..