1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পেছনের গল্প!

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪৭৬ বার পঠিত

তানভীর আঞ্জুম আরিফ,নিজস্ব প্রতিবেদক: এক জন সফল মহিলা উদ্যোক্তা তখনও উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে পুরোপুরি পরচিত ছিলেন না। ২০১৪ সাল, ইন্টেরিয়র’র (ঘর সাজানোর সরমঞ্জাম) তৈরীর ক্লাস করতেন। একদিন সাহস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ তৈরি করেন ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। আর সেই থেকে শুরু তার কর্মক্ষেত্রের পথচলা। তার নিকট থেকে জানা যায়-তখন থেকে এমন একটা নাম খুঁজি, যা আমাকে আমার কাজকে রিপ্রেজেন্ট করবে। একথা, সেকথা ভেবে শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক করলাম আইভি ক্রাফটস এবং কন্সট্রাকশন ডিজাইন এন্ড ডেকোর টেকনোলজি। প্রথমে নিজের ছবি তুলে পেজে আপলোড দিতাম। সেখানে এক-দুটি লাইক আসতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রেতারা গৃহসজ্জার নানা ধরনের জিনিস যেমন:ওয়ালমেট,শো পিস, কারপেট,পর্দা, ইত্যাদি অর্ডার করেন। তখন আসলে আমার লাভ কিছুই থাকত না। কারণ, প্রোডাক্ট সোর্সিং করতেই বেশি খরচ পড়ত। কিন্তু একটা অর্ডারের কাজ শেষ করতে পারলে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করত। এর পর আমি ভালো কোয়ালিটি, পছন্দসই ডিজাইনের প্রোডাক্ট খুঁজে খুঁজে স্টক করা শুরু করি।’ এভাবেই নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্পটা বলছিলেন ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। অনলাইনভিত্তিক শপিং প্লাটফর্ম আইভি ক্রাফটস এবং কন্সট্রাকশন ডিজাইন এন্ড ডেকোর টেকনোলজি যাত্রা হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখনো তিনি আসলে নিজের কাজের অভিমুখটা বুঝতে পারেননি। কেবল বুঝেছিলেন নিজে কিছু একটা করতে চান। নারী উদ্যোক্তা ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। জীবনে একটা পর্যায়ে এসে তিনি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে চান। অনেক চিন্তার পর একপর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক শপিং প্লাটফর্ম’র -আইভি ক্রাফটস এবং কন্সট্রাকশন ডিজাইন এন্ড ডেকোর টেকনোলজি) যাত্রা শুরু করেন। মূলত ওয়ালমেট,শো পিস, কারপেট, পর্দা, ইত্যাদি নিয়েই কাজ করেন। ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি খুব ছোট বেলায়’ই বাবা-মা মারা যান। তখন চাচির কাছেই বড় হওয়া এবং বেড়ে উঠা। আর তাই সে কারনে আর উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেড়নোর পর আর উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। উদ্যোক্তার হওয়ার ঝুঁক অন্যদিকে মেয়ে হিসেবে কাজ করতে গিয়ে পড়তে হয়েছে নানা বাধা আর বিপত্তিতে । সুতরাং ২০১৬ সালেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। ২০১৭ সালে প্রথম পুত্র সন্তানের জননী হন। যদিও তখন সেটা তার কাজে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করে। তবে স্বামীর সাপোর্টে সেটা আর তার বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি । স্বামীর সাপোর্টের ফলে স্বপ্নটি আরো দৃঢ় হয়ে থাকে। ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি বলেন, ‘নিজে কিছু একটা করতে চাই এমন একটা ভাবনা থেকেই আমার ব্যবসার যাত্রা শুরু। নিজের দেশকে ব্রান্ডিং করার চিন্তা থেকেই দেশীয় পণ্য নিয়ে ব্যবসা চিন্তা মাথায় আসে। সেই থেকে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে বেছে নেওয়া। কেননা আমাদের রয়েছে বহুল নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তাছাড়া দেশীয় পণ্যের চাহিদা দেশজুড়ে থাকলেও তা সহজলভ্য ছিল না। তবে, কাজটা বেশ কঠিন ছিল। তারপর একটু একটু করে দেশীয় হারিয়ে যাওয়া পণ্য তৈরির প্রক্রিয়া শিখি। সহ মালামাল সংগ্রহ ও শিখলাম। কন্সট্রাকশনে ইন্টারিয়র ডিজাইনের উপর কোর্সও করেছি। তখন থেকে পণ্যের গুণগত মান,আর ক্রেতাদের পছন্দকেই বেশি মাত্র প্রাধ্যান্য দিয়ে মাত্র ৪০ হাজার টাকা পূঁজিতে কাজ শুরু করলাম। মজার বিষয় হলো তাঁর বিক্রি করা প্রথম প্রোডাক্ট থেকে কোন প্রোফিট ছিল না। তখন পিঠ ঠেকা অবস্থায় নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা বেশ কঠিন। তবে বিশ্বাস ছিল ফলও আসবে একদিন। আর বর্তমানে এসেছে। বর্তমানে আমার কাছে মাটির পণ্য প্রায় ৩০ হাজার চাকা এবং বিভিন্ন চিত্র শিল্পের উপর হাতে আঁকা লোকশিল্পের মজুদ আছে ২০ হাজার টাকা আর বাঁশ এবং বেতের তৈরি পণ্য আছে ২৫-৩০ হাজার টাকার মজুত থাকে সব সময়। এখন প্রতি মাসে কমবেশি লাখ টাকা মত লাভ থাকে। আমার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। যেহেতু কভিড মহামারির করণে সবকিছু বন্ধ ছিল। পাশাপাশি প্রোডাকশন ও ছিল না তাই বাধ্য হয়ে কিছু শ্রমিক বাধ দিতে হয়েছিল। যদিও এখন আবারো তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি এবং তারা বর্তমানে তারা বেবিপণ্য ডেলিভারির কর্মরত আছে। দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো করোনাকালে কঠিন পরিস্থিতি পার হতে হয়েছে বলেও জানালেন ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। মধ্যদিয়ে আমার মূল কাজটা বন্ধ রেখে বেবিপণ্য নিয়েই কাটিয়েছি বেশ ক’মাস। কেননা তখন আমদানীটা বন্ধ ছিল বিধায় বাহির থেকে প্রোডাক্ট আসছিল না। আর অন্যদিকে আমি পুরান ঢাকার বাসিন্ধা হিসেবে বিভিন্ন মায়েদের গ্র“প থেকে জানতে পারলাম যে বর্তমানে এটার মার্কেট খুব উচ্চাকাঙ্খী। তাই তখন থেকেই একজন মা হিসেবে সেই সব মায়েদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বিবেচনা করে বেবি পণ্যের ডেলিভারির কাজ শুরু করালাম। যেহেতু ইতিমধ্যে আমার কাছে পূর্বের আমদানী করা কিছু বেবি পণ্য সম্পর্কে তথ্যছিল। তাই ডেলিভারির কাজ শুরু করালাম। ফলে একদিকে আমি ছাটাই করা শ্রমিকদের কাজের ফেরানোর সুযোগ সৃষ্টি হল পাশাপাশি তাদেরও ফের কর্মসংস্থানের পথ হল। তাই শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই কুরিয়ার সার্ভিস চালুর সঙ্গে সঙ্গেই আবার কুড়িয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সারাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সচল করলাম। যদিও সব পণ্যই একবারে পাইকারিভাবে বিক্রি করেছি এবং বেশ সারাও পেয়েছি। তবে এখন আবার কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা বাধা-বিপত্তি তাঁর সঙ্গী হয়ে গেছে বলা যায়। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। উৎপাদন, বাজারে চাহিদা, পণ্যের সহজলভ্যতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তার মতে কাজ করতে গিয়ে যেমনটা ভেবেছিলেন, বাস্তবায়ন কাজের পরিস্থিতি তেমনটা পাননি। শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। বর্তমানে স্বামীকে নিয়ে তিনি তার নিজের যোগ্যতা আর শ্রম দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। হাল না ছাড়ার মানসিকতাকেই উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ বলে মনে করেন ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। এদেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর বক্তব্য -কখনোই হাল ছাড়ব না এমন একটি গুণ একজন উদ্যোক্তার থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। ব্যবসায় ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো খুব তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেওয়া। যদি আপনি অধ্যবসায়ী না হন, অনুসন্ধান, গবেষণা না করেন, তাহলে আপনি ব্যবসায় সফল নাও হতে পারেন। তবে আপনি যদি অবিচল থাকেন। তাহলে আপনার সফল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে, অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তা,পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করব এই কথা পরিবারের কাউকে শুরুতে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু এখন যেহেতু আমার বাবা-মা নেই তাই যাদের কাছে বড় হয়েছি অর্থাৎ চাচা-চাচি সহ আমার শ্বশুর-শাশুড়ী সহ আত্মীয়রা আমাকে সহযোগিতা করেন। যে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন, স্বপ্নের সেই জায়গা থেকে পিছপা হতে চান না ফাহমিদা সিদ্দিক আইভি। এখন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য একটা কারখানা তৈরি করা, যেখানে তাঁর নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরি করার সুযোগ থাকবে। ভবিষ্যতে কী করতে চান জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি ভালো ব্যবসায়ী হতে চাই। আমার একটা ব্র্যান্ড হবে। এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমার সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটা টিকিয়ে রাখা অনেক বেশি দরকারি। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সুযোগ রয়েছে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..