রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১০:১৭ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : চীনে লকডাউন জারি করা শিয়ান শহরের অনেক বাসিন্দা বলছেন তাদের পর্যাপ্ত খাবার নেই, যদিও কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন যে খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে।
চীনে কোভিডের বিস্তার ঠেকাতে গত সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলে শানশি প্রদেশের শিয়ান শহরের ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে লকডাউনে মানুষকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জন্য যেভাবে বাইরে যেতে দেয়ার রেওয়াজ আছে, চীনে লকডাউনের মধ্যে মানুষের এমনকি খাবারের মত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও বাইরে যাবার নিয়ম নেই।
সেখানে লকডাউনের সময় সরকার খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাসায় পৌঁছে দেয়। কিন্তু বহু মানুষ সামাজিক মাধ্যমে বলছেন তাদের কাছে এখনো খাবার পৌঁছয়নি এবং অভাব সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
শিয়ানে লকডাউন আজ নবম দিনে পড়েছে। কোভিড মোকাবেলায় চীনের নীতি হল আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
চীনে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে এই শিয়ান শহরে।
প্রথম দিকে শিয়ানে যে বিধিনিষেধ জারি করা হয় তাতে প্রতি পরিবারের একজনকে প্রতি দুদিন অন্তর একবার খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বেরনর অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু সোমবার নিয়মের কড়াকড়ি করা হয়। সোমবার থেকে বাসিন্দাদের বলা হয় একমাত্র কোভিড-১৯এর পরীক্ষার জন্য ছাড়া আর কোন কারণে ঘরের বাইরে বেরন যাবে না।
বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ
গত কয়েকদিন ধরে চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে মানুষ সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন- খাবার ও অন্যান্য অত্যবশ্যকীয় জিনিস পৌঁছে দেবার অনুরোধ জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন সরকারি সাহায্য এখনও তাদের কাছে পৌঁছয়নি।
‘আমি শুনেছি অন্য জেলার মানুষের কাছে ধীরে ধীরে খাবারদাবারের সরবরাহ পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুই পাইনি। আমাদের কম্পাউন্ডের বাইরে বেরতে দেয়া হচ্ছে না। আমি চারদিন আগে অনলাইনে খাবারদাবার অর্ডার করেছি। কিন্তু সেসব আসার কোন লক্ষণই নেই। গত কয়েকদিন ধরে ঘরে কোন সব্জি নেই,’ লেখা হয়েছে শুক্রবারের একটি পোস্টে।
আরেক ব্যক্তি বলছেন, ‘বিতরণ ব্যবস্থায় এতটা ফারাক। আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে কিছুই আসছে না। আমাদের বলা হচ্ছে কয়েক পরিবার মিলে একটা দল করে একসঙ্গে জিনিস অর্ডার করতে। জিনিসপত্রের দামও খুবই বেশি।’
এ সপ্তাহে তোলা একটি ভিডিও যা সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে, তাতে দেখা যাচ্ছে শিয়ানের একটি আবাসিক ভবন এলাকার চত্বরে খাবারের অভাব নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের উত্তপ্ত বচসা হচ্ছে।
নিচের এই ভিডিওতে বাসিন্দাদের চেঁচামেচি করতে দেখা যাচ্ছে- এক ব্যক্তি কর্তৃপক্ষকে বলছেন তার পরিবার না খেয়ে আছে। একজন মহিলাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘১৩ দিন আমাদের লকডাউন দিয়ে রাখা হয়েছে। বাসিন্দাদের ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নেই। সব্জি কিনতে আমরা তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইন দিয়েছি। এখন সব্জি বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র বলছে কোন কোন জায়গায় খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে আবাসিক ভবনগুলোয় কম্পাউন্ডের ফটকের বাইরে। কিন্তু বাসিন্দাদের ঘরের দরোজায় সেগুলো পৌঁছে দেবার জন্য যথেষ্ট স্বেচ্ছাসেবী নেই।
শহরের যেসব গাড়িচালক খাবার ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ডেলিভারি করেন, তাদের বেশিরভাগ নিজেরাই কোয়ারেন্টিনে। ফলে শহর জুড়ে বিতরণকর্মীর বড় ধরনের অভাব তৈরি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিচ্ছে।
বুধবার কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, ‘বেশির ভাগ কর্মী কাজে অনুপস্থিত থাকায় সরবরাহ বিলি ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং সে কারণেই শহরে লকডাউনে থাকা মানুষের কাছে খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি পণ্য পৌঁছন যাচ্ছে না।’
তবে এএফপি বার্তা সংস্থা বলছে বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান যে শিয়ান শহরের বাসিন্দাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ছবি দেখানো হচ্ছে যে, কর্মীরা সুরক্ষা পোশাক পরে ডিম, মাংস ও সব্জি জাতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারদাবার ব্যাগে ভরছেন সেগুলো বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার আগে।
‘আমরা বিনামূল্যে সরকারের কাছ থেকে খাবারদাবার পেয়েছি। পর্যাপ্ত খাবার পেয়েছি। পুরো পরিবারের তিন থেকে চারদিন চলে যাবে,’ ওয়েইবোতে লিখেছেন সরকারি সাহায্য পাওয়া এক ব্যক্তি।
শূন্য নীতি
চীন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যে ‘শূন্য-কোভিড’ কৌশল নিয়েছে তা প্রয়োগ করে শিয়ান শহরের সব বাস স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিয়ান থেকে দেশের অন্য শহরগামী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং শহরের লাখ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
৯ ডিসেম্বর থেকে শিয়ানে ১ হাজার ৩০০-এর বেশি করোনা কেস শনাক্ত হয়েছে।
শিয়ানের এই প্রাদুর্ভাব কোভিড সংক্রমণকে শূন্যের কোঠায় ধরে রাখতে চীনের কৌশল বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। চীন ২০২২এর ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিক্সের স্বাগতিক দেশ হিসাবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনেরর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বড় আন্তর্জাতিক খেলাধুলার ইভেন্টের জন্য কোভিডকে ‘সবচেয়ে বড় ঝুঁকি’ বলে বর্ণনা করেছে চীন।
করোনাভাইরাাস প্রথম ধরা পড়ে চীনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বসাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এ পর্যন্ত কোভিড শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩০ জনের এবং মারা গেছে ৫ হাজার ৬৯৯।