বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: বিয়ে। দুজন মানুষ এক হয়ে একটি নতুন জীবনে পা রাখেন বিয়ের মাধ্যমে। আমাদের সমাজে বিয়েটা এখন ব্যয় বহুল। বাইরের দেশের মতো আমাদের দেশে শুরু হয়েছে বিয়েকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন। এসবের মাঝেও কিছু কিছু বিয়ে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। হয়ে থাকে স্মরণীয়। তেমনি এক কনের নিজের জমানো ৭০ হাজার টাকা দিয়ে করা হয় বিয়ের আয়েজন। সেই বিয়ের অতিথি ছিলেন অসহায় শিশুরা। আর ওই বিয়েতে দেনমোহর যদি হয় মাত্র ৫ হাজার টাকা। তা শুনলে হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন এটা কোনো সিনেমার গল্প। কিন্তু না। এটা কোনো সিনেমার গল্প বা ঘটনা নয়। এটাই বাস্তব।
হবিগঞ্জ সদরে এমনি একটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ৫ হাজার টাকা দেনমোহরে। শুক্রবার(৭জানুয়ারি) দুপুরে হবিগঞ্জে কনে-বরের সম্মতিতে দেনমোহরে কাবিন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখানে আয়োজিত হয় বিয়ে–পরবর্তী ভোজের।কনে সানজানা শিরিন (২৯) হবিগঞ্জ সদরের সৈয়দ আলীর দ্বিতীয় মেয়ে। তবে চাকরির সুবাধে বসাবস করেন মৌলভীবাজারের শমসের নগরে। সানজানা শমসের নগর চা বাগান হাসপতালে চাকরি করেন। পাশাপাশি তিনি সামাজিক সংগঠন নিয়ে কাজ করছেন। বর ঈসমাইল শিকদার। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। বাড়ি খুলনায়। বর-কনে দুজন আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, যেহেতু দুজনেই ছোটখাটো চাকরি করেন। তাই তারা বিয়ের কাবিনে দেনমোহর ধরা হবে ৫ হাজার টাকা। তাদের ইচ্ছা দুই পরিবারকে জানালে পরিবারও তাদের ইচ্ছার সাথে সম্মতি জানান।
নিজের বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সানজানা সেই স্ট্যাটাসটি মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- কাবিন: মাত্র ৫ হাজার টাকা আমার চাওয়া ছিলো “বেশি টাকা কাবিন করে ডিভোর্স হলে অনেক টাকা বসে বসে খাওয়ার মত দুর্ভাগ্য যেন আল্লাহ আমাকে না দেন ” আমি আল্লাহর কাছে এটাই চাইছি যেহেতু আমরা ২জনেই ছোট জব করি আল্লাহ জাস্ট আমাদের সুস্থ রাখলেই হবে পরিশ্রম করলে টাকা আসবে আমাদের কাছে ইনশাআল্লাহ।
৫ হাজার টাকা কাবিনে বিয়ে গ্রামে গঞ্জে আমার এই বয়সে শুনি নাই, এই কথা শুনে মুরুব্বি রা মাতামাতি শুরু করে দিসেন। এটা কিভাবে সম্ভব প্রচুর মাতামাতি হচ্ছিলো,ঝামেলা শুরু হয়ে গেছিলো। কাজীকে ডেকে আমি আনলাম, বুঝিয়ে বললাম ইসলামে ত ১০ দিরহাম মানে ৩ হাজার এর মত কাবিন দেওয়ারও সুযোগ আছে আর আমরা তথাকথিত সামাজিক রীতির বাইরে বের হতে চাই আমরা কম কাবিনেই বিয়ে করব।
তখন কাজী সাব বললেন “তুমরা রাজি হলে আমার কোন সমস্যা নাই ” আমার কথা হল “বিয়ের আগেই কেন ডিভোর্সের চিন্তা করতে হবে?? বিয়েতে আল্লাহর রহমত থাকলে বেশি টাকার কাবিন আমার জীবনে প্রয়োজন নাই সব কিছুর জন্য মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া। এব্যাপারে সানজানা শিরিন বলেন ৬ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।তারা নিম্ন পরিবারের সন্তান।ছোট বেলা থেকে বাবা-মা তাদেরকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন।
বিয়ে নিয়ে আগে থেকে এমন পরিকল্পনা ছিল কি? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পনা বলতে ইচ্ছে ছিল। আমার জমানো টাকা দিয়ে অসহায় শিশুদের বিয়ের খাবার খাওয়ানো। তাই জমানো ৭০ হাজার টাকা দিয়ে বিয়ের আয়োজন করি। অসহায় শিশু ও দুই পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রায় ৩০০জন মানুষ পেট ভরে খেতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর পক্ষ থেকে গহনা(সোনা) নেইনি।একেবারে সাদামাটা বিয়ে করেছি আমরা।সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।