রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : এক মাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১০ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দেশের বাইরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার চেষ্টা করছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
রোববার পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দীপংকর করের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সনাক্তকরণ এবং করণীয় বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ের এই তদন্ত কমিটি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেব্রাগুলোর এ ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশের বাইরে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে যে দেশ থেকে জেব্রাগুলো আনা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার খামার মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। রোগের বিস্তারিত লক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ইমেইলের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছে।
জেব্রাগুলোর মৃত্যু প্রতিরোধে জরুরি চিকিৎসা প্রদান এবং এ ধরনের অসুস্থতার কারণ উদঘাটনে ইতোপূর্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ২৫ ও ২৯ জানুয়ারি সাফারি পার্কে সভায় মিলিত হন। ২৫ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ টিমের দেওয়া ১০ দফা সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
জেব্রাগুলোর মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৪ জানুয়ারি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার আরও একটি জ্রেবার মৃত্যু হয়। ৯টি জেব্রার মৃত্যুর পর সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যাচ্ছে। করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে- এমন সন্দেহে খাবারগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। যার রিপোর্ট সভার আগেই আমাদের কাছে চলে আসে।
প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে গঠিত ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ বোর্ড সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরও চারটি জেব্রা মারা গেছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান জানান, বিকেলে মৃত জেব্রাটির ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। গতকালের মৃত জেব্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় প্রাণীটি খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর বারবার পানি খায়। পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শেষে শুরু হয় খিঁচুনি। ’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ গতকাল শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে বলেন, ‘অন্য প্রাণীর সঙ্গে মারামারিতে তিনটি জেব্রা মারা গেল, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে একে একে জেব্রারই মৃত্যু। বেষ্টনীর মধ্যে আরো ছয় প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। ওই সব প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কথা। জেব্রার মৃত্যুর ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর ব্যবস্থাপনা সঠিক ছিল না বলেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ’