রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ পূর্বাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় টানা শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শীতের প্রকোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ। ডায়রিয়ায় ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ওয়ার্ডে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীদের ভিড়।
হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত উপজেলার চৌধুরীবাজার এলাকার ১০ মাস বয়সী নাফিসা তাবাসসুম রাইসা। তার মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। তারপরও ডায়রিয়া কমেনি। পরে বুধবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ৫১ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ডায়রিয়ার ৩২ এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় ১৯ শিশু। এ সময়ে ডায়রিয়ায় ২১ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৯ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, হাসপাতালের আবাসিক ওয়ার্ডে শিশুরোগীর সংখ্যা বেশি। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
মনসুর গ্রামের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ মাস বয়সী নাহিয়ানের মা শাহিদা আক্তার বলেন, ‘গত কয়েক দিনের শীতে আমার ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বর বাড়ায় মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি করাই। এখনো সে সুস্থ হয়নি।’
‘এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। করোনার সময় হাসপাতালে থাকতে ভয় হচ্ছে।’ বলেন শাহিদা আক্তার।
রাউৎগাঁওয়ের পালগ্রামের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমার দেড় বছরের মেয়ে মরিয়ম আক্তারের এক মাস ধরে কাশি ও হালকা জ্বর। কাশি না কমায় পরীক্ষা করাই। তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। ছয় দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি।’
‘দুই সপ্তাহ ধরে ১৫ মাসের ছেলে রাব্বির জ্বর। অবস্থা খারাপ হওয়ায় বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি থাকায় চিকিৎসক ছেলেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছেন।’ বলেন বরমচালের খাদিমপাড়ার বাসিন্দা জুবেল মিয়া।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আয়েশার মা তাহমিনা আক্তার, তোহার মা পুষ্প বেগম, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সানির মা নার্গিস বেগমসহ একাধিক শিশুরোগীর অভিভাবকেরা জানান, জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া তীব্র শীতে শিশুরা জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছে। বেশ কয়েক দিনে জ্বর-সর্দির সঙ্গে ডায়রিয়ার প্রকোপও বেড়েছে। অবস্থা ভালো না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
তবে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ের কারণে তাঁরা শঙ্কায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জাকির হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ৮০ জনের বেশি শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। এদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। যেসব শিশুর শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তীব্র শীতের প্রকোপে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ দিয়ে জাকির হোসেন আরও বলেন, চিকিৎসার পাশাপাশি এই সময়ে শিশুদের অভিভাবকদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা প্রয়োজন। শিশুদের প্রতি আরেকটু সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। শিশুদের গরম পরিবেশে রাখা এবং বেশি করে পানি পান করাতে হবে।