শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৪ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল প্রতিবেদকধ শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১নং মির্জাপুর ইউনিয়নে উপজেলা প্রশাসনের দোহাই দিয়ে মির্জাপুর পাহাড়তলীসহ একাধিক পাহাড়ের মাটি, বালু ও গাছ কেটে বিক্রি, আবাস্থল গড়ে তোলাসহ নানা স্বার্থে এসব পাহাড়গুলোকে নির্বিচারে বিলীন করে দিচ্ছে। সকাল থেকে রাত সমান তালে চলে পাহাড় ও বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ কাটার কাজ। এ যেন পাহাড় ও গাছ কাটার মহোৎসব। চলে বনাঞ্চলের ঘেরা পাহাড় ও গাছ কাটার ধুম। বিগত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। প্রভাবশালী মহলটি ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড়ের মাটি ও গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে। সরেজমিন মির্জাপুর ইউনিয়নের পাহাড়তলীসহ একাধিক ঐ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে করা হয়েছে সমতল। পাশেই অস্থিত হারানোর পাহাড়ের ক্ষত চিহ্ন। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয় এক শ্রেণির বাসিন্দারা ঘর নির্মাণের কাজে ব্যস্ত। যেন পাহাড় কাটার উৎসবে নেমেছে তারা। সে সঙ্গে পাহাড়ের চ‚ড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করে ফেলছে। প্রকৃতির বুকে জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- পাহাড়ের মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অধ্যাধুনিক মেশিন। এর মাধ্যমে দ্রæততার সঙ্গে পাহাড়ের মাটিগুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে। সেগুলোকে ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেকেই গর্ত বা জমি ভরাট করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন বিনা বাঁধায় মাইলের পর মাইল পাহাড় সাবাড় করছে। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলছেন না। রাষ্ট্রের নির্দেশনা প্রশাসন বাস্তবায়নে যদি কোনো উদ্যোগ না নেয় তাহলে আর কিছুদিন পর এখানে আর কোন পাহাড় খুঁজে পাওয়া যাবে না। একাধিক সচেতন নাগরিক বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমরা সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করে আসছি। প্রশাসন কখনও কখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আবার থমকে যায়। প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জড়িত বলে মনে করছি। দিন দিন পাহাড়ি জনপদগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রতিবেদকসহ একাধিক সাংবাদিক সরেজমিন ঘটনার সত্যতা জানতে এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টজনরা পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে অবগত রয়েছেন। সেই কারণে কিছুই হবেনা। এখানে যারা পাহাড় কাটছে তাদেও কথা আইন।ত্হারা যা বলবে, তাই হবে। মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ বধরুল হুদা বলেন- প্রশাসনিক সহযোগীতার প্রয়োজন। এসব বিষয়ে আমাদের সহযোগীতা করা হয় না। পাহাড় কাটা সম্প‚র্ণ একটি বেআইনি কাজ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের যতাযত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এ ব্যপারে জানতে চাইলে এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এর সাথে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনসহ গোপলা নদী থেকে অবৈধ ভাবে মাছ নিধন করে আসছেন। এসব অনিয়ম-দুর্ণীতির কারণে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও কার্যকরী প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। অবৈধ ভাবে মাছ নিধন ও বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গোপলা নদীসহ হাওর অঞ্চল। তাদের এমন কর্মকান্ডে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে নদী, গ্রামীণ সড়ক ও ছড়ার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পরিবেশ- প্রতিবেশ ছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ।