শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের পূর্ব কালারায়বিল গ্রামে দুদিনব্যাপী মহাসংকীর্তন শনিবার সন্ধ্যায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে চন্দ্র মোহন সিংহসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মণিপুরি গায়ক, বাদকরা কীর্তন পরিবেশন করবেন। দেশের বাইরের বরেণ্য শিল্পীরাও এতে অংশ নেন। ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি পালাকীর্তনের ৯টি পালায় শ্রীকৃষ্ণের লীলা, গুণকীর্তন সংস্কৃত, ব্রজবুলি, বাংলা ও মণিপুরি ভাষায় অনুষ্ঠিত হয়। গত শুক্রবার (৪ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছিল এ কীর্তনটি।
বাস্যব গোত্রভুক্ত প্রয়াত দঙ্গ সিংহ, দঙ্গ সিংহ, ভদ্র সিংহ, কুলেশ্বর সিংহ, রসময় সিংহ (মুক্তা), লেইমা দেবী, বাবুসেনা সিংহ, নাট্য সংগঠক নিংথেম সিংহ (নির্মল), গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহ, অজা ময়ুরচাঁন সিংহসহ তাঁদের বংশের উত্তরসুরিরা এই মহাসংকীর্তনের আয়োজন করেছেন। বংশ পরম্পরা পূর্বপরুষদের পরম প্রাপ্তি কামনায় অষ্টপ্রহরব্যাপী এই কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে।
প‚র্ব কালারায়বিল গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরে অনুষ্ঠিত কীর্তনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় শুক্রবার সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায়। প্রথম পালায় পরিবেশিত হয় গৌরচন্দ্র-বংশী অনুরাগ। পরিবেশন করেন গায়ক (ইশালপা) বীরমণি সিংহ, মৃদঙ্গ বাদক (ডাকুলা) গুণমণি সিংহ, দোহার নিশিকান্ত সিংহসহ সহশিল্পীরা। দ্বিতীয় পালা শুরু হয় রাত ১১ টায়। এতে সান্তনা ও রাসনৃত্য পরিবেশন করেন প্রখ্যাত গায়ক চন্দ্র মোহন সিংহ। সহযোগিতা করেন মৃদঙ্গবাদক নবকুমার সিংহ, ধীরেন্দ্র সিংহ ও দোহার পূর্ণচন্দ্র সিংহ।
তৃতীয় পালা শুরু হয় রাত ১ টা ৩০ মিনিটে। এতে রাসবিশ্রাম-শোতল পরিবেশন করেন প্রখ্যাত কীর্তনীয়া হরিনারায়ণ সিংহ। মৃদঙ্গে ছিলেন ভারতের ইম্ফল থেকে আগত কবীন্দ্র সিংহ ও নঙান সিংহ ও বাংলাদেশের নীলমণি সিংহ। দোহারে ছিলেন কৃষ্ণমোহন সিংহ ও মনীন্দ্র কুমার সিংহ।
চতুর্থ পালায় পরিবেশিত হয় নিশান্ত-গৃহগমণ। এতে পরিবেশন করেন প্রখ্যাত ওস্তাদ লক্ষীণ সিংহ। তার সাথে মৃদঙ্গ বাদনে ছিলেন বাবুচান সিংহ ও দোহারে ইমানি সিংহ।
শনিবার ভোরে গৃহ জাগরণ ও কৃষ্ণ ভোজন পালা পরিবেশনায় ছিলেন গায়ক অমরচাঁন সিংহ। সাথে বাদক প্রসন্ন কুমার সিংহ ও দোহার চন্দ্রমণি সিংহ। সকাল ৯ টায় গৌরচন্দ্র-বংশী অনুরাগ পরিবেশন করেন ওস্তাদ হরিনারায়ণ সিংহ। সহযোগিতায় ছিলেন বাদক নবকুমার সিংহ, দোহার কৃষ্ণমোহন সিংহ ও নিশিকান্ত সিংহ।
বেলা ১১টায় শুরু হয় সুধানুরাগ-যাত্রা অভিসার পালা। ওস্তাদ লক্ষীণ সিংহের নেতৃত্বে এই পালায় ছিলেন বাদক বাবুচাঁন সিংহ, নীলমণি সিংহ ও দোহার ইমানি সিংহ। দুপুর ১ টায় বাউল অভিসার-যুগল পরিবেশন করে গীতশ্রী ওস্তাদ চন্দ্রমোহন সিংহ। সহযোগিতায় ছিলেন বাদক ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ, কবিন্দ্র সিংহ ও নঙান সিংহ। দোহার হিসাবে ছিলেন পূর্ণচন্দ্র সিংহ।
বিকাল ৩ টার সমাপণী পালায় দল লীলা-গৃহগমণ ও সমাপণ পরিবেশন করেন ওস্তাদ বীরমণি সিংহ। গুণমণি সিংহ বাদনে ও মনীন্দ্র কুমার সিংহ দোহার হিসাবে তাকে সহযোগিতা করেন। প্রবীণ পুরোহিত পন্ডিত মণিমোহন চ্যাটার্জির পৌরহিত্যে মণিপুরি সমাজের পুরোহিতবর্গ মহাসংকীর্তন পরিচালিত হয়।
ধর্মীয় এই মহাসংকীর্তনে সকল ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হওয়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান, আয়োজক কুঞ্জবাবু সিংহ, সুরেন্দ্র কুমার সিংহ, কৃষ্ণকুমার সিংহ, বদন সিংহ, পদ্ম সিংহ, বিধুভ‚ষণ সিংহ, পদ্মমোহন সিংহ, রণজিৎ সিংহ, বাবুল সিংহ, ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ, বেনুভ‚ষণ সিংহ, সংগ্রাম সিংহ, সোনামণি সিংহ, মীনা রানী সিনহাসহ সকল আয়োজকগণ।
ম‚খ্য আয়োজক সুরেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, মহাসংকীর্তনের প্রসাদ দুপুর ও রাতে পরিবেশন করা হয়। এজন্য মহাসংকীর্তনের পাশে বিশাল মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, ধর্মীয় রীতি অনুসারে গত বুধবার ১০৭ আইটেমসহ বংশ পরম্পরা প্রয়াতদের স্মরণে ভোগ উৎসর্গ করা হয়েছে।